ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

একটা সুযোগ চান মিল্টন সমাদ্দার, প্রতিহিংসার শিকার : আইনজীবী

milton somaddar
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪ সালে। এক বছর পর সমাজসেবা অধিদপ্তরে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন তিনি। ২০১৮ সালে আশ্রমের কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স পান। আশ্রমটিকে কেন্দ্র করে মোট ২টি লাইসেন্স করা হয়। একটি ফাউন্ডেশনের জন্য, আরেকটি সমাজকল্যাণের জন্য। সমাজকল্যাণের লাইসেন্সে হতদরিদ্রদের আশ্রয়, সেবা দেওয়া ও চিকিৎসার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।

বৃহস্পতিবার (২ মে) রিমান্ড ও জামিন শুনানি চলাকালে বিচারকের জেরার মুখে এসব তথ্য জানিয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। এ সময় বিচারক চিকিৎসার জন্য আশ্রমে কী কী ব্যবস্থা আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। আদালতে ‘ফিরিস্তিযোগে’ মিল্টনের আইনজীবীর দাখিল করা ছবির বিষয়ে বিচারক বলেন, এই মানুষগুলোকে সেখানে (আশ্রম) নিয়ে গেলেই ভালো হয়ে যায় কি না। এ সময় তিনি একজন ডাক্তারের নাম বলেন। ওই ডাক্তার আশ্রিতদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ করেন বলে জানান মিল্টন।মিল্টন জানান, এ পর্যন্ত আশ্রমে ১৩৫ জন মারা গেছেন। তাদের কবরস্থ করার রশিদও আছে। মৃতদের কবরস্থ করার বিষয়ে একাধিক মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলেও কোনো সহযোগিতা পাননি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আশ্রমের নিজস্ব অর্থায়নে মৃতদের কবরস্থ করা হয় বলে জানান তিনি।

মিল্টন আদালতকে জানান, বর্তমানে আশ্রমটিতে ২৫৬ জন অসহায় মানুষ অবস্থান করছেন। এদের সবাই বেওয়ারিশ। এর মধ্যে ৬ জন গর্ভবতী নারীও রয়েছেন। তাদের দেখভাল করার জন্য একজন ডাক্তার রয়েছেন। গর্ভবতীদের পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আশ্রমের নিজস্ব অর্থায়নে সিজার করানো হয়। আশ্রমটিতে বেওয়ারিশ ছাড়া অন্য কারও থাকার সুযোগও নেই।

ডেথ সার্টিফিকেটের বিষয়ে মিল্টন জানান, যেহেতু তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায় না তাই মৃতদের কবরস্থ করার জন্য সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। এর বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। কোনো সার্টিফিকেটে তার স্বাক্ষর নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাক্ষর করে থাকেন।সার্টিফিকেটে কী লেখা থাকে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কী কারণে লোকটি মারা গেছে সেটাই লেখা থাকে। মৃত্যুর এই কারণ কীভাবে পান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমাদের একজন ডাক্তার আছেন। তিনি যখন তাদের দেখে যান কার কী সমস্যা সেটা উল্লেখ করা থাকে। সার্টিফিকেটও লেখা হয় তার কী কী রোগ ছিল সেটার ওপর ভিত্তি করে।ডাক্তার পরিচয়ে কোনোদিন কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেননি বলে জানান মিল্টন সমাদ্দার। এ সময় তিনি একটা সুযোগ চান, যাতে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে আশ্রমটি ভালোভাবে চালাতে পারেন।আয়-ব্যয়ের বিষয়ে তিনি জানান, অডিট ফার্ম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অডিট করা হয়। ২০১৭ সাল থেকে আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা আছে।মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের হয়। এরপর তার আশ্রমের টর্চার সেলে মারধর করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়। এছাড়া মানবপাচার আইনেও একটি মামলা দায়ের হয়েছে।বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরাও। তার বিরুদ্ধে আশ্রিতদের কিডনি বিক্রি এবং মানব পাচারের অভিযোগ ওঠে।

রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের মুখে ভাত তুলে দেন মিল্টন : আইনজীবী

রাস্তায় একজন অসুস্থ মানুষ পড়ে থাকলে দেখার কেউ নেই। মিল্টন সমাদ্দার রাস্তা থেকে তুলে এনে তাদের মুখে ভাত তুলে দেন। তাকেই তো মানবতার ফেরিওয়ালা বলা যায় । বৃহস্পতিবার (২ মে) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এসব কথা বলেন মিল্টনের আইনজীবী আব্দুস সালাম শিকদার।তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দার নিজেকে মাদার তেরেসার সঙ্গে তুলনা করেন না। তবে মাদার তেরেসাকে ফলো করে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন তিনি। শুনানিতে মিল্টন সমাদ্দারের আইনজীবী আরও বলেন, মন্দের ভিড়ে এখনো মানুষের সংখ্যা বেশি। মানুষ এখনো সেবা দিচ্ছে। আর কেউ ভালো কর্মে আকর্ষিত হয়ে দান করলে সেটা গ্রহণ করা তো প্রতারণা করা নয়। মিল্টন সমাদ্দার প্রতিহিংসার শিকার। ভালো কাজ করেছে। এজন্য সে চক্ষুশূল হয়েছে। আর সে তো তার আব্বার নামে জমি কেনেনি। ট্রাস্টের নামে কিনেছে। ভালোকে অ্যাপ্রিশিয়েট করা উচিত। তাকে হয়রানি করতে ডাহা মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্রাস্ট তো আজকের না। এতোদিন তো চলে আসছে। থলের বিড়াল সাদা না কালো বেরিয়ে আসবে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *