টাঙ্গাইলের ১৫টি গ্রামে মুড়িতে জীবিকা


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : পবিত্র মাসে রমজান মাস এলে বেড়ে যায় মুড়ির কদর। ফলে মুড়ি কারিগর ও ব্যবসায়ীরা বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন রমজান মাসের জন্য। আবার অনেকে মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে এ মাসে মুড়ি উৎপাদন ও বিক্রি করে থাকেন।টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া, মাইস্তা, নগরবাড়ী, দৌলতপুর, লুহুরিয়া, সিংহটিয়া ও মাছুয়াহাটিসহ প্রায় ১৫টি গ্রামে তাই মুড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। এসব গ্রামের প্রায় কয়েকশ পরিবার হাতেভাজা মুড়ি বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই মুড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের প্রায় ৮-১০টি জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে।একজন মুড়ি কারিগর এক দিনে ১ থেকে দেড় মণ চালের মুড়ি ভাজতে পারেন। প্রতি মণ চালে ২২ থেকে ২৩ কেজি মুড়ি হয়। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারি ৯০-১০০ টাকা এবং খুচরা ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। মূলত গ্রামের নারীরাই হাতে ভেজে গুণগত মানসম্মত মুড়ি তৈরি করেন।মুড়ির কারিগরদের তথ্যমতে, প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকার হাতেভাজা মুড়ি উৎপাদন এবং কেনাবেচা হয়। তবে পরিশ্রমের লাভ বেশির ভাগই চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।দৌলতপুর গ্রামের রাধা রানী মোদক বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে মুড়ি ভাজি। ধান সেদ্ধ করে রোদে শুকানোর পর আবার সেই ধান মেশিনে মাড়াই করে মুড়ি ভাজার জন্যে চাল তৈরি করা হয়। পরে সেই চাল দিয়ে লবণ জলের মিশ্রণে আগুনে তাপ সহ্য করে মুড়ি ভাজতে অনেক পরিশ্রম হয়। সবকিছুর দাম বেশি। পরিশ্রমের তুলনায় লাভ তেমনটা হয় না।’অধীর মোদক বলেন, ‘মুড়ি ভাজার প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৩০০ টাকা। এক মণ ধানের মুড়ি ভাজতে খড়ি, লবণ, যাতায়াত ও ধান ভাঙানোর খরচ আরও ১৫০ টাকা। সব খরচ বাদে বেশি লাভ হয় না। এক মণ ধানের মুড়ি ভাজলে ৪০০-৫০০ টাকা লাভ হয়, তা দিয়ে চলে না। আমরা সরকারি সহযোগিতা চাই। প্রতিবছরই চিৎকার করে বলি। কিন্তু কোনো কাজ হয় না।’তবে প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না হাতেভাজা মুড়ি উৎপাদনকারীরা। মেশিনে মুড়ি ভাজতে সময় কম লাগে কিন্তু তুলনামূলক লাভ বেশি। ফলে হাতেভাজা মুড়ি উৎপাদনকারীরা দিন দিন এ কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় ধাবিত হচ্ছেন।সততা মুড়ির মিলের স্বত্বাধিকারী শংকর চন্দ্র মোদক বলেন, ‘রমজানে আমরা অনেক সময় মোবাইলেও মুড়ির অর্ডার নিয়ে সরবারহ করে থাকি। তা ছাড়া নির্দিষ্ট বাজারে স্থায়ী গ্রাহকরা মুড়ি কিনে থাকেন। রমজান ছাড়া বছরের অন্য সময়ে অর্ধেকে নেমে আসে বেচাবিক্রি।’শংকর মোদক আরও বলেন, ‘আমরা প্রতি কেজি মুড়ি ৭০ টাকায় বিত্রি করি। খুচরা ৮০-৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ৫০ কেজি চালের বস্তায় ৪৩-৪৪ কেজি মুড়ি হয়। রমজান মাসে আমাদের মিলে গড়ে ১ লাখ টাকার কেনাবেচা হয়ে থাকে।’এদিকে মেশিনের সাহায্যে বিপুল পরিমাণ মুড়ি উৎপাদিত হলেও হাতেভাজা মুড়ির চাহিদা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। মেশিনে ভাজা মুড়ি সাদা ও লম্বা করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ইউরিয়া কিংবা সোডা ব্যবহারের অভিযোগ থাকায় একশ্রেণির মানুষ সব সময় বিষমুক্ত হাতেভাজা মুড়ি খুঁজে থাকেন।দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান মজনু বলেন, নারান্দিয়ায় মুড়ি কেনাবেচার একটি নির্দিষ্ট বাজার দরকার। সরকার থেকে হাতেভাজা মুড়ি উৎপাদনকারী ব্যক্তি এবং পরিবারগুলোকে বিশেষ ঋণ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, টাঙ্গাইল তথা বাংলাদেশের মধ্যে মুড়ি উৎপাদনের অন্যতম স্থান কালিহাতীর নারান্দিয়া। এখানকার উৎপাদিত লাখ লাখ টাকার মুড়ি সারা দেশে সরবরাহ হচ্ছে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন।টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ‘কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়ার হাতেভাজা মুড়ির চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত প্রান্তিক মানুষদের অবশ্যই সরকারি সাহায্য করার সুযোগ আছে। তাদের তালিকা করে কম সুদে ঋণ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে সাহায্য করার উদ্যোগ নেব। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানকার হাতেভাজা মুড়ির ব্র্যান্ডিং ও আরও প্রচার প্রসারের জন্য জিআই অবেদন করা হবে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়