রাজাপুরে দখল ও দুষণে জাঙ্গালিয়া নদী এখন মরা খাল, দখল মুক্তে নেই কোন উদ্যোগ


ঝালকাঠি প্রতিনিধি : রাজাপুর উপজেলা শহরের একমাত্র প্রবাহমান ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জাঙ্গালীয়া নদী এক সময় খরস্রোতা ছিল। ৯০ এর দশকেও লঞ্চ স্টীমার নিয়মিত চলাচল করত। অথচ দূষন ও অবৈধ দখলের কারনে কয়েক দশকের ব্যবধানে এই নদীটি মরা খালে পরিনত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে দখলদারদের উচ্ছদ ও নদী খননে চোখে পড়ার মত কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তবে খাল দখলমুক্ত ও খননে তৎপর রয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় সিরাজ, ফিরোজ, জুয়েল, রফিক ও কালামসহ অনেকেই জানান, রাজাপুরের বিষখালী নদী থেকে পিরোজপুরের কাউখালির সন্ধ্যা নদীতে মিলিত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ জাঙ্গালিয়া নদীটির দুই পাশ দখল করে কাচা পাকা স্থাপনা নির্মান করছে প্রভাবশালীরা। যে কারনে দিনে দিনে ভরাট হয়ে মরা খালে পরিনত হয়েছে এ সময়ের প্রভাবশালী এই নদী। উপজেলার বাগড়ি বাজার এলাকা থেকে শুরু করে ধানসিড়ি নদীর মোহনার পর নদীটি একেবারে সুরু হয়ে মারা খালে পরিনত হয়েছে। বাগড়ি বাজার থেকে পশ্চিম দিকের বাজার হয়ে রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্র পর্যন্ত খালের দু’পাড়ে পাকা স্থাপনা, বাঁশ-খুঁটি ও পিলার পুঁতে বিল্ডিং ও দোকান তোলার পাশাপাশি খাল ভরাট করছে প্রভাবশালীরা। এছাড়াও অন্য স্থানগুলোতেও প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা নদী দখলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নদী ভরাট হওয়ায় গোটা উপজেলায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে পরিবেশ দূষন হচ্ছে। এছাড়া কৃষকরাও সঠিকভাবে পানিও পাচ্ছেন না চাষাবাদে। শুষ্ক মৌসুমে গোসল ও পারিবারিক কাজেও দেখা দিচ্ছে পানি সংকট। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে মানচিত্র থেকে জাঙ্গালিয়া নদী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। উপজেলা সদর ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের বাজারের উত্তর মাথার কামার পট্টি থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিক হয়ে পুরাতন জেল খানার পিছন থেকে বাইপাস এলাকা হয়ে বর্তমান পল্লি বিদ্যুত অফিসের সামনা হয়ে দক্ষিণ রাজাপুরের তুলাতলা এলাকার মধ্যদিয়ে পূর্ব দিকে জাঙ্গালিয়া নদীর সাথে ভারানি খাল হিসাবে মিসেছে শহরের একমাত্র শাখাটি। বাকে বাকে প্রায় দীর্ঘ চার কিলোমিটার খালটির বিভিন্ন স্থানে ময়লার ভাগার, র্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক বাড়ি নির্মান করে খালটি দখল করা হয়েছে এবং এর ফলে খরস্রোতা রন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন অংশ নালায় পরিনত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মধ্য বাজার এলাকা থেকে বয়ে যাওয়া ভারানি খালটি জেলখানার পেছনের এলাকা হয়ে টিঅ্যান্ডটি সড়কের মধ্য দিয়ে বাইপাস এলাকার ব্রিজ হয়ে তুলাতলার দিকে বয়ে গেছে। দখলে খালটির মৃত প্রায় অবস্থার কারণে নৌকায় করে বাজার আসা, স’মিল ও ধান মিলে ধান নেয়া, বাজারের মালামাল বহনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন। জোয়ারের সময় সামান্য পানি থাকলেও ভাটায় খালে পানিই থাকে না। এ কারণে শহরের কোথাও আগুন লাগলেও পানির সঙ্কট দেখা দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পানির উৎস পাওয়া যায় না। এ ছাড়া খালটি ও তার ছোট ছোট শাখা নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই আশপাশে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে রাজাপুর উপজেলার ৮১ জন নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়-জলধারা অবৈধ দখলদারের তালিকা প্রকাশ করলেও কিন্তু উচ্ছেদে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বা খাল খল মুক্ত করা হয়নি। এসব দখলদারদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে। একাধিক দখলদারদের দাবি, তাদের জমির লপ্ত চর তারা ভোগ করছেন। খালে পরিমাটি পরে ভরাট হওয়ায় চর দখলে রেখেছেন মাত্র। প্রশাসন যদি খাল খনন করে বা খাল বড় করে তখন তো এমনিতেই ছেড়ে দিতে হবে।
রাজাপুরের উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা অভিজিৎ মজুমদার বলেন, সরকারী খালের জমির মালিকানা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি খালটি উদ্ধার করে দিলে খালটি খননের জন্য উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে অবহিতপূবক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
রাজাপুরের ইউএনও ফারহানা ইয়াসমিন জানান, মাঝে মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খাল দখল মুক্ত রাখতে অভিযান চালানো হয় এবং এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শহরের খাল খননের জন্য চলতি মৌসুমে বিএডিসি’র প্রকল্প পাওয়ার কথা ছিল, বিএডিসির মাধ্যমে চেষ্টা করা হয়েছিলো, বরাদ্দ আসেনি। আগামী অর্থ বছরে বরাদ্দ এলে খাল খনন করা হবে। খননের সময় পরিমাপ করে দখল মুক্ত করা হবে। খাল দখর মুক্ত করতে সম্প্রতি কোন অভিযান হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইউএনও জানান, ওই রকম বড় কোন অভিযান চালানো হয়নি। তবে অভিযোগ পেলে অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, বুধবারও বড়ইয়ার চল্লিশকাহনিয়া এলাকায় খালে অবৈধভাবে সেতু নির্মান করতে চাইলে মোবাইল কোটের মাধ্যমে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওই প্রকল্প বরাদ্দ পেলে শহরের ভারানি খালটি উদ্ধার করে একই সাথে খননের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এবং জাঙ্গালিয়া নদীটিও খননের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়