সুলতানি আমলের নিদের্শন শংকরপাশা শাহী মসজিদ


ইত্তেহাদ নিউজ,হবিগঞ্জ : ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী উচাইল শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ। এখনও এর সৌন্দর্য্যে বিন্দুমাত্রও ভাটা পড়েনি। বরং ৭০০ বছর পড়ে এসে দিনে দিনে যেন এর সৌন্দর্য্য আরও বাড়ছে। ক্রমান্বয়েই মসজিদটির প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। প্রায় প্রতি দিনই অনেক দর্শনার্থীরা এটি দেখতে যাচ্ছেন। মসজিদের দেয়ালের অধিকাংশ স্থানই আরবির পাশাপাশি সংস্কৃত ভাষায় রয়েছে নানা লেখা। এছাড়া মসজিদটির স্থাপত্যকলা নজর কাড়বে সবার।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামের অংশ শংকরপাশায় এ শাহী মসজিদটি প্রতিষ্ঠা হয় ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম জাগরণকালে সুলতানি আমলে। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ মজলিশ আমিন ১৫১৩ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। ছোট একটি টিলার উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদটির ১টি বড় ও ৩টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। নানা কারুকাজে সাজানো আছে পুরো দেয়াল।
স্থাপন করা হয়েছে শিলালিপি ও পোড়ামাটির অলংকরণ। এটি একটি এক চালা ভবন। মসজিদটিতে মোট ১৫টি দরজা ও জানালা রয়েছে যা পরস্পর সমান আকৃতির প্রায়। পূর্ব-উত্তর-দক্ষিণ-এই তিন দিকের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ ফুট এবং পশ্চিমেরটি প্রায় দশ ফুট। এতে মোট ছয়টি কারুকার্য শোভিত স্তম্ভ আছে প্রধান কক্ষের চারকোণে ও বারান্দার দুই কোণে। উপরের ছাদ আর প্রধান প্রাচীরের কার্নিশ বাঁকানোভাবে নির্মিত।
মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে একটি বড় দীঘি রয়েছে কালের বিবর্তনে এক সময় মসজিদ সংলগ্ন এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়ে জঙ্গলবেষ্টিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ওই এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠলে জঙ্গলে আবাদ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে শাহ মজলিশ আমিনে মাজার ও মসজিদটি। ফলে মসজিদটিকে লোকজন বলে থাকেন উচাইল শঙ্করপাশা শাহী গায়েবি মসজিদ।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বলেন, উচাইল শংকরপাশা মসজিদটি হবিগঞ্জ জেলার একটি অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই মসজিদটি সংরক্ষণ করার জন্য ইতিমধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। যেহেতু আমাদের মুসল্লীদের নামাজের জন্য ওযুখানা করা হয়েছে। গেটের কাজ করা হয়েছে। আরও কিছু সংস্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে পত্র প্রেরণ করেছি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি কিছু বরাদ্দ ও কারিগরি সহযোগিতা পাওয়া গেলে এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য ভাল কিছু করা যাবে।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জানান, ইদানীং সরকারি অনুদান ও স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগীতায় মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকল্পে উন্নয়নকাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ঐতিহাসিক মসজিদটি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। তাই তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও এখানে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন।’
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার বিকালে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোছা. জিলুফা সুলতানা কয়েক জন সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রাচীন এই মসজিদ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মসজিদ কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে মসজিদের সংযোগ সড়ক উন্নয়ন ও দর্শনার্থীদের জন্য ওয়াশরুম তৈরি করার ব্যাপারে তার সহযোগিতার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এজন্য তিনি মসজিদ কমিটির পক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসক প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিহাসখ্যাত এই মসজিদের প্রয়োজনীয় সংস্কার, উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির ব্যাপারে তার সহায়তার আশ্বাস দেন।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়