বরিশাল নগরীর কোনো জায়গায় শান্তি নেই মশার জন্য


বরিশাল অফিস : বরিশাল নগরীর রাস্তায়, মসজিদে, বাসায় কোনো জায়গায় শান্তি নেই মশার জন্য। বিগত দিনগুলো থেকে বর্তমানে মারাত্মক হয়েছে মশা। নগরবাসীর অভিযোগ- বাসা, অফিস, মসজিদ, মার্কেট এমনকি পরিবহণেও মশা থেকে নিস্তার মিলছে না। রাতে-দিনে সমানতালে কামড়াচ্ছে মশা। এক কথায় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। বিশেষ করে খাল ও নালা-নর্দমার আশপাশে থাকা বাসা-বাড়ির মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে মশা। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে দিনের বেলায়ও মশারির ভেতর আশ্রয় নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী বলছেন, মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতা খুবই কম। তবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দাবি, মশা নিধনে কাজ করছেন তারা। মশক নিধনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর ফুটপাথে বসবাসকারী বৃদ্ধ আফসার আলী বলেন, ‘ও বাবা, মশার কথা কইলেন? মশা কামড় দেলে তিন দিনেও ব্যথা কমে না। কী পোড়ান পোড়ায়, একছের জ্বলে।
মশা থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। একেকটি পরিবারের মাসে মশার কয়েল ও বিভিন্ন স্প্রে কিনতে ৩০০ থেকে হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে অনেকের সঙ্গে কথা বলে। জামাল হোসেন নামে একজন রিকশাচালক বলেন, ‘মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার কয়েল কিনতে হয়। একজন গরিব মানুষের পক্ষে এটা কষ্টসাধ্য।’ মশা মারতে মেয়রকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নগরীর ব্যবসায়ী ইসলাম বলেন, দোকানে কাস্টমার এসে এক মিনিটও বসতে পারছেন না। দিনে-রাতে সমানতালে মশা কামড়াচ্ছে। এই এলাকায় সারাবছরই মশার উপদ্রব থাকে। কিন্তু এখানে সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম খুব একটা দেখা যায় না। দোকানে দৈনিক ৪-৫টি কয়েল জ্বালাতে হয়। বাসায়ও ২-৩টা কয়েল লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন মশার কয়েলের পেছনে আমার ৫০ টাকার মত খরচ হয়। যা মাসে দেড় হাজার টাকা।
নগরীর বাসিন্দা সাঈদ বলেন, মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে কয়েল, অ্যারোসল ব্যবহার করি। এর বাইরে মশা মারার ব্যাটও কিনে রেখেছি। তাও মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। আর কোন উপায় না দেখে গত সপ্তাহে মশা প্রতিরোধে বাসার জানালায় লোহার জালি লাগিয়েছি। তাও কিভাবে যেন মশা ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। ইদানিং মশার ওষুধ ছিটাতেও দেখি না। সিটি কর্পোরেশনের এ বিষয়ে কোন তদারকি আছে মনে হয় না।
নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনের গলির বাসিন্দা ফকরুল ইসলাম খান লিংকন বলেন, ‘মশার জ্বালায় পাঁচতলায়ও থাকতে কষ্ট হয়। নিচতলার বাসিন্দাদের অবস্থা তো ভয়াবহ। নগরীর ব্রাউন্ড কম্পাউন্ড এলাকার দোকানি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘তারাবির জন্য অনেকে কয়েল কিনে নেয়। রমজানের শুরু থেকে অনেকে নামাজের আগে আমার কাছ থেকে কয়েল কিনে নেয়।সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন খনন করা খাল ও পরিষ্কার ড্রেনের মধ্যে মশার রাজত্ব। সেখানে বিভিন্ন আর্বজনা আর পানিতে ভাসছে মশার লার্ভা।
বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নগরীর ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মশক নিধনের জন্য নগর ভবনে আছে মাত্র ১২টি ফগার মেশিন ও কিছু হ্যান্ড স্প্রে। এর মধ্যে আবার একটি ফগার মেশিন অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নগরীর প্রায় দেড়শ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা ড্রেন ও ৩০০ কিলোমিটারের মতো রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মশক নিধনে দৈনিক মজুরিভিত্তিক প্রায় ৯০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর কার্যালয়ে সংযুক্ত। তাদের অনেকেই দায়িত্ব পালনে আন্তরিক নন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ অবস্থায় সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ মশার হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। জেলার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ‘সামনে বর্ষা। মশা আরও বাড়বে। এখই প্রতিরোধ করা উচিত। তা না হলে এবার গত বছরের চেয়ে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এ ছাড়া মশাবাহিত অন্যান্য রোগের বিস্তার ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি সবাইকে মশারি টানিয়ে ঘুমানোসহ প্রতিরোদের ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দাবি, মশা নিধনে কাজ করছেন তারা। আগামী তিন মাসের মধ্যে মশার উপদ্রব কমে যাবে বলে জানান সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়