অনুসন্ধানী সংবাদ

ব্যানবেইসে অনিয়ম,সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ

image 80300 1713234772
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা :দেশের ১২৫টি উপজেলায় আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। কেন্দ্রগুলোর পুরো নাম আইসিটি ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার ফর এডুকেশন (ইউআইটিআরসিই)। এই কেন্দ্রগুলোতে সম্প্রতি সিসিটিভি ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে ব্যানবেইস। এজন্য প্রতি কেন্দ্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা করে। তবে সব ক্ষেত্রেই সরঞ্জাম কেনা হয়েছে বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে। বাজারদর যাচাই করে এর সত্যতা মিলেছে। শুধু তাই নয়, নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করায় স্থাপনের পর কিছুদিন না যেতেই অনেক কেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের কেনাকাটায় অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে দীর্ঘ প্রায় এক মাসের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিটি ইউআইটিআরসিতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন বাবদ বিল ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু বাজারে যাচাইয়ে দেখা গেছে, এসব পণ্যের সর্বোচ্চ দাম ৭০ হাজার টাকারও কম। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি দামে সিসিটিভি ক্যামেরা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।

ঠিকাদারের দেওয়া বিলের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিটি অফিসে সফটওয়্যার ইনস্টলেশনসহ মোট ১০টি পণ্য কেনা হয়েছে। এর মধ্যে দুই ধরনের ৮টি আইপি ক্যামেরা, একটি ১৬ পোর্টের নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার (এনভিআর), একটি দুই টেরাবাইটের হার্ডডিস্ক, একটি মনিটর, ৫০০ মিটার কেবল, এক সেট যন্ত্রাংশ, পিওই সুইচ এবং ইনস্টলেশন এবং সফটওয়্যার। বেশিরভাগ পণ্য দেওয়া হয়েছে চায়নিজ কোম্পানি হিকভিশনের। এ ছাড়া কোথাও কোথাও ইউএনভি এবং চ্যাম্পিয়নের পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। ঠিকাদারের দেওয়া বিলের সঙ্গে এসব কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া পণ্যের দামের মধ্যে বেশ গরমিল পাওয়া যায়।

বাজার যাচাই করতে রাজধানীর পল্টনে হিকভিশনের পণ্য বিক্রয়কারী একটি পাইকারি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রকল্পে যে দামে পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে, বাজারে সেই পণ্যের দাম অনেক কম। ইউআইটিআরসির বিলে দুই মেগাপিক্সেলের ৪টি আইপি ক্যামেরার দাম ধরা হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। কিন্তু হিকভিশনের এই ক্যামেরার সর্বোচ্চ দাম সাড়ে ৯ হাজার আর ইউএনভির হলে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ফোর মেগাপিক্সেলের ৪টি ক্যামেরার দাম ধরা হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। অথচ এগুলো হিকভিশনের সর্বোচ্চ দাম সাড়ে ১৭ হাজার এবং ইউএনভির দাম সাড়ে ১৯ হাজার টাকা।

এ ছাড়া এনভিআরের দাম ধরা হয়েছে ২১ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে একই ব্র্যান্ডের এই পণ্য বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা। হার্ডডিস্কের দাম ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু বাজারে এর দাম দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা। প্রতি মিটার ৩৫ টাকা দরে ৫০০ মিটার কেবলের দাম ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু বাজারে দাম পড়ে ২০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। মডেল অনুযায়ী হিকভিশনের ওয়েবসাইটে দাম দেওয়া আছে ৬ হাজার টাকা।

বিভিন্ন কোম্পানির পিওই সুইচের দাম ধরা হয়েছে ৯ হাজার টাকা। দেশের বাজারেই একই সুইচের দাম মাত্র ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬০০ টাকা। পাওয়ার কেবল, ভিডিও বেলুন বিএনসি জ্যাকসহ প্রয়োজনীয় কয়েকটি যন্ত্রাংশের দাম ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২০০ টাকা। অথচ এগুলোর দাম সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। এ ছাড়া ইনস্টলেশন এবং সফটওয়্যার বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ১৪ হাজার টাকা।

এদিকে হিকভিশন এবং পিসিভি ব্র্যান্ডের প্রতিটি মনিটরের দাম ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। হিকভিশনের তুলনায় পিসিভি ব্র্যান্ডের মনিটর নিম্নমানের হলেও দাম ধরা হয়েছে একই। দেশের বাজারে হিকভিশনের একই মডেলের মনিটর সর্বোচ্চ ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায় কেনা সম্ভব। আর পিসিভি মনিটরের দাম সাড়ে ৪ হাজার।

বাজারদর অনুযায়ী, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন বাবদ খরচ হওয়ার কথা গড়ে ৭০ হাজার টাকারও কম। সে হিসাবে ১২৫টি উপজেলার মোট খরচ দাঁড়ায় ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ এ কাজে মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ফলে অতিরিক্ত দামে নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করে কমপক্ষে কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।

কেনাকাটার অনিয়মের বিষয়ে বেশিরভাগ উপজেলার ইউআইটিআরটিসির কর্মকর্তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। মূলত এসব সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন না। কোনো পণ্য তারা কেনেনি, এমনকি নিজেরা চাহিদাও দেননি। সবকিছুই হেড অফিস অর্থাৎ ব্যানবেইস থেকে করা হয়েছে। প্রথমে হেড অফিস থেকে নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে চাহিদা পত্র চাওয়া হয়, পরে সেগুলো একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।

জানতে চাইলে রাজশাহীর পবা ও বাগমারার সহকারী প্রোগ্রামার (এপি) ইসমত আরা খাতুন বলেন, ‘হেড অফিস আমাদের স্পেসিফিকেশনসহ সবকিছু পাঠিয়ে দিয়েছে। এই সিসিটিভির মূল্য কত, তা আমাদের জানা নেই। হেড অফিস থেকে যে ভাউচার পাঠানো হয়েছে সে অনুযায়ীই আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে চেক পাঠিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’

তানোর ও পুঠিয়া উপজেলার এপি নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘পুঠিয়া উপজেলায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কয়েকদিন পর থেকেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখা যাচ্ছে। আমরা এটা তাদের জানিয়েছি, কিন্তু এখনো ঠিক করে দেয়নি।’

দ্বিগুণ দামে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ঠিকাদারকে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে ব্যানবেইসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কারণ এসব পণ্যের দাম এবং ঠিকাদার নির্ধারণ করা হয়েছে ব্যানবেইস থেকে। সারা দেশে ব্যানবেইসের বিভিন্ন অফিসে সরেজমিন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন এপি জানান, এগুলোর বিষয়ে আমাদের কোনো চাহিদা ছিল না। হেড অফিস থেকে এগুলোর প্রয়োজন জানিয়ে একটি চাহিদাপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্যগুলো সরবরাহ করে স্থাপন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ইউআইটিআরসিগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ করেছে অটোমেট ইনফোসিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যানবেইসের ডিজি মো. মুহিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

দ্বিগুণের বেশি দাম ধরার বিষয়ে অটোমেট ইনফোসিসের সিইও ফরহাদ উল হাসান  বলেন, ‘ব্যানবেইস যেভাবে স্পেসিফিকেশন দিয়েছে, সেভাবেই কাজ করা হয়েছে। পণ্যের দাম দেখলে হয়তো মনে হতে পারে দ্বিগুণের বেশি দাম ধরা হয়েছে। আসলে স্থাপন বাবদ অনেক খরচ হয়েছে। এ ছাড়া বিলের বাইরেও বিশেষ সফটওয়্যার দেওয়া হয়েছে। যেটা বিলে ধরা হয়নি। এ ছাড়া ভ্যাট ট্যাক্স তো আছেই।’

তিনি বলেন, ‘এ কাজ করে খুব বেশি লাভ হয়নি, শুধু ডিজি স্যার বলেছেন বলেই আমি কাজটা করেছি। একই সঙ্গে পণ্যগুলো দুই বছরের মধ্যে কিছু হলে পরিবর্তন করে দেওয়ার কমিটমেন্ট দিয়েছি।’

জানা গেছে, শুধু সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমেই এই লুটপাট শেষ হয়নি। হেড অফিসের মাধ্যমে প্রতিটি অফিসে এসি, জেনারেটর এবং কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের কাজ করানো হয়েছে। সার্ভিসিং বাবদ প্রতিটি অফিসের বিল ধরা হয়েছে মোট ৭৪ হাজার ৯০০ টাকা। কাজ একই রকম না হলেও প্রতিটি অফিসেই একই বিল করা হয়েছে। ১২৫টি অফিসের হিসাবে মোট বিল ৯৩ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। সার্ভিসিংয়ের কাজেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সার্ভিসিংয়ের কাজ করেছে চট্টগ্রামের ফালাক ভেঞ্চার এবং ইকবাল মেশিনারি নামের দুটি কোম্পানি।

প্রতিটি ইউআইটিআরসিতে এসি সার্ভিসিংয়ের জন্য ২৪ হাজার ৯০০ টাকা, জেনারেটর সার্ভিসিং বাবদ ২৫ হাজার এবং কম্পিউটার সার্ভিসিং বাবদ ২৫ হাজার টাকা বিল ধরা হয়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও কাজ না হলেও বিল করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক জায়গায় শুধু এসি এবং জেনারেটর সার্ভিসিং করা হয়েছে। অথচ এগুলোর সঙ্গে কম্পিউটার সার্ভিসিং বাবদ ২৫ হাজার টাকা বিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে একাধিক এপি জানান, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মতো একইভাবে হেড অফিসের মাধ্যমে কিছু লোকজন এসে জেনারেটর এবং এসি সার্ভিসিং করে বিল ধরিয়ে দিয়েছে। সেই বিলে কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে ধরা হলেও কম্পিউটার ল্যাবেই তারা ঢোকেনি।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দ্বিগুণের বেশি দাম ধরার তথ্য জানার পরও সেই বিল দ্রুত পরিশোধ করার জন্য বিভিন্ন কেন্দ্রের এপিকে চাপ দিচ্ছেন ব্যানবেইসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এমন অভিযোগের বিষয়ে ব্যানবেইসের সহকারী পরিচালক সাবের মাহমুদ  বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ রয়েছে জানি না। হয়তো এপিদের তদারকি করি বলেই আমার বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ করেছেন। কাজ হয়ে গেলে বিল তো পরিশোধ করতেই হবে। সে জন্যই তাদের বলা হয়েছে, কাজ বুঝে নিয়ে বিল পরিশোধ করে দিতে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মো. মুহিবুর রহমান  বলেন, ‘আমার জানা মতে এখানে কেনাকাটায় কোনো অনিয়ম হয়নি। ক্রয় কমিটির প্রতিবেদনের মাধ্যমেই যাচাই-বাছাই করে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী দাম ঠিক করা হয়েছে।’

প্রয়োজন না থাকলেও হেড অফিস থেকে চাহিদাপত্র পাঠানোর নির্দেশনা ও বিল পরিশোধে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে উপজেলা অফিসগুলো তদারকি করতে এটা করা হয়েছে। এ কারণে হয়তো অনেকের এটা পছন্দ হয়নি। তাই অভিযোগ করছেন। আগে সহকারী প্রোগ্রামরা নিজেরাই এসব কাজ করতেন। তখন অনেকে কাজ না করেই বিল নিতো। কেন্দ্রীয়ভাবে এই কাজ করার কারণে হয়তো তারা অখুশি হয়েছেন।’

সার্বিক বিষয়ে অবহিত করা হলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান  বলেন, ‘এটা একটা অভিনব দুর্নীতি। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে দ্বিগুণ দামে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সার্ভিসিং করিয়ে ব্যানবেইসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। পাশাপাশি বিল পরিশোধের জন্য উপজেলা কর্মকর্তাদের চাপ দিয়েও অন্যায় করা হচ্ছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না হলে এমন দুর্নীতি অব্যাহত থাকবে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *