ফিচার

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছড়িয়েছে আলোর দ্যুতি

cumilla new
print news

মাহফুজ নান্টু : উঁচু দালান, তার মাঝে ফুলের বাগান। ক্লাসরুমে বসে পাঠগ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ আবার বাইরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেকে। সুন্দর পরিপাটি ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাসে ছেলে তার বাবা কিংবা বাবার বাবা কিংবা দাদার বাবাও লেখাপড়া করেছেন। বংশ পরম্পরায় সবারই প্রিয় প্রাঙ্গণ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। ১২৫ বছর ধরে আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে। পরিপূর্ণ এই ক্যাম্পাসটি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নেই। কত জ্ঞানীগুণী এই কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। পূর্ব বাংলার অক্সফোর্ড নামে পরিচিত ভিক্টোরিয়া কলেজটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

কলেজটির ডিগ্রি শাখা ধর্মপুরে। উচ্চ মাধ্যমিক শাখাটি কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে। প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে মুখর থাকে এই ক্যাম্পাস। ২২টি বিষয়ে অনার্স ও ১৮টি বিষয়ে মাস্টার্স পড়ানো হয় এখানে। রয়েছে ১২টি সক্রিয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায, রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় ১৮৯৯ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষানুরাগী রাজা আনন্দ চন্দ্র রায় একজন ঠিকাদার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। কলেজটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন। এই কলেজ এভাবে পরিপূর্ণ বাস্তবে রূপ নেয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ সরকার তাকে রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করে।

কলেজটির উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়ের একটি ভাস্কর্য রয়েছে। শিক্ষাবিদ সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন এই কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। যিনি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই পদে কর্মরত ছিলেন।

প্রথমে জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় ১৮৮৬ সালে ‘রায় এন্ট্রান্স ইস্কুল’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৮ সালে মহারানি ভিক্টোরিয়ার ‘জুবিলি জয়ন্তী স্মারক চিহ্ন স্বরূপ এটিকে ভিক্টোরিয়া স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৯৯ সালে তা পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ও ভিক্টোরিয়া কলেজ নাম ধারণ করে। একই বছর এই কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে গণ্য হয়।

১৯০২ সালে এক প্রচণ্ড অগ্নিকাণ্ডের ফলে এই কলেজটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। পরে আবারও তা পুনর্নির্মাণ করা হয়।

বর্তমানে কলেজটিতে ১৫৭টি সৃষ্ট পদে ১৭০ জন শিক্ষক পাঠদান করেন। শিগগিরই কলেজটিতে আরও ৩৩০টি পোস্ট তৈরি করা হবে। যার মধ্যে প্রত্যেক বিভাগে ২ জন অধ্যাপক, ৪ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৪ জন সহকারী অধ্যাপক ও ৬ জন প্রভাষক থাকবেন। পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক থাকবেন কুড়িজন করে। খুব শিগগিরই আইসিটি বিভাগও তৈরি করা হবে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় একটি দশ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

বর্তমানে কলেজটির ডিগ্রি শাখায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফুলের বাগান, পিচঢালা সংযোগ সড়ক, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য মিলে এক নয়ানাভিরাম ক্যাম্পাস। নিয়ন আলোয় রাতের ক্যাম্পাস আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে।

কলেজটিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র শিল্প নির্দেশক ও চিত্রশিল্পী উত্তম গুহ। উত্তম গুহ বলেন, ১৯ নভেম্বর ২০১৬; এক ঐতিহাসিক দিন পূর্ববঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠ তথা বাঙালি জাতিসত্তার জন্য। সেদিন ধর্মপুরস্থ ডিগ্রি শাখায় স্থাপন করা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, যাতে নির্মাণ করেছি ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের একটি আবহ, যা শিক্ষার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেবে বাঙালির রক্তঝরা সংগ্রাম, স্বাধীনতার কথা আর আহ্বান জানাবে সে স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার কথা এবং হৃদয়ে ধারণ করবে বাংলার ভাষা-সংগ্রাম- স্বাধীনতা- বঙ্গবন্ধুকে, এর অবগুণ্ঠন উন্মোচিত হবে সবার একাত্মতায়।

কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ১০ লাখ ৫০০ টাকা ব্যয়ে ম্যুরাল তৈরি করা হয়। এর মূল বেদি ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থ। ৪টি স্তম্ভে এর উচ্চতা ৩৬ ফুট। ম্যুরালের ৩ পাশের সিঁড়ির ফাঁকা অংশে জাতীয় পতাকার আদলে সবুজ পাতার ঘাস এবং লাল পাতার গাছ রোপণ করা হয়েছে।

স্থাপত্য নকশা ম্যুরাল ও টেরাকোটা নির্মাণ শিল্পী উত্তম গুহ আরও জানান, ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ স্মারক ম্যুরালে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ম্যুরালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ভাষা আন্দোলনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ ৫ শহীদের প্রতিকৃতি অঙ্কিত হয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুর রশীদ জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে শিক্ষার্থীসহ নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ স্মারক ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। এই ম্যুরালটি নির্মাণের পর কলেজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে বেসরকারি টেলিভিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের কুমিল্লা প্রতিনিধি তানভীর খন্দকার দিপু বলেন, উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণ, মাতৃভাষা বাংলা দাবি আদায়ের আন্দোলনের প্রথম প্রস্তাব উত্থাপনকারী ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে শুরু করে বর্তমানে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী আসিফ আকবর কিংবা অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমের মতো হাজারো কৃতী মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ।

শুধু পড়াশোনা নয়, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ঐতিহ্য সারা দেশ জুড়ে। আন্ত কলেজ ক্রিকেট ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ কিংবা বিতর্ক প্রতিযোগিতা, এমন অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবে এই কলেজ কখনোই পিছপা হয়নি। সমৃদ্ধ ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও সক্রিয়ভাবে সৃজনশীল করেছে এখানকার শিক্ষার্থীদের।

এই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে কলেজটির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিবুবুল হক ছোটন বলেন, অনেক তাজা স্মৃতি এ কলেজ নিয়ে। এ কলেজ আমাদের দ্বীপান্বিত জীবনের অংশীদার। এখানে আমি পেয়েছি প্রায় দেড় শতাধিক সহপাঠী ও শতাধিক প্রাজ্ঞ শিক্ষক। মূলত শিক্ষকদের সাহচর্য ছিল আমাদের জীবন বদলে দেওয়ার মহৌষধ। আমার ভাবতে ভালো লাগে উনিশ-বিশ শতকের সন্ধিক্ষণে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যায়তন অনেক বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, মুক্তিসংগ্রামী, ভাষাবিদ, উচ্চপর্যায়ের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তার জন্ম দিয়েছে। বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বিকাশের ক্ষেত্র এ কলেজ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরপরই এ কলেজ ছড়িয়েছে তার আলো, সে আলোয় আলোকিত হয়েছে এ সমতটের জনপদ তথা বিশ্বমণ্ডল।

কলেজটির সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে এই কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুবাইদা নূর খান বলেন, আব্বার মুখে গর্বের সাথে উচ্চারিত হতো এন. জি রয়, লায়লা নূর, আমির আলী চৌধুরী প্রমুখ শিক্ষকদের নাম। আব্বা ছিলেন ৬০-এর দশকে দক্ষিণ বাংলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ, কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। আব্বা পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। আর আমি যখন ১৯৯১ সালে এসএসসি পাস করলাম, স্বভাবতই সচেতন পিতামাতা যেভাবে ভাবেন সেভাবেই তাদের প্রথম সন্তানের কলেজ ভর্তি নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা এমনকি সিদ্ধান্তহীনতায় তাঁরা ভুগছিলেন। কারণ, মাত্র এক বছর আগে ১৯৯০ সালে কলেজে কো-এডুকেশন চালু হয়েছিল। সম্পূর্ণ মেয়েদের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ছেলেদের সঙ্গে পড়ার বিষয়টা উনাদের ভাবিত করেছিল। যা-ই হোক, স্বপ্ন ছিল আব্বার কলেজে পড়ব, ভর্তি হলাম; কৃতিত্বের সঙ্গে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করলাম। মনে পড়ে, এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন পদার্থবিদ্যা পরীক্ষার মিনিট দশেক আগে পেছনে তাকিয়েছিলাম বলে হল পর্যবেক্ষক খাতা নিয়ে যান। আমাদের সময়ে পরীক্ষার কেন্দ্র আমাদের কলেজেই ছিল এবং আমাদের শিক্ষকরাই পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। সেই খাতা কিন্তু আমাকে আর দেওয়া হয়নি। কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করতেন- এই ঘটনাটি তার সামান্য একটা উদাহরণ। আজ আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক। যেখানে আমি ত্রিশ বছর পূর্বে পাঠ গ্রহণ করতাম, আজ সেই প্রতিষ্ঠানে আমি পাঠদান করি। নিশ্চিতভাবেই অদ্ভুত এক মিশ্র অনুভূতি। আমার ছোট দুই বোন- একজন প্রকৌশলী এবং অপরজন চিকিৎসক- তারাও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিল। এ রকম বহু প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানের নিবিড় সাহচর্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। দেশে-বিদেশে উজ্জ্বল ভূমিকা এবং অবদান রেখে চলেছেন। এই কলেজের মাঠ, জামতলা, মেয়েদের কমনরুম, পুরনো ক্লাসরুম- আমার আবেগের কুঁড়েঘরে মাঝে মাঝেই কড়া নাড়ে। আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। প্রাক্তন শিক্ষাগুরুদের ছায়া অনুভব করি; দায়িত্ব পালনে নিজেকে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধতায় আবদ্ধ করার শক্তি অনুভব করি।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। গত ১২৪ বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিক বিকাশ এবং মুক্তিসংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসের ধারক ও বাহক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খানের সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও গতিশীল নেতৃত্বে এবং উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মৃণাল কান্তি গোস্বামীর সার্বিক সহযোগিতায় কলেজে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছে। একসময় কলেজে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকত। স্যারের মেধা ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপের ফলে জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। ডিগ্রি শাখার খেলার মাঠটি জলাবদ্ধতার কারণে খেলাধুলার অনুপযোগী ছিল। মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারের সার্বিক দিক নির্দেশনা ও অধ্যক্ষ স্যারের প্রচেষ্টায় মাটি ভরাট করে মাঠটিকে বর্তমানে খেলার উপযোগী করা হয়েছে। এ সময়ে কলেজে একটি জুলজি মিউজিয়াম স্থাপিত হয়েছে। ডিগ্রি শাখার গ্রন্থাগারটি আধুনিকীকরণ হয়েছে এবং ডিগ্রি শাখায় একটি দৃষ্টিনন্দন ডে কেয়ার সেন্টার নির্মিত হয়েছে। স্যারের গতিশীল নেতৃত্বে কলেজটি প্রাতিষ্ঠানিক, একাডেমিক ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। অধ্যক্ষ মহোদয়ের সততা, স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক জবাবদিহিতার ফলস্বরূপ মাউশি কুমিল্লা অঞ্চল কর্তৃক বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলে শ্রেষ্ঠ কলেজের স্বীকৃতি লাভ করেছে। গত বছর জাতীয় পর্যায়ে অধ্যক্ষ স্যার প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে জাতীয় পর্যায়ে কলেজটি গত দুই বছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। একাডেমিক কাউন্সিল ও শিক্ষক পরিষদের সভায় সব সদস্যের সম্মতির ভিত্তিতে অধ্যক্ষ মহোদয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বর্তমানে অধ্যক্ষ মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে কলেজের ডিগ্রি শাখার কলা ভবনের সামনের দেয়াল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। অধ্যক্ষ স্যারের চৌকস নেতৃত্বে আগামীতে কলেজে আরও প্রাতিষ্ঠানিক ও একাডেমিক উন্নয়ন সাধিত হবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কলেজটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

কলেজটির শিক্ষক পরিষদের সাবেক সম্পাদক সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন বলেন, পরিপূর্ণ ক্যাম্পাসে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ৫৪তম অধ্যক্ষ হলেন অধ্যাপক ড. আবু জাফর খান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিষয়ে ১ম শ্রেণীতে সম্মান ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেছেন পি.এইচ.ডি ডিগ্রিও। অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি কলেজে সূচনা করেছেন উন্নয়ন-অগ্রগতির নবধারা। প্রশাসনিক, অবকাঠামোগত, একাডেমিক প্রভৃতিক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন তিনি ।

একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয়, নিবেদিতপ্রাণ ও মেধাবী শিক্ষাবিদ এবং একজন চৌকস প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ ও জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন। সারা দেশের ১৫০০০ বি.সি.এস (শিক্ষা ক্যাডার) কর্মকর্তাদের সংগঠনের নির্বাচিত সহ-সভাপতি তিনি। কুমিল্লা গণিত ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরে।

অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের পর কলেজে সূচনা করেছেন উন্নয়ন-অগ্রগতির নবধারা। প্রশাসনিক, অবকাঠামোগত, একাডেমিক প্রভৃতিক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।

কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবু জাফর খান। তিনি ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট কলেজটির অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গণিতের এই শিক্ষক ২০০১ সাল থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। মাঝে দুই বছর কুমিল্লা মহিলা কলেজে ছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখার অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেন। এখানে একটি বিশ্বমানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গ্রন্থাগার তৈরি করেছেন। যেখানে ৬০ হাজার বই রয়েছে। কলেজে প্রাণীবিদ্যা জাদুঘর করেছেন। কলেজের একমাত্র খেলার মাঠটি বদ্ধ ডোবায় পরিণত হয়েছিল। সেই বদ্ধ ডোবা পরিষ্কার করে মাটি ভরাট করেছেন। এখন সেই মাঠে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেলাধুলা করে। শুধু ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়, কলেজের সব ছাত্রাবাস-ছাত্রীনিবাসের উন্নয়ন করেন।

অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি মাত্র। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়, আমার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মনোন্নয়ন। যদি বলি সর্বশেষ প্রাণীবিদ্যা বিভাগ থেকে ৯৩ জন স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়েছে। সেখানে ৬৩ জন প্রথম শ্রেণি অর্জন করেছে। এমন ফলাফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যারপরনাই আনন্দিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির এমন সাফল্য কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমার সহকর্মী, শিক্ষার্থী এবং কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার ভূমিকা রয়েছে। তবে ভিক্টোরিয়া কলেজের এমন অগ্রগ্রতির নেপথ্য আমাদের সবাইকে যিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন তিনি আমাদের সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। উনার সঠিক নির্দেশনায় ঐতিহ্যের এই কলেজটি আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে এই জনপদে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *