ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

সাগরে মাছ নেই, খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা

0e71c4328236c3b39414d5cc66bbb32d
print news

 কক্সবাজার প্রতিনিধি :  ভরা মৌসুমেও মাছ নেই। তাই বঙ্গোপসাগর থেকে খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা। অথচ বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে সাগরে ছিল মাছে ভরপুর। জেলেরা বলছেন, সাগরে নুইন্যার (জেলিফিশ) অস্বাভাবিক আগমনের কারণেই মাছ নেই সাগরে। এ বিষয়ে সমুদ্র বিজ্ঞানীরা বলছেন, নুইন্যা বা জেলিফিশ যেখানে থাকবে সেখানে মাছের উপস্থিতি হ্রাস পাবে।কক্সবাজারের একমাত্র মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ফিশারি ঘাট। এখানে সাগর থেকে আহরিত মাছ বেচাকেনা হয়। কিন্তু এই মৎস্যকেন্দ্রে গত এক সপ্তাহে আসা মাছ ধরার ট্রলারগুলো সবকটি খালি। কিছু সংখ্যক ট্রলারে ছোট মাছের দেখা মিললেও ইলিশ, রূপচাঁদা থেকে শুরু করে আশানুরূপ অন্য মাছও নেই। এ কারণে হতাশ জেলে ও তাদের পরিবার। সামনে ঈদ নিয়ে অনেকটা শঙ্কিত এসব জেলে পরিবারগুলো।জেলে নুরুল কবির বলেন, ‘দুই দিন ধরে সাগরে বিভিন্ন স্থানে জাল ফেলে মাছ পাইনি। ট্রলার নিয়ে যেদিকে যাই, সেদিকে নুইন্যা আর নুইন্যা (জেলিফিশ)। যেভানে নুইন্যা থাকবে, সেখানে মাছ থাকবে না। সাগরে জাল ফেললেই মাছের বদলে উঠে আসছে জেলিফিশ।লতিফ মোল্লা। বাড়ি নোয়াখালী। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সাগরে মাছ আহরণ করছেন। শুক্রবার ভোর সকালে ফিশারি ঘাটে ট্রলার ভিড়িয়েছেন। মাছ নেই সাগরে। তাই মাছ পাননি। যতটুকু মাছ পেয়েছেন, তা দিয়ে ট্রলারের তেল খরচও উঠবে না। এখন দ্বিতীয়বার সাগরে যাওয়ার খরচ ট্রলার মালিক দেবেন কিনা সন্দেহ। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী ঈদের খরচ নিয়ে কী হবে, শঙ্কায় আছি।একই কথা বলছেন, ‘জেলে সৈয়দুর রহমান। সাগরে নুইন্যার উপস্থিতি এমনভাবে বেড়েছে, অতীতের কোনও সময়ে যা দেখা যায়নি। সাগরে নুইন্যা আসলে পালিয়ে যায় সব মাছ। কারণ, নুইন্যাকে ভয় পায় সাগরের যেকোনও মাছ। এ ছাড়াও নুইন্যার ভয়ে জেলেরা সাগরে জাল ফেলতে ভয় পান। কারণ নুইন্যাগুলো জালে আটকে গেলে ফেলতে অনেক সময় অপচয় হয়।শুধু ফিশারি ঘাটে ফেরা জেলেরা নয়, জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ জেলে পরিবারের দিন কাটছে হতাশায়। ভরা মৌসুমে সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে এই হতাশা বাড়ছে দিন দিন। মাছের আশায় প্রতিনিয়ত সাগরে গিয়ে অনেকটা খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। লাভের খাতায় খরচের হিসাব বেড়েছে দ্বিগুণ। এ কারণে বেশির ভাগ জেলের ঋণ পরিশোধ দূরের কথা, বোট নিয়ে সাগরে যাওয়া-আসার খরচও উঠছে না।শুক্রবার সকালে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত যেসব মাছ ধরার ট্রলার ভিড়েছে, সবকটি খালি। কিছু কিছু ট্রলার সামান্য মাছ নিয়ে আসলেও তা কাঙ্ক্ষিত নয়। এ কারণে জেলেদের চোখে-মুখে যেন হতাশার অন্ধকার। কারও মুখে হাসি নেই। ট্রলারে কেউ জাল মেরামত আবার কেউ বসে অলস সময় পার করছেন।সাগরে নুইন্যা বা জেলিফিশ বিষয়ক বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলছেন, ‘নুইন্যা বা জেলিফিশ এক ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণী যাদের পৃথিবীর সব মহাসাগরে দেখতে পাওয়া যায়। এটি সাগরের উপরের অংশ থেকে যতটুকু সম্ভব গভীরে যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের বেশি দেখা দিচ্ছে এই জেলিফিশ। বৃষ্টিপাত কমে গেলে বা সাগরে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে জেলিফিশের বিচরণ বেশি হয়।’তিনি আরও বলেন, ‘সাগরে একেক সময় একেক এলাকায় জেলিফিশের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। এ কারণে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট জেলিফিশ নিয়ে কাজ করছে। সাগরে কয়েক প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে। তাই জেলিফিশকে কীভাবে খাওয়ার উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রেখেছি আমরা।একদিকে মাছের ভরা মৌসুম, অন্যদিকে পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদ। এই বিশেষ দিনগুলোতে সাগরে মাছের এমন পরিস্থিতিতে জেলে ও ট্রলার মালিকরা কোনোভাবে হিসাব মেলাতে পারছেন না। এ কারণে দিশেহারা এই মানুষগুলো। আগামী দিনগুলোতে সাগরে বেশি মাছ পাওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন তারা।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *