সংবাদ এশিয়া

রোহিঙ্গাদের হত্যা করে তাদের কাছেই হাত পাতছেন মিয়ানমারের সেনারা

image 793805 1712594873
print news

বিবিসি: রোহিঙ্গাদের হত্যা করে এখন তাদের কাছেই হাত পাতছেন মিয়ানমারের সেনারা। প্রায় সাত বছর ধরে হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার করে আসছে দেশটির সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ডও চালিয়েছে তারা। তবে এবার বিপদে পড়ে সেই রোহিঙ্গাদেরই শরণাপন্ন হলো আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসির সাংবাদিকরা জানতে পেরেছেন, জান্তা বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে নিচ্ছেন সেনারা।

নিজ উদ্যোগে সেনা দলে যোগদান না করলে জোরপূর্বক সেনাবাহিনীর দলে নেওয়া হচ্ছে তাদের। বিবিসি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অন্তত ১০০ জন রোহিঙ্গাকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিবিসি এমন সাতজন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের আসল নাম প্রকাশ করেনি বিবিসি। মোহাম্মদ (ছদ্মনাম) নামের এক রোহিঙ্গা বিবিসিকে বলেন, ‘আমি ভীত ছিলাম, কিন্তু আমাকে যেতে হয়েছিল।’ তিনি রাখাইনের রাজধানী সিত্তওয়ের কাছে বাও দু ফা ক্যাম্পে থাকেন।

গত এক দশক ধরে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা আইডিপি ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য হয়েছে। তিন সন্তানের জনক ৩১ বছর বয়সি মোহাম্মদ জানান, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ক্যাম্পের নেতা গভীর রাতে আমার কাছে আসেন। তিনি বলেছিলেন, আমাকে সামরিক প্রশিক্ষণে যেতে হবে, এটি সেনাবাহিনীর আদেশ। আদেশ না মানলে আমার পরিবারের ক্ষতি করা হবে বলে তারা হুমকি দিয়েছিল। মোহাম্মদের মতো রোহিঙ্গা পুরুষদের জন্য চরম পরিহাসের বিষয় হলো- মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এখনো নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত। আর নিজস্ব সম্প্র্রদায়ের বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মতো বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধের একটি ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার তারা।

২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যের মিশ্র সম্প্রদায় থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। আর তাদের নির্ধারিত এসব শিবিরে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়েছিল। পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের আগস্টে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে নৃশংস জাতিগত নিধন অপারেশন শুরু করে। সেই নিধন অপারেশনে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণ করা হয় তাদের নারীদের। এছাড়াও জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের গ্রাম। ওই সময় অন্তত ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তা সত্ত্বেও এখনো প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে টিকে আছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার কার্যক্রম এখনো চলছে।

সম্প্রতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির কাছে রাখাইন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূখণ্ডে দখল হারানোর পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের অন্যান্য অংশেও ক্ষতির শিকার হয়েছে দেশটির সামরিক জান্তা। শনিবার পূর্বাঞ্চলে থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ শহর মায়াবতীর দখল হারিয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা। বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে এই স্থলবন্দরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সংঘর্ষগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সেনাও হারিয়েছে তারা। বিরোধী পক্ষের হাতে অনেক সেনা নিহত ও আহত হয়েছেন। কেউ কেউ আবার আত্মসমর্পণ করেছেন। যার ফলে নতুন সেনা খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে জান্তা। এজন্য এ যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের বলি বানাতে তাদের শরণাপন্ন হচ্ছেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *