গাজীপুরে মুদি দোকানেও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি


গাজীপুর প্রতিনিধি : আজিজ মাতুব্বর মুদি দোকানটির বর্গাকার। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে মেরেকেটেও ১২ ফুটের বেশি হবে না। সেখানে চাল-ডাল, তেল-লবণ, সাবানসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায়। মুন্সীরটেক এলাকার অনেক বাসিন্দা নিয়মিত ক্রেতা তাঁর দোকানের। গত বৃহস্পতিবার তাঁর দোকানের সামনের ফুটপাতে দেখা যায় গ্যাস সিলিন্ডার রাখা। সব মিলিয়ে ১৫-২০টির মতো। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় আজিজ মাতুব্বরের মতো বহু দোকানিই এভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাদের কেউই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। ক্রেতাও বুঝতে পারছেন না, কোন সিলিন্ডারের কী মান। সম্প্রতি দেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও এখানে যেন দেখার কেউ নেই।আজিজ মাতুব্বরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সরল স্বীকারোক্তি দেন, ‘সব দোকানেই কম-বেশি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। তাই আমিও করতেছি।’উপজেলার পূর্ব চান্দরা পাশা গেইট এলাকার মুদি দোকানি শুকুর খান বলেন, মাসে ১০-১২টি সিলিন্ডার বিক্রি হয় তাঁর দোকান থেকে। তিনি স্বীকার করেন, ফায়ার সার্ভিস বা প্রশাসনের কোনো অনুমোদন নেই। সবাই বিক্রি করেন বলে তিনিও বিক্রি করেন– এমন দাবি করেন।স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে সব জায়গায় এভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ছড়িয়ে দিচ্ছে। খুচরা ব্যবসা করছে মুদি দোকানিরা। এমনকি অলিগলির সেলুন, স্যানিটারি জিনিসপত্রের দোকান, সবজি বিক্রেতা, ওষুধের দোকানও বাদ পড়ছে না। লেপ-তোশকের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। এতে সহজেই হাতের নাগালে সিলিন্ডার পাচ্ছেন ক্রেতা। মান যাচাই না করেই বিপজ্জনকভাবে ব্যবহার করছেন রান্নাঘরে।উপজেলার তেলিরচালা টপস্টার এলাকায় নিম্নমানের একটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১৩ মার্চ বিকেলে নারী-শিশুসহ ৩৬ জন দগ্ধ হন। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়। আরও বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।মুদি দোকান থেকে ওষুধের দোকান– সব জায়গায় গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, তাঁর মতো নিম্নআয়ের মানুষের কাছে এই গ্যাস ব্যবহার বিলাসিতা। গৃহবধূ সালেহা বেগম আগের মাসে গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছেন ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। চলতি মাসে ১ হাজার ৫২০ টাকায় কিনতে হয়েছে তাঁকে। এই নারী বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডারগুলো টেকসই কিনা– জানি না। প্রায়ই শুনি এই বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। অনেকের মৃত্যু হচ্ছে।’ অন্য উপায় না পেয়ে এভাবেই রান্না সারতে হয় তাদের।উপজেলায় কালিয়াকৈর বাজার, পূর্ব চান্দরা, ডাইনকিনি, চন্দ্রা, মাঝুখান ও মৌচাক এলাকায় এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ডিলারশিপ রয়েছে ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠানের মালিকের। তাদের মধ্যে মাঝুখান গ্রামের সাইফুল, কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় সমীর কুমার সাহা, বিপ্লব চন্দ্র সাহা, অসীম, ভৈরব সাহা, রনি সাহা; ডাইনক্লিন এলাকার আব্দুস সালাম, চন্দ্রা এলাকায় মুন্নাফ মিয়া, মৌচাক শিল্প এলাকায় বাবুল হোসেন, কবির হোসেন, রাসেল মিয়া ও শামীম হোসেনের গোডাউনে হাজার হাজার গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার মজুত রয়েছে। তবে গুটি কয়েক ব্যবসায়ীরই বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নিবন্ধন রয়েছে। তাও ৫০০-১৫০০ কেজি জ্বালানি ধারণক্ষমতার নিবন্ধন। অল্প কয়েকজনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে, যার বেশির ভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ। বেশির ভাগ ডিলারেরই নিবন্ধন ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই।কালিয়াকৈর বাজার, বাড়ইপাড়া, সফিপুর, মৌচাক, তেলিরচালা, ভান্নারা বাজারসহ উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই পাইকারি ও খুচরা হিসেবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। তবে কেউ বিক্রির প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দেখাতে পারেননি।হরিণহাটি এলাকায় ন্যাশনাল কমার্সের খুচরা ও পাইকারি দরে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক মজিবুর রহমান স্বীকার করেন, ফায়ার সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেই তাঁর। তবে নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করছেন।মৌচাক এলাকার রাঙা ট্রেডিং করপোরেশনেও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক চাঁন মিয়া বলেন, তাদের গুদামে ১ হাজার ৫০০ কেজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুতের অনুমোদন রয়েছে। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে ৫০০ কেজি থেকে ৭০০ কেজি পর্যন্ত রাখেন।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী বলেন, এলপি গ্যাসের ব্যবসা করতে হলে ফায়ার সার্ভিস ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। মুদি দোকান কিংবা অন্য কোনো দোকানে সিলিন্ডার বিক্রির সুযোগ নেই। যারা অবৈধভাবে এমন ব্যবসা করছেন, তাদের তালিকা করছেন।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়