মাংসের চাহিদা পূরণে : গুরুদাসপুরের গুরুদাসপুরে গ্রামে গড়ে উঠেছে এই ‘গোস্ত সমিতি’


ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : গ্রামের পাকা সড়ক ঘেঁষে মাংসের পসরা ঘিরে মানুষের জটলা। সেহেরির পরপরই গরু জবাই হয়েছে। চামড়া ছাড়ানো থেকে শুরু করে মাংস কাটা মাপযোগে ব্যস্ত মানুষ। এটি কোরবানির ঈদের আয়োজন না হলেও আমেজটা তার চেয়ে কম নয়।একদিন বাদেই ঈদুল ফিতর। ঈদকে ঘিরে ‘গোস্ত সমিতি’র এই বর্ণাঢ্য আয়োজন। গুরুদাসপুরে গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে এই ‘গোস্ত সমিতি’। সমিতির শুরুটা হয়েছিল বছর ছয়েক আগে। শুরুতে এটি গরিবদের সমিতি নামে পরিচিত হলেও এখন এই সমিতি সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
গুরুদাসপুরের আনন্দ নগর গোশত সমিতির উদ্যোক্তা মো. সাজেদুর রহমান জানান, ছয় বছর আগে নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত ২০ সদস্য নিয়ে গ্রামে একটি ‘গোস্ত সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। সমিতিতে এবার ৬৩ সদস্য। বাজারে গরুর গোস্তের দাম গরিবের নাগালের বাইরে থাকায় শুরুতেই দরিদ্রদের নিয়ে সমিতিটি করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন সমাজের প্রায় সব শ্রেণির মানুষ তার এই ‘গোস্ত সমিতি’র’ সদস্য।তিনি বলেন, গোস্ত সমিতির কার্যক্রম চলে বছরভিত্তিকভাবে। বছরের শুরু থেকে ২০০ টাকা হারে সমিতিতে সঞ্চয় করেন সদস্যরা। বছর ঘুরে ঈদের আগে সমিতিতে জমানো অর্থে গরু কিনে তা জবাই করা হয়। ঈদ উপলক্ষ্যে সমিতির সকল সদস্যের মধ্যে ওই গোস্ত সমবন্টন করা হয়।শুধু যে ঈদ উপলক্ষ্যে এমন গোস্তের আয়োজন করা হয় তা নয়। শবে বরাত, শবে কদর, ইসলামী জলসাসহ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে সমিতির পক্ষ গরু জবাই করা হয়। বাজারের তুলনায় কম দামে বেশি গোস্ত পাওয়ায় এই গোস্ত সমিতির প্রসার হয়েছে।
গুরুদাসপুরের বিভিন্ন গ্রামের ‘গোস্ত সমিতি’র সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সদস্যরা সমিতিতে সাপ্তাহিক বা মাসিক হারে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ জমা রাখেন। গচ্ছিত ওই টাকায় কেনা হয় গরু। সাধারণত প্রতিটি গোস্ত সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৭০ জনের মতো।
ভ্যানচালক ষাটোর্ধ রেজাউল জানান, অভাবের সংসারে খেয়ে বেঁচে থাকাই কঠিন। ভ্যান চালিয়ে বর্তমান বাজারে গরুর গোস্ত কেনা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। একারণেই তিনি গ্রামের মাসিক গোস্ত সমিতির সদস্য হয়েছেন।
গোশত সমিতির উদ্যোক্তা সেলিম রেজা জানান, তিনি চার বছর ধরে গোস্ত সমিতি তত্ত্বাবধান করছেন। এবছর তার সমিতির সদস্য ৮০। সদস্যরা মাসিক ৩০০ টাকা করে অর্থ সঞ্চয় করেছেন তার সমিতিতে। সেই টাকায় দুটি এঁড়ে গরু কিনে মাংস বন্টন করছেন। প্রতিকেজি মাংসের দাম পড়েছে ৬৫০ টাকা। বাজার দরের চেয়ে কম দামে বেশি পরিমাণ মাংস পেয়ে সদস্যরাও খুশি। তাদের সমিতির মতো এই গ্রামেই অন্তত ১০টি গোস্ত সমিতি রয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, গ্রামের মানুষ এভাবে গোস্ত সমিতি গড়ে তুললে মাংসের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। গোস্ত সমিতিকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন।