ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

সাপলেজা কুঠিবাড়ির স্থাপনাগুলো প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত

1713926826 9c9f89ad97d0d0cff69b7279dd34425f
print news

দেবদাস মজুমদার : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের নামডাক বিভাগের খাতাপত্রে শিলারগঞ্জ। এখানকার পোস্ট অফিসের নামও শিলারগঞ্জ পোস্ট অফিস। নামটি এসেছে ব্রিটিশ আমলের জমিদার শিলার সাহেবের নাম থেকে। তাঁর ছেলে এডওয়ার্ড প্যারি ক্যাসপার এখানে ২০০ বছর আগে জমিদারির প্রয়োজনে কুঠিবাড়ি নির্মাণ করেছিলেন।ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর শিলারগঞ্জ নাম পরিবর্তন হয়ে সাপলেজা ইউনিয়ন হয়। তবে ডাক বিভাগ পরিবর্তন না করায় ডাকঘরের নাম শিলারগঞ্জই রয়ে যায়। এভাবে ডাকঘরটি ধরে রেখেছে এক টুকরা ইতিহাস। একসময় সাপলেজা কুঠিবাড়ি ঘিরে প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষ ভাগে প্রজাদের উপস্থিতিতে পুণ্যাহ উৎসব হতো।প্রজারা উৎসবের আবহে খাজনা দিতে কুঠিবাড়িতে জড়ো হতো। পাশাপাশি এ কুঠিবাড়ি ঘিরে নানা শোষণ আর নিপীড়নের কাহিনি প্রচলিত আছে। ব্রিটিশ শাসনামলের ইংরেজ ও অন্য ইউরোপীয় অনেক কুঠিয়ালের আস্তানার বিরুদ্ধেই ছিল সে অভিযোগ। ২০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই সাপলেজা কুঠিবাড়ির স্থাপনাগুলো সুরক্ষার অভাবে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

একসময়ের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো আজ প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রায় সোয়া ৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছিল জমিদার ক্যাসপারের কুঠিবাড়ি। এলাকার জনশ্রুতি, ক্যাসপার সাহেব একবার সাপলেজা ভ্রমণ করতে এলে স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি ফরাজউল তাঁকে সম্মান জানিয়ে ওই জমি উপহার দেন। পরবর্তীকালে সেখানেই ক্যাসপারের জমিদারি গড়ে ওঠে।

জনশ্রুতি বলে, ক্যাসপারের বার্ষিক খাজনা আদায় উৎসবের সময় প্রজাদের মনোরঞ্জনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো।এর মধ্যে থাকত জাদু প্রদর্শনী, গানবাজনা, যাত্রাপালা ইত্যাদির আসর। আবার খাজনা বকেয়া রাখা এবং অন্যান্য অপরাধের জন্য শাস্তির সম্মুখীন হতে হতো প্রজাদের। কথিত আছে, সোয়া হাত মাপের একজোড়া জুতা দিয়ে অপরাধী প্রজাদের পেটানো হতো।

কুঠিবাড়ির দোতলা মূল ভবনটি ছিল চৌকোনা ১৮টি খিলানের ওপর নির্মিত। এ ছাড়া প্রাঙ্গণে আরো কিছু স্থাপনা ও শান-বাঁধানো ঘাটসহ বিশালাকৃতির একটি পুকুর রয়েছে। ধারণা করা হয়, কুঠিবাড়ির মূল ভবনের দোতলায় জমিদার প্যারি ক্যাসপারের ব্যক্তিগত মূল্যবান সামগ্রী ছিল। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর ব্রিটিশরা চলে গেলে কুঠিবাড়ি পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় ভেঙে ফেলা হয় মূল ভবনটির দোতলার সম্পূর্ণ অংশ। তখন এ অংশে থাকা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলো বেহাত হয়ে যায়। স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ক্যাসপারের ব্যবহৃত দুটি তরবারি ও কিছু তৈজস ছিল। কিন্তু তার খোঁজ আজ কারো জানা নেই।বর্তমানে টিনের ছাউনির কুঠিবাড়িটি ২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে অযত্ন-অবহেলার চিহ্ন বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুঠিবাড়ির তৎকালীন ম্যানেজার সুরেন্দ্রনাথ সুর ও নায়েব সতীশ চন্দ্রের কোনো বংশধরের খোঁজ পাওয়া যায় না। ক্যাসপার সাহেবের মূল বাড়ি সংস্কার করে কিছুদিন ইউনিয়ন ভূমি অফিস (তহশিল অফিস) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে অদূরে নতুন ভূমি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়।

এ বিষয়ে সাপলেজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিরাজ মিয়া বলেন, ‘সাপলেজা কুঠিবাড়ি মঠবাড়িয়া অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। কুঠিবাড়ির স্থাপনাগুলো সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংসের দিকে। এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থে এর সংস্কার জরুরি।মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাইয়ূম বলেন, ‘এ ধরনের পুরনো স্থাপনা স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিপন্ন কুঠিবাড়িটি সংরক্ষণের জন্য প্রত্নত্তত্ত্ব বিভাগকে অবহিত করা হবে।’পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনের সংসদ সদস্য মো. শামীম শাহনেওয়াজও স্থাপনাটি সংরক্ষণের তাগিদ দিলেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সাপলেজা কুঠিবাড়ি ঘিরে ইংরেজ জমিদার ও এ অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনধারার সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, যা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *