ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

বাংলাদেশে অপরিণত বিয়ের প্রবণতা বেড়েছে : ১৮ বছরের আগে বিয়ের হার প্রায় ৪২ শতাংশ

image 79771 1534063381
print news

 ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্কআইন প্রণয়ন কিংবা সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম– কোনো কিছুতেই বাল্যবিয়ে ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না; বরং এ ধরনের অপরিণত বিয়ের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। গত বছর ১৫ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়েছে ৮ শতাংশের বেশি মেয়েশিশুর। ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়েছে এমন মেয়েশিশুর হার প্রায় ৪২ শতাংশ। গ্রামে এ হার ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ। গ্রামে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেশি। তবে শহরেও বাল্যবিয়ে বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২৩’ শিরোনামে জরিপের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল প্রতিবেদন থেকে এ পরিসংখ্যান জানা গেছে। গত মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

বাল্যবিয়ে রোধে আইন রয়েছে দেশে। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭ অনুযায়ী নারীর বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। এ বয়সের আগে বিয়ের ঘটনাকে মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, বাল্যবিয়ের কারণে অপরিণত বয়সে অনেক মেয়ে মা হন। এতে তাঁর যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়, তেমনি শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হওয়ার সুযোগও কমে যায়।

বিবিএসের জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ১৫ বছরের কম বয়সে বিয়ে হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ মেয়েশিশুর; যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী আগের তিন বছরে এ ধরনের বিয়ের হার ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক ৭, ৪ দশমিক ৯ ও ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১ সালের পরের দুই বছর টানা বেড়েছে।

কেন দেশে বাল্যবিয়ে বাড়ছে– জানতে চাইলে জনসংখ্যা বিজ্ঞানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল হক  বলেন, অতিমারি করোনার অভিঘাতে সামাজিক যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার ধাক্কা এখনও রয়ে গেছে। সে প্রভাবেই বাল্যবিয়ে বাড়ছে। তাঁর ব্যাখ্যা হচ্ছে, করোনাকালে বাল্যবিয়ে বেড়েছিল। সেই ধাক্কা এখনও কাটেনি; বরং এ ধরনের বিয়ের ব্যাপারে অনেক অভিভাবকের সামনে উদাহরণ তৈরি হয়েছে। সমাজে এখন অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছে। একজন অভিভাবক যখন চোখের সামনে এ বাস্তবতা দেখছেন, তখন তাঁর মেয়ে শিক্ষিত হয়ে মানসম্মত কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে বলে আশা করার আর সাহস পান না। শিক্ষিতদের কাজের নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে বিয়ে দেওয়া নিরাপদ মনে করেন অনেক অভিভাবক।

বিবিএসের জরিপ বলছে, নারীপ্রধান খানার সংখ্যা বেড়েছে দেশে। একজন সংগ্রামী মা তাঁর মেয়েকে নিয়ে নানা অনিশ্চয়তায় থাকেন; যেখানে বিয়ে সহজ সমাধান। ড. আমিনুল ইসলামের মতে, বিবিএসের পরিসংখ্যানের তুলনায় বাল্যবিয়ের প্রকৃত ঘটনা অনেক বেশি। খবর পাওয়া যায় না বলে প্রশাসন বাল্যবিয়ে বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে পারে না। ঠিক একই কারণে বিবিএসের জরিপেও সব ডেটা আসে না।

বাল্যবিয়ের ব্যাপারে বিবিএসের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন  জানান, যে লক্ষ্যে জরিপ, সে-সংক্রান্ত তথ্যই সাধারণত সংগ্রহ করে থাকেন তারা। তাই জরিপ থেকে বাল্যবিয়ের কারণ খোঁজা হয়নি। তবে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে তারা যেসব কারণ জানতে পেরেছেন, তার মধ্যে অন্যতম বাবা-মায়ের চোখে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, দারিদ্র্য, সচেতনতার অভাব ইত্যাদি। বয়স লুকিয়ে আদালতের মাধ্যমে বিয়ের ঘটনাও বাড়ছে। বিয়ে অনুষ্ঠানের ব্যয় এবং বিড়ম্বনা এড়াতে বাবা-মা এতে সহযোগিতা করছেন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনাম বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ের ন্যূনতম বয়স বরের ক্ষেত্রে ২১ আর কনের ক্ষেত্রে ১৮। এর চেয়ে কম বয়সে বিয়ে হলে তা বাল্যবিয়ে বলে বিবেচিত হয় এবং আইনের দৃষ্টিতে অপরাধের শামিল।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাল্যবিয়ে আইন অনুযায়ী অবৈধ হলেও এ আইনের কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। আইন প্রয়োগের দায়িত্ব যাদের, সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এমনকি সংসদ সদস্যদের গাফিলতির কারণেই বাল্যবিয়ে বন্ধে কোনো সাফল্য আসছে না।

‘বাল্যবিবাহ নিরোধকল্পে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা-২০১৮’-তে বলা হয়েছে, সরকার কিংবা শুধু আইন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দ্বারা বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থার (ইউনিসেফ) তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের যেসব দেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশ তার একটি। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে যখন দুনিয়াজুড়ে সমীহের চোখে দেখা হচ্ছে, তখন এ কলঙ্ক সেই সাফল্যকে অনেকটাই নিষ্প্রভ করছে।

গ্রাম ও শহরের বাল্যবিয়ের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, শহরের ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েশিশুর বিয়ের হার ২০২৩ সালে পাওয়া গেছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ; যা ২০২২ সালে ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আগের দুই বছর এ হার ৪ দশমিক ৬ শতাংশে ছিল। গ্রামের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রামে এ বয়সের মেয়েশিশুর বিয়ের ঘটনা ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ; যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগের দুই বছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশে স্থির ছিল।

অন্যদিকে ১৮ বছরের কম বয়সী ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ মেয়েশিশুর বিয়ে হয়েছে গত বছর; যা আগের বছর ছিল ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২১ ও ২০২০ সালে এ বয়সের মেয়েশিশুর বিয়ের হার অনেক কম ছিল। ওই দুই বছরে এ হার ছিল ৩২ দশমিক ৪ এবং ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *