ধর্ম

তুরস্কে পাহাড়ের চূড়ায় মসজিদ

image 75235
print news

মেজর (অব.) ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ: পাহাড়ের সঙ্গে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের একটা আবেগের সম্পর্ক ও ঐতিহাসিক মেলবন্ধন রয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কার হেরা পর্বতের গুহায় নবুয়ত লাভ করেন। এই পাহাড়েই সর্বপ্রথম পবিত্র কোরআন নাজিল হয় এমনি এক রমজান মাসে। এর আগে হজরত মুসা (আ.) মহান আল্লাহর নুর দর্শন করেন মিশরের সিনাই উপত্যকার তুর পাহাড়ে। পবিত্র কাবা ঘরের নিকটবর্তী সাফা ও মারওয়া নামের দুটি পাহাড়ের মধ্যে সাতবার যাওয়া-আসা পবিত্র হজের আবশ্যিক শর্ত। মুসলমানদের বহু যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের সাক্ষী অসংখ্য পাহাড়, তাই ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে পাহাড়ের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।

মুসলমান অধ্যুষিত দেশ তুরস্কের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৬২ লাখ, যার অধিকাংশ (প্রায় ৯৯ শতাংশ) ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। এই বিশাল মুসলমান জনগোষ্ঠীরসহ যুগপৎ ধর্মপ্রাণ এবং ভ্রমণ ও রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের কাছে একটি পরিচিত নাম ক্লারক্লার মসজিদ। উত্তরপূর্ব তুরস্কের বেবার্ট শহর থেকে আরও উত্তরে কৃষ্ণসাগর উপকূলবর্তী ট্রাবজোন পার্বত্য এলাকায় যাওয়ার পথে এই মসজিদের অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩২০০ মিটার উচ্চতায় এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে। এ মসজিদটির প্রকৃত নির্মাণকাল আজও অজানা। তবে ঐতিহাসিকদের মতে, অনেক আগে এখানে ৪০ জন মুসলমান সাধকের বসবাসকালে এ মসজিদ নির্মিত হয়। তাই মসজিদের আরেক নাম ও স্থানীয় শাব্দিক অর্থ ‘৪০ জনের মসজিদ’।

ক্লারক্লার পর্বতমালার সর্বোচ্চ শিখরে একটি দর্শনীয় স্থানে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। এখান থেকে নিচে একদিকে তাকালে কৃষ্ণসাগরের বিশাল জলরাশি এবং বাকি তিন দিকে তাকালে পর্বতের পর পর্বতমালা চোখে পড়ে। আর ওপরের দিকে তাকালে শুধুই নীল আকাশ দেখা যায়। কৃষ্ণসাগরের দিক থেকে ভেসে আসা প্রবাহমান নির্মল বাতাস এখানে ভ্রমণে আসা যে কোনো মানুষের দেহ ও মন জুড়িয়ে দেয়। তাই মহান আল্লাহর মাহাত্ম্য অনুধাবন ও তার অপার সৃষ্টিকে চোখ ভরে দেখা, একাগ্রচিত্তে এবাদত করা এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করার একটি আদর্শ স্থান এই ক্লারক্লার মসজিদ।

এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে মূলত আশপাশের পাহাড় থেকে সংগৃহীত পাথর দিয়ে। তবে মসজিদের দরজা-জানালা খুলে দিলে পাথরের এ মসজিদেও শীতলতা অনুভব করা যায়। ভেতর থেকে দরজা আর জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে শুধুই নীল আকাশ দেখা যায় বলে এ মসজিদকে পর্যটকরা অসীম নীলের প্রবেশদ্বার বলে থাকেন।

বর্তমানে মসজিদটির ভিতে পুরোনো পাথরই রয়েছে। তবে সংস্কারকালে মসজিদে চারপাশে কাঁঠালি রঙের কাঠ ও ওপরে পীত সবুজ রঙের টিন ব্যবহৃত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক এ ব্যতিক্রমধর্মী মসজিদটি দেখতে আসেন। মুসলমান পর্যটকদের অনেকেই এ মসজিদে নামাজ আদায় করেন এবং এখানে রাতযাপন করেন পাহাড়ের চূড়ায় রাতের নীরবতা অনুভবের আশায়। তাদের ঘুমানোর জন্য মসজিদের পাশে একটি থাকার ঘর নির্মিত হয়েছে, সঙ্গে রয়েছে একটি রান্নার ঘরও।

এ ছাড়া তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলের আরেক নাম সাত পাহাড়ের নগর। সিটি অব সেভেন হিলসের মধ্যে তৃতীয় পাহাড়ের চূড়ায় ১৫৫০ থেকে ১৫৫৭ সালের মাঝামাঝি অটোমান প্রবাদপুরুষ সুলতান সোলায়মান নির্মাণ করেন সুলাইমানি মসজিদ; তবে চতুর্দিকে নগরায়ণের ফলে পাহাড় চূড়ায় নির্মিত এ মসজিদের স্বকীয়তা অনেকাংশেই মলিন হয়েছে।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত মেজর,

গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *