অনুসন্ধানী সংবাদ

বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কী বার্তা দিচ্ছে?

b9ba5270 176b 11ef 9e39 410e2d585bfa.jpg
print news

বিবিসি : বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে দেশটিতে।গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করা ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণ দেখিয়ে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

তবে নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় সাবেক এ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, শাস্তি পাওয়ার মতো কোন অপরাধ তিনি করেননি।সেনাপ্রধানের পদ থেকে ২০২১ সালের ২৪শে জুন অবসরে যান জেনারেল আজিজ। তিনি দায়িত্বে থাকাকালেই তার বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ ওঠে।

কাতার ভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যম তার এবং পরিবারের সদস্যদের অতীত এবং বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং নানা ধরনের দুর্নীতির বিষয় নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করে।

c8485da0 176b 11ef baa7 25d483663b8e.jpg

যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোর সাথে তাদের নিবিড় সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।তখন সরকার এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগগুলোকে “মিথ্যা ও বানোয়াট” বলে দাবি করা হয়েছিল।তবে, জেনারেল আজিজ এবং একাধিক বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে আল জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রের “ধারবাহিকতা” বা “ফলাফল” বলে মনে করেন।কিন্তু, এতোদিন পরে এসে, যখন মি. আজিজের অবসরের বয়সও তিন বছর হতে চললো এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক নির্বাচন ও গণতন্ত্র ইস্যুতে সম্পর্কের ওঠা-নামাই আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠেছিল, তখন নতুন ঘোষণাটির তাৎপর্য কী?মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্ট ৭০৩১(সি) প্রয়োগ করা হয়েছে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের ক্ষেত্রে।দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত বিদেশি নাগরিকদের বেলায় এটি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকলেই কেবল অ্যাক্ট ব্যবহার করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সাড়ে তিন বছর পর যখন এই সমস্ত তথ্যকে ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নিচ্ছে, দেখা যাচ্ছে এগুলো আসলে সত্যিই ছিল।””আগে যারা নাকচ করেছিলেন তারা এখন কী বলবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়,” যোগ করেন অধ্যাপক রীয়াজ।যারা এখন দুর্নীতিতে যুক্ত আছেন তাদের জন্য একে একটা বার্তা বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।”পরিস্থিতিটা এই রকম যে, যে কোনো সময় তারা বিপদগ্রস্ত হতে পারেন। যেভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, একসময় তাদেরকে তার জন্য পে (মূল্য দিতে হবে) করতে হবে।”বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, ”অন্য কারো যদি কোনো সাবস্টেনটিভ ম্যাটেরিয়াল (উপযুক্ত প্রমাণ) থাকে তাহলে এই ধরনের একটা কনসিকোয়েন্স ফেইস (পরিণতির মুখোমুখি) করার আশঙ্কা তৈরি হলো।”

d547d990 176b 11ef baa7 25d483663b8e.jpg

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কী ধারণা মিলছে?

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে, আর্থিক দুর্নীতির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহের ক্ষতির কথাও বলা হয়েছে।বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মানবাধিকার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল।অবাধ, নিরপেক্ষ ও নির্বিঘ্ন নির্বাচনের স্বার্থে বিশেষ ভিসানীতিও ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।তবে, সম্প্রতি সম্পর্কে আস্থার সংকট কাটিয়ে “একটুখানি সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল বা এরকম একটা ধারণা তৈরি হচ্ছিল” বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিক হুমায়ূন কবীর।

সাবেক সেনাপ্রধানের খবরটা সেই প্রেক্ষাপটে “একটা প্রশ্নের উদ্রেক করলো” বলেও মন্তব্য তার।অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, নির্বাচনের সময় চাপ দিলেও যুক্তরাষ্ট্র কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তাই ক্ষমতাসীনদের তরফে দাবি করা হচ্ছিল, সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসছে।কিন্তু “টানাপোড়েনের অবসান ঘটেছিল বলে যে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল, তা যে ঠিক নয়, সেটিই বোঝা গেল নতুন ঘোষণায়।”দু’জন বিশ্লেষকই মনে করেন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্রের বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি।অধ্যাপক রীয়াজের মতে, আমেরিকা একটা এনগেজমেন্ট পলিসির মধ্যে আছে।”ফলে, তারা একেবারে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে অগ্রসর হবে তা নয়। বাংলাদেশেরও যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে চলার উপায় নেই।”আর মি. কবীর বলছেন, “মৌলিক জায়গাগুলোতে যতখানি সঠিক অবস্থান বজায় রাখা যায় ততই ভালো।”

সরকারকে ‘বিব্রত’ করাই উদ্দেশ্য?

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদ।তিনি বলেন, “আমার কাছে মনে হয়, যেহেতু বর্তমান সরকারের সময় আমি সেনাপ্রধান ছিলাম। সরকারকেও হয়তো কিছুটা বিব্রত বা হেয় করার জন্য এই রেস্ট্রিকশনটা হতে পারে।”

সরকারের জন্য এটা বিব্রতকর হওয়ার কথা বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজও।”কিন্তু সরকার এই বিব্রত হওয়াকে খুব যে গুরুত্ব দেয় তা তো মনে হয় না,” বলেন মি. রীয়াজ।

তিনি যোগ করেন, “সরকারের যে ম্যান্ডেট থাকা উচিত ছিল সেই ম্যান্ডেটটা নাই। ম্যান্ডেটটা নাই বলে চাপটা দেয়া হচ্ছে।”বাংলাদেশ সরকারের দু’জন মন্ত্রী অবশ্য সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে সরকারের “বিষয়” হিসেবে দেখতে নারাজ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজিজের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ব্যক্তিগত।”যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেশেই ব্যক্তি পর্যায়ে এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে,” যোগ করেন তিনি।

আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটি সেনাবাহিনীর বিষয়। আমি এ মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না।’নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে আগেই অবহিত করা হয়েছিল বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।অবশ্য, অধ্যাপক আলী রীয়াজ আগেই বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “তিনি (মি. আজিজ) সরকারের সঙ্গে যুক্ত না, আমাদের কী করার আছে? এরকম একটি ভঙ্গি সরকার গ্রহণ করবে।”সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর বলেন, “যেহেতু তিনি রিটায়ার্ড সেহেতু হয়তো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খুব সমস্যা এখন হবে না।

0f405020 176a 11ef 80aa 699d54c46324.jpg

মার্কিন বিবৃতির ভাষ্য ও প্রতিক্রিয়া

সোমবার (স্থানীয় সময়) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের তরফে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, তার (সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ) তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারিয়েছে।

আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার দাবি, ব্যক্তি স্বার্থের বিনিময়ে সরকারি নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।আরো বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর ঠিকাদারি অবৈধভাবে পাইয়ে দেয়ার জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগসাজশ করেছেন মি. আজিজ।তাছাড়া, তার ভাইয়ের অপরাধ সত্ত্বেও তাকে বাঁচাতে দুর্নীতির আশ্রয় নেন বলে দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। যার ধারাবাহিকতায় আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হলো।

তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ মঙ্গলবার দুপুরে তার বাসভবনে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করিনি। আমি মনে করি এটা (মার্কিন নিষেধাজ্ঞা) সম্পূর্ণভাবে আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।

বাংলাদেশের সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, “বাহিনীর ভাবমূর্তির ব্যাপারে একটা কথাই বলবো, সবসময় একটা বিষয় আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বিজিবি, আর্মি প্রেস্টিজিয়াস ইনস্টিটিউশন। সবসময় সতর্ক ছিলাম, আমার কোনো কর্মকাণ্ডে যেন এই দুটি বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন না হয়।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *