খুলনায় খাল দখল করে কেডিএ বোর্ড সদস্যের ৯ তলা ভবন নির্মাণ


ইত্তেহাদ নিউজ,খুলনা : খুলনা মহানগরীকে বাসযোগ্য ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। নগরীতে ভবন নির্মাণে কেউই মানছেন না সরকারি বিল্ডিং কোড ও কেডিএ’র বিধিমালা। গড়ে উঠছে একের পর এক অবৈধ ভবন ও স্থাপনার জঞ্জাল। এবার খোদ কেডিএ’র পরিচালনা বোর্ড মেম্বার প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী ভক্ষকের ভূমিকায় নাম লিখিয়েছেন। তিনি নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার ১৮ নম্বর রোডের ৩৫৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের পিছনের অংশে সরকারি খাল দখল করে কেডিএ’র নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ করেছেন।
কেডিএ বোর্ড মেম্বারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেডিএ’র বিধিমালা ও আইনকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে এসব কাজ করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তার দেখাদেখি আশপাশের আরও অনেকেই সরকারি খাল দখল ও কেডিএ’র নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ করেছেন। ইতোমধ্যেই আবাসিক এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষা, পানি নিষ্কাশনসহ পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারি খাল দখল ও নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কেডিএ চেয়ারম্যান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, খুলনা সিটি মেয়র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ও দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগের সূত্রে ও সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, নিরালা আবাসিক এলাকার ১৮ নম্বর রোডের কয়েকটি প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্লটের মধ্যে ৩৫৫ নং হোল্ডিংয়ের মালিক কেডিএ বোর্ড মেম্বার ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স) শেখ শওকত আলী একটি ৯তলা ভবন নির্মাণ করছেন খাল ভরাট করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শওকত আলীর দেখাদেখি ১৮নং রোডের পার্শ্ববর্তী ৩৫৭ ও ৩৫৮ নং হোল্ডিংয়ের মালিকরা তাদের ভবনের পিছনের অংশে সরকারি খালের জায়গা দখল করে কেডিএ’র অনুমতি না নিয়ে ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছে।
অভিযোগ বিষয়ে শেখ শওকত আলী বলেন, ‘আশপাশের আরও অনেকেই খাল দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছে। আমিও সেভাবেই করেছি।’ তিনি দাবি করেন, কেডিএ’র নকশা অনুযায়ী ৯তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। নির্মাণ কাজের সময় কেডিএ’র পরিদর্শকরা তদারকি করেছেন। তিনি নিজেকে কেডিএ’র পরিচালনা বোর্ডের মেম্বার বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি কেডিএ’র নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত আছেন। তিনি বলেন, কেডিএ বা প্রশাসন বললে তিনি ভবনের বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলবেন। তিনি কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও খুলনার সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে তার সখ্যের কথা উল্লেখ করেন।
খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, রক্ষক হয়ে ভক্ষক হলে সেটা সবচেয়ে মারাত্মক অন্যায় কাজ। বিষয়টির তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভবনের নকশা বাতিলপূর্বক ভবন অপসারণ করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কেডিএ’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস. এম মিরাজুল ইসলাম বলেন, কেডিএ’র আওতাভুক্ত এলাকায় কোনো ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে আইন ও বিধিবিধান মেনেই করতে হবে। কেডিএ’র বোর্ড মেম্বার বা ক্ষমতাধর যে কেউ হোক না কেন ভবন নির্মাণের নকশা ও বিধিমালা না মানলে ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলেও তিনি জানান।
নগরীতে খাল দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, সিটি করপোরেশন সব খাল-নদী সংরক্ষণ ও অবৈধ দখল উচ্ছেদে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সেখানে কেডিএ’র মতো একটি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হয়ে নকশাবহির্ভূতভাবে ও খাল দখল করে ভবন নির্মাণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। খাল দখলকারী যেই হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। অচিরেই খালের দখল উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানান সিটি মেয়র।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়