রাজনীতি

বিএসএফ কথা রাখেনি

biplobi 1712070158
print news

ঢাকা প্রতিনিধি :  সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কথা রাখেনি মন্তব্য করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ‘ভারতের প্রতি অনুগত থাকার কারণে সরকার সীমান্ত হত্যার উপযুক্ত প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারে না। সীমান্তে বাংলাদেশিদের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনা ঘটছে তা ভারতের আগ্রাসী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এটি কোনো সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় নয়।’

আজ মঙ্গলবার সকালে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সেগুনবাগিচায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংহতি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সাইফুল হক বলেন, ‘ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সীমান্তের পর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এখন বিশ্বের ভয়ংকর এক সীমান্ত। সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ গুরুতর নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছে। সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার ঘোষণা রক্ষা করেনি ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। প্রায় প্রতি সপ্তাহে তারা বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছে। বিএসএফ তথা ভারত বাস্তবে বাংলাদেশের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে প্রতারণা করে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএসএফ প্রধান ঢাকা থেকে ভারত ফিরে যাওয়ার পরপরই মাত্র এক সপ্তাহে নওগাঁ ও লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের হাতে তিন বাংলাদেশি যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। কেবল ২০২৩ সালে বিএসএফের হাতে ৩০ জনের বেশি বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আর গত সাত বছরে বিএসএফের গুলি ও অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক, আহত হয়েছেন অনেকে।’

সাইফুল হক বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে সীমান্তে লেনদেনে সমস্যা হলেই বিএসএফ মারমুখী হয়ে ওঠে এবং গুলি চালিয়ে বাংলাদেশিদের প্রাণনাশ করে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পাঁচ হাজার কিলোমিটার সীমান্তের চার হাজার কিলোমিটারের বেশি ভারত কর্তৃক কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া। বিশ্বের আর কোনো সীমান্তে এত দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া নেই। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সীমান্ত এবং মেক্সিকো-আমেরিকারও এত বড় তারকাঁটার সীমান্ত নেই। প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক কোনো দুর্যোগে দু-পাশের মানুষ যে পরস্পরের কাছে আশ্রয় নেবে- ভারত তাও এখন বন্ধ করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের উপেক্ষা ও অবহেলার কারণে এখন পর্যন্ত তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা পাওয়া যায়নি। বাণিজ্যিক ভারসাম্য এখনো বাংলাদেশের প্রতিকূলে। বস্তুত বাংলাদেশ-ভারতকে ট্রানজিট সুবিধাসহ তাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাদির সমাধান করে দিলেও কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানির লাশের মতো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ তারা ঝুলিয়ে রেখেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকারসমূহের ভারত তোষণ নীতি, বিশেষ করে গত পনেরো বছর আওয়ামী লীগ সরকারের ভারত অনুগত পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, পানির ন্যায্য অংশীদারিত্ব, বাণিজ্যিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাসহ ভারতে বাংলাদেশবিরোধী বহুমুখী অপতৎপরতা বন্ধ করানো যায়নি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার যখন প্রায় প্রতিদিন ঘোষণা করছে যে, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব এখন সর্বোচ্চ শিখরে, তখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষের রক্তে এই বন্ধুত্বের নির্মম দায় শোধ করতে হচ্ছে। আমরা এসব তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানাই।’

তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে, সরকার সীমান্তে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড বন্ধ দূরের কথা, এর উপযুক্ত প্রতিবাদ করার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে। সীমান্তবর্তী লক্ষ লক্ষ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানেও তাদের দৃশ্যমান ও কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেই। গত পনেরো বছর শাসক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিকভাবে অবৈধ ও অনৈতিক ক্ষমতার পিছনে ভারতের চরম হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের এককাট্টা মদদ ও সমর্থনের বিনিময়ে বাংলাদেশকে তারা ভারতের অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিদিন পরোক্ষভাবে তার স্বীকারোক্তি দিয়ে চলেছেন। তারা প্রকাশ্যেই বলছেন যে, ভারতের সমর্থনের কারণেই তারা ক্ষমতায় আছেন। সরকারের নীতিনির্ধারকদের এই ধরনের বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করেছে। এই ধরনের বক্তব্য রীতিমতো দেশবিরোধী তৎপরতার সামিল।’

তিনি বলেন, ‘সামাজিক গণমাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান ও ক্রমান্বয়ে তার বিস্তৃতি দেশের মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সমতা, ন্যায্যতা, আন্তর্জাতিক বিধিবিধান ও পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতির ভিত্তিতে আমাদের মধ্যকার যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক সমস্যাদির সমাধান করতে চাই। কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে নানা দিক থেকে চাপে রাখতে গিয়ে পরিস্থিতিকে ক্রমান্বয়ে জটিল ও অস্থিতিশীল করে তুলছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, ‘এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, সরকারের দাশানুগ নীতি, কৌশলের কারণে এই সরকারের কাছে দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা কোনোভাবেই আর নিরাপদ নয়। জবরদস্তি করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে ভোটের অধিকার হরণসহ দেশের অবশিষ্ট গণতান্ত্রিক কাঠামো তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। সেকারণে এই সরকারকে বিদায় দেয়া ছাড়া দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ যেমন নিশ্চিত করা যাবেনা, তেমনি জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাও সংরক্ষণ করা যাবে না।’ তিনি দেশ ও দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, জোনায়েদ হোসেন, শাহাদাৎ হোসেন শান্ত প্রমুখ।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *