ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ,ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না

405227023 663898179264214 3727300137822588974 n
print news

বরিশাল অফিসঘুষ ছাড়া সেবা দেন না বরিশালের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মাস কিংবা বছর পেরিয়ে গেলেও গ্রাহকের সেবা মেলাতো দূরে থাক, বিদ্যুৎ কর্তাদের অবহেলায় গ্রামের বাড়িগুলো এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে।পল্লী বিদ্যুতের অবহেলায় ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের ৩ সদস্যের মৃত্যু হয়। এ ধরনের সমস্যার সমাধান করতে হলে বিদ্যুৎ কর্তাদের মিষ্টি খেতে ৩২ হাজার টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ স্বীকার করেন জেনারেল ম্যানেজারও। আর প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার গতানুগতিক আশ্বাস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের মোল্লা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের তৈরি দুটি ঘরে কোনোরকম নিয়মনীতি না মেনেই দেয়া হয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। হাত বাড়ালেই মেলে ২২০ ভোল্টের তার। নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা।বাসিন্দারা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গত ৫ বছর যাবত ধরনা দিলেও সমাধান তো দূরে থাক, বিদ্যুৎ কর্তাদের মিস্টি খেতে ৩২ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ। ঘুষ দিতে না পারায় প্রতিদিন মৃত্যুভয় নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন তারা।ঢালমারা গ্রামের বাসিন্দা আদম আলী হাওলাদারের জামাতা সোহাগ সিকদার বলেন, ‘আমি নিজে গত তিন বছরে ২০ বারের বেশি শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে পল্লী বিদ্যুতের অফিসে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমার ছোট বাচ্চা আছে। এই বাড়ি এলে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় আসতেও দেয়া হয় না।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১

আদম আলী হাওলাদারের স্ত্রী পরীবানু বলেন, ‘একটু ঝড়বৃষ্টি হলেই পুরো ঘরে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে যায়। তাদেরকে অনেকবার জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা সব কিছুতে খামখেয়ালি করে। মাথার উপর বিদ্যুতের সংযোগের ঝুলন্ত ক্যাবল দেখিয়ে তিনি বলেন, কখন যে আমি মারা যাই তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’সিরাজুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, ‘যতবারই ফোন দিয়েছি। তারা টাকা দাবি করেছে। শেষমেষ ৩২ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। আমার মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা। আমি একবারে ৩২ হাজার টাকা কোথায় পাব। ভুল করেছে তারা, জীবনের ঝুঁকি আমাদের। তাদের ভুলের মাসুল হিসেবে টাকাও গুনতে হবে আমাদের।’পল্লী বিদ্যুতের এমন অনিয়মের অভিযোগ বাকেরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ঘরে ঘরে। যার সবশেষ পরিণতি, গত ২৭ এপ্রিল ঢালমারা গ্রামে বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে স্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ‘নগদ ঘুষ ছাড়া নড়েন না পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা।’রিয়াজ মোল্লার বাবা সুলতান মোল্লা বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সব কিছুতে টাকা ছাড়া হয় না। এর আগেও দুই তিনবার তার ছিঁড়লে টাকা দেয়ার পর এসে ঠিক করে দিয়েছে। এবারও অভিযোগ দেয়া হয়। কিন্তু টাকা না দেয়ায় তারা আসেনি। টাকা দেয়া হলে এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে হতো না।’স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ‘ঝড় বা বাতাস হলেই বিভিন্ন স্থানে ক্যাবল ছিঁড়ে পড়ে। একবার তিন দিন কারেন্ট বন্ধ ছিলো। টাকা দেয়ার পর এসে সংযোগ ঠিক করে বিদ্যুৎ চালু করে দিয়েছে।’গ্রামবাসীর অভিযোগ, টাকা ছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের কোন কর্মচারী থেকে কর্মকর্তারা সমস্যা সমাধানে সরেজমিনে আসেন না।একাধিক অনিয়ম, অভিযোগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন খোদ জেনারেল ম্যানেজার। তবে খোঁড়া অজুহাত হিসেবে যুক্তি দেন, ‘প্রমাণ পেলে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারিকেই ছাড় দেয়া হবে না।’অভিযোগ সম্পর্কে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমরা বিদ্যুতের বিষয়ে প্রচুর অভিযোগ পেয়েছি। এতো মানুষ যখন অভিযোগ দিয়েছে, অবশ্যই তার কিছু না কিছু সত্যতা আছে। কিন্তু অভিযোগ তো প্রমাণ করতে হবে। অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কোনো অডিও কিংবা ভিডিও আমাদের দিতে হবে। তাহলেই আমরা শাস্তির আওতায় আনতে পারব।’

তিনজনের মৃত্যুর খবরে ঢাকা থেকে আসা তদন্ত কর্মকর্তা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ পরিচালক (প্রশাসন) কাজী রিয়াদ হাসান বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে যে জড়িত। সে যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন, ছাড় দেয়া হবে না

মোঃ হুমায়ুন কবীর’র বিরুদ্ধে  অনিয়মের অভিযোগ

বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -১ রুপাতলীর’র জিএম প্রকৌশলি মোঃ হুমায়ুন কবীর । যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ। জিএমের দুর্ব্যবহারে গ্রাহক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অতিষ্ঠ । জিএমের দুর্নীতির শিকার হয়েছেন গ্রাহকরা ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। জিএমের কথা না শুনলেই বদলীসহ বিভিন্নভাবে মানষিক হয়রানী নিত্যদিনের।
২০২২ সালের ১৮ জুন যোগদানের পরই তিনি নিত্য নতুন নিয়ম চালু করেন। তার হুকুমই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আইন। জিএম হুমায়ুনের রোষানলে পরে অনেকেই তদবীর করে অনত্র চলে গেছেন। এজিএমরা মান সম্মানের দিক তাকিয়ে নিরবে তার মানষিক হয়রানী সহ্য করছেন।প্রতিবাদ করায় এজিএম মহিউদ্দিনকে বদলী করানো হয় চাঁদপুরে। মহিউদ্দিনের মত অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বদলীর জন্য দিন গুনছে। এছাড়া জিএম হুমায়ুন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাড়ি ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত কাজে। সরকারি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোন আইন কানুন বিধিমালা বাস্তবায়ন না করে নিজ বানানো আইনে পরিচালিত করছেন বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -১ রুপাতলী,বরিশাল। এছাড়া জিএম মোঃ হুমায়ুন কবির তিনি সব সময়ই পল্লী বিদ্যুতায়ন কোর্ডের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালকের নাম ভাঙ্গিয়ে একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন:

বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র জিএমের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী-দুর্নীতি অনিয়ম’র অভিযোগ

গোডাউনে রক্ষিত মালামাল তার নিজস্ব লোক দিয়ে বাইরে বিক্রি করে দেয়া,বিধি বহির্ভুত বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মাসাতের অভিযোগ রয়েছে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে। তিনি যোগদানের পরই গোডাউন থেকে বিদ্যুতের তার ও মালামাল চুরি হয়েছে। বিশ্বস্ত একটি সুত্র জানিয়েছে, হুমায়ুন কবির বিদ্যুতের নতুন সংযোগ প্রদান, মিটারপ্রাপ্তিসহ বিভিন্ন কাজে দালাল ছাড়া কোনো কাজ করেন না। তার রুমে যাওয়া অনেক কঠিন। একজন পিয়নকে দাড় করিয়ে রাখেন। সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হওয়ার সুবাদে লাল লাখ টাকা দালারদের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন হুমায়ুন কবির। তার কর্মকান্ডে পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের বরিশাল বিভাগীয় ও জেলা কর্মকর্তারা ক্ষুব্দ ও বিরক্ত।
২০২৩–২৪ অর্থ বছরের জন্য তালিকাভু্ক্তি মিনি ঠিকাদার নবায়ন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘুষের বিনিময়ে মিনি ঠিকাদার নবায়ন করেছেন। এসব মিনি ঠিকাদারদের জস্য যে সব শর্তআরোপ করা হয়েছে তার অধিকাংশই শর্ত পুরন করেননি তার পরেও ঘুষ দেয়ার কারনে নবায়ন হয়েছে।
অভিন্ন কম্পিউটারাইজড বিদ্যুৎ বিল ফর্ম সরবরাহের দরপত্র,পানির ট্যাংকি সরবরাহের দরপত্র,বাকেরগঞ্জ জোনাল অফিসের ইন্টারকম সিষ্টেম স্থাপন কাজ,সাবমেরিন ক্যাবলের খালি ষ্টিল ড্রাম দরপত্র,ষ্টেশনারী মালামাল সরবরাহের কোটেশন আহবান,ব্যবহার অযোগ্য ট্রান্সফরমারের প্যাকিং কাঠ দরপত্র,বাকেরগঞ্জ জোনাল অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন,রাস্তা সংস্কার নির্মাণের কাজ,আউট সোসিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগসহ বিভিন্ন টেন্ডারে নয়ছয়ের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে একই ব্যক্তিকে কাজ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলা নিয়ে বর্তমানে দুটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ ৩ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ গ্রাহক আছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ১৪০ জন গ্রাহক।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *