অনুসন্ধানী সংবাদ

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী

un
print news

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠিয়েছে৷ ডিডাব্লিউ, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুং এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷ জাতিসংঘ দৃশ্যত বিষয়টি উপেক্ষা করছে৷

প্রথমবার দেখলে এটিকে এক নিরীহ ছবি মনে হবে: ২০২২ সালের এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে এক ডজন নারী ও পুরুষ একত্র হয়ে সেলফির জন্য পোজ দিয়েছেন৷ তাদের সবার পরনে সামরিক পোশাক – তাদের ব্যাজ তাদের মিশরীয়, ইন্দোনেশীয় ও বাংলাদেশি কর্মকর্তা হিসেবে তুলে ধরছে৷ তাদের একজন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীর হালকা নীল বিশেষ টুপি পরে আছেন৷ দলটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে জাতিসংঘের মনুস্কো মিশনে তাদের মেয়াদের জন্য সদ্যই ইন্ডাকশন কোর্স সম্পন্ন করেছে৷

নিরীহই বটে, তবে ছবির মাঝখানে থাকা চশমা পরা টাক মাথার মানুষটির ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন৷ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে এক সামরিক সূত্র ছবিটি সংগ্রহ করে ডিডাব্লিউ, সুইডেনভিত্তিক অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজ এবং জার্মান সংবাদপত্র স্যুডডয়চে সাইটুংকে দিয়েছে৷

জাতিসংঘের মিশনে মোতায়েনের আগে তিনি বাংলাদেশের অভিজাত বাহিনী ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা ব়্যাব এর ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের উপপরিচালক ছিলেন৷

মূলত বাংলাদেশ পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ২০০৪ সালে জঙ্গিবাদ এবং সহিংস অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের সহায়তায় বাহিনীটি গড়ে তোলা হয়৷ কিন্তু বর্বর কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে এটি দ্রুতই বিস্তৃত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হয়৷ ফলে এই বাহিনীকে একসময় সহায়তা করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে সেটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷

গত বছর প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ডিডাব্লিউ এবং নেত্র নিউজ উন্মোচন করে যে ব়্যাব নির্যাতন, হত্যা এবং অপহরণের সঙ্গে যুক্ত এবং এসব অপরাধ ঢাকতে বাহিনীটি অনেককিছু করে৷ তাদের টার্গেট: সন্দেহভাজন অপরাধী, বিরোধী দলীয় কর্মী, এবং মানবাধিকার রক্ষকরা৷

ব়্যাবের সদস্যরা আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ের সহায়তায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে জানিয়েছেন দুইজন হুইসেলব্লোয়ার৷ সরকার অবশ্য এই অভিযোগ ‘‘ভিত্তিহীন এবং অসত্য” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে৷

69127283 906

ব়্যাব সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে

সেই উন্মোচনের এক বছর পর ডিডাব্লিউ, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুংয়ের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে কুখ্যাত বাহিনীটির সদস্যদের আপাতদৃষ্টিতে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হচ্ছে: এবং একটু আগে উল্লেখ করা ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের উপপ্রধানই একমাত্র ব্যক্তি নন যাকে বাহিনীটি থেকে শান্তিরক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে৷ আমাদের একাধিক সূত্র বাহিনীটিকে ‘‘ডেথ স্কোয়াড’’ আখ্যা দিয়েছে৷

বেশ কয়েকমাস ধরে ডিডাব্লিউ এবং এর সহযোগীরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সামরিক এবং জাতিসংঘের কয়েকটি সূত্রের সাক্ষাৎকার নিয়েছে৷ পাশাপাশি বিভিন্ন গোপন সামরিক নথি এবং মোতায়েন তালিকা যাচাইবাছাই করেছে এবং অনেক পরিশ্রমের পর ফ্লিকার, লিংকডইন ও ফেসবুকে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে সনাক্ত করেছে৷

এক ব্যক্তির জাতিসংঘে মোতায়েনের বিষয়টি তার প্রতিদিনের দৌড়ানোর রুট ধরে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ তিনি একটি জগিং অ্যাপে সেই তথ্য আপলোড করতেন৷ এই উৎসাহী দৌড়বিদ মাসের পর মাস সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাজধানী বাংজিতে দৌড়েছেন৷ জাতিসংঘের মিনুস্কা মিশন সেখানে৷ আরেক ছবিতে তিনি ব়্যাব সদরদপ্তরের সামনে সেলফির জন্য পোজ দিয়েছেন৷

শান্তিরক্ষীদের মাঝে টর্চার সেল চালানো দুই উপপরিচালক

আমরা আমাদের অনুসন্ধানে দেখেছি একশোর বেশি ব়্যাব সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছেন, এবং তাদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন গত পাঁচবছরে গিয়েছেন৷
কাধিক সূত্র অনুযায়ী, ব়্যাবের এই ইউনিটটি বাংলাদেশ জুড়ে টর্চার সেলের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে৷ এসব সেলের কিছু সেফ হাউস রয়েছে, অন্যগুলো ব়্যাবের কম্পাউন্ডে আড়ালে রয়েছে৷কাধিক সূত্র অনুযায়ী, ব়্যাবের এই ইউনিটটি বাংলাদেশ জুড়ে টর্চার সেলের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে৷ এসব সেলের কিছু সেফ হাউস রয়েছে, অন্যগুলো ব়্যাবের কম্পাউন্ডে আড়ালে রয়েছে৷

যদিও আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ নেই যে প্রত্যেক সদস্যই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের অন্তত তিনজন — নাঈম এ., হাসান টি. এবং মাসুদ আর. — ব়্যাবের কুখ্যাত ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে কাজ করেছেন৷ তাদের দুজন সেখানে উপপরিচালক ছিলেন৷ একাধিক সূত্র অনুযায়ী, ব়্যাবের এই ইউনিটটি বাংলাদেশ জুড়ে টর্চার সেলের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে৷ এসব সেলের কিছু সেফ হাউস রয়েছে, অন্যগুলো ব়্যাবের কম্পাউন্ডে আড়ালে রয়েছে৷ ব়্যাবের হাত থেকে বেঁচে ফেরা একাধিক ব্যক্তি এবং সামরিক সূত্র ডিডাব্লিউ এবং নেত্র নিউজকে এসব সেলে মারধর, ভয় দেখাতে হত্যা করার অভিনয়, ওয়াটারবোর্ডিং এবং বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন৷

‘‘সহজলভ্য সব টুলই আমাদের রয়েছে,’’ ব়্যাবের সাবেক এক কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেন৷ তিনি সেখানে যেসব বর্বর ঘটনা দেখেছেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে একজন বন্দিকে কন্টেইনারের মধ্যে ঢুকিয়ে সেটির নিচে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া৷

‘‘এক পর্যায়ে ভেতরের তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং সেই বন্দি মুখ খুলতে বাধ্য হন,’’ বলেন তিনি৷আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে টর্চার সেলে ‘‘বেসামরিক নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য বের করা হয়৷’’

একটি সূত্র ব়্যাব, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুংকে জানিয়েছেন যে এই দুই উপপরিচালক নির্যাতন এবং হত্যার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷

যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি, তবে একাধিক অন্যান্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে কমান্ড দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উপপরিচালকরা টর্চার সেলে যা কিছু ঘটছে তা অনুমোদন করে থাকতে পারেন কিংবা অন্তত জানতেন সেখানে কী হচ্ছে৷

কিন্তু তাসত্ত্বেও তাদেরকে ঝুঁকিতে থাকা বিভিন্ন বেসামরিক সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে শান্তিরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তিরক্ষা বাহিনী তৈরির ধারনার জন্ম হয়৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো থেকে সেনা এবং পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এই বাহিনী তৈরি করা হয়৷ বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যর্থ হলে এবং দেশগুলোতে গভীর সংকট সৃষ্টি হলে সেসব দেশে শান্তিরক্ষায় এই বাহিনীকে পাঠায় নিরাপত্তা পরিষদ৷

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন রয়েছে৷ সংঘাত এবং সংকট নিরসনে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো থেকে সাউথ সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কসভো কিংবা কাশ্মীর অবধি নানা অঞ্চলে তাদের দেখা মেলে৷

শান্তিরক্ষার আদর্শ অনেক উঁচু হলেও বিগত বছরগুলোতে একক সেনা থেকে পুরা কন্টিনজেন্ট অবধি নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে৷ জাতিসংঘ দ্রুত সেসবের নিন্দাও জানিয়েছে৷ সমালোচকরা বলছেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ফলপ্রসু হচ্ছে না, যদিও যারা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের পক্ষে, তারা বলছেন, অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছে এই বাহিনী৷

২০১২ সালে বেশ কয়েকটি যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা শিরোনাম তৈরি করে৷ বিশেষ করে হাইতিতে শিশুদের ঘটনার পর জাতিসংঘ তার কর্মীদের জন্য নতুন মানবাধিকার নীতি ঘোষণা করে৷

শান্তিরক্ষীদের যাচাইয়ের দায়িত্বে ‘এবিউসিভ সরকার’

শান্তিরক্ষায় সেনা পাঠানো দেশগুলো সাধারণ ফোর্স কমান্ডার এবং তাদের সহকারীদের বাদে অন্যান্য সেনা সদস্যদের বাছাই এবং যাচাইয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকে৷ এসব দেশকে প্রত্যেক সেনার জন্য প্রত্যয়ন দিতে হয় যে, তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেননি বা এমন কোনো অভিযোগও তার বিরুদ্ধে নেই৷

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর অর্থ হচ্ছে ‘‘তারা একটি এবিউসিভ সরকারকে তার কর্মকর্তারা এবিউসিভ কিনা তা নির্ধারণ করতে বলছে,’’ বলেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি৷

বাংলাদেশ সরকার, গাঙ্গুলি ব্যাখ্যা করেন, ‘‘মনে হয় বিশ্বাস করে না যে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের বিচার করার বা জবাবদিহির আওতায় আনার দরকার আছে৷’’ এখন অবধি অল্প কয়েকজন ব়্যাব সদস্য বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন৷

এবং একারণেই তিনিসহ দেশি বিদেশি আরো কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ব়্যাবকে পুরোপুরি নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছে৷

শুধুমাত্র তারাই এই বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন এমন নয়: জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত জাতিসংঘের ‘কমিটি এগেনস্ট টর্চার’ ২০১৯ সালের আগস্টে বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷

এর লেখকরা ‘‘অসংখ্য প্রতিবেদনে’’ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যেখানে ব়্যাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘‘নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, গোপনে আটক, গুম এবং তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে৷’’

69127303 906

‘গভীর উদ্বেগ’

প্রতিবেদনের লেখকদের একজন ইয়েন্স মডভিগ৷ এই মেডিকেল ডক্টর নির্যাতনবিরোধী ডেনিশ ইন্সটিটিউট ডিগনিটি পরিচালনা করেন৷ কোপেনহেগেনের এক সাধাসিধে অফিস ব্লকে তার কার্যালয় অবস্থিত৷

প্রতিষ্ঠানটির ছোট্ট রান্নাঘরে কফি তৈরি করতে করতে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ‘গভীর উদ্বেগের’ কথা স্মরণ করেন৷ তিনি জানান যে, এই উক্তিটি তারা হালকাভাবে করেননি৷মডভিগ বলেন, ‘‘ব়্যাবের সাবেক এবং বর্তমান সদস্যদেরকে শান্তিরক্ষা মিশনে যেতে দেয়া উচিত হবে না বলে সুপারিশ করেছিল কমিটি৷’’তাসত্ত্বেও আমাদের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে কিছুই হয়নি৷

ডিডাব্লিউ, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুং একাধিকবার এই বিষয়ে ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে জাতিসংঘের ‘‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্স’’ এর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে৷ কিন্তু বিভাগটি তাতে রাজি হয়নি৷

তার বদলে জাতিসংঘ আমাদের অনুসন্ধানের ব্যাপারে লিখিত বক্তব্য দিতে রাজি হয়েছে৷ এক মুখপাত্র লিখেছেন, ‘‘প্রত্যেক ব্যক্তিকে যাচাইবাছাইয়ের জন্য আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সম্পদ নেই৷ তবে সেনা এবং পুলিশ সদস্য সরবরাহকারী দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব সম্পর্কে আমাদের একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতি বলবৎ আছে৷’’

বাংলাদেশেরক্ষেত্রে, সেই মুখপাত্র জানান, ‘‘প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর, সুনির্দিষ্টভাবে ব়্যাব সদস্যদের মাধ্যমে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগগুলো নিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা দ্বিপাক্ষিকভাবে দেশটির জাতীয় কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত থেকে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে৷’’

জাতিসংঘ কি ব্ল্যাকমেইলের কাছে অসহায়?

আমরা অবশ্য জাতিসংঘের একজনকে খুঁজে পেয়েছি যিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়েছেন৷ অ্যান্ড্রু গিলমোর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক সহকারী মহাসচিব৷ বর্তমানে তিনি বার্লিনে ব্যর্গহফ ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে রয়েছেন৷ এটি বিশ্বব্যাপী শান্তির পক্ষে প্রচারণা চালায়৷ দীর্ঘদিন জাতিসংঘে কাজ করা এই কূটনীতিক জানান যে, তিনি সাক্ষাৎকারের বিষয় এবং মুডের উপর ভিত্তি করে কোন জ্যাকেট পরবেন তা নির্ধারণ করেন৷শান্তিরক্ষা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য তিনি বিষন্ন নীল বেছে নিয়েছেন৷

আমি যদি এখনো জাতিসংঘে থাকতাম, তিনি বলেন, ‘‘তাহলে সম্ভবত এটা বলতে এত স্পষ্টভাষী হতে পারতাম না যে, আমরা কিছু সংখ্যক সত্যিই খুব আজেবাজে সেনা পাই এবং কিছু খুব নিষ্ঠুর সেনাও৷’’

তিনি এটাও জানান যে বাংলাদেশ কোনো অনন্য রাষ্ট্র নয়৷ গিলমোর বলেন, ‘‘এটাই প্রথম নয় যে সদস্য রাষ্ট্রগুলো দুর্বল মানবাধিকার রেকর্ড থাকা মানুষদেরকে জাতিসংঘে তাদের ব্যাটেলিয়নে যুক্ত করেছে৷”

কখনো কখনো, তিনি বলেন, ‘‘এমনও হতে পারে যে পুরো কন্টিনজেন্ট কোনো মামলায় জড়িয়েছিল, যেমন তাদের নিজের দেশে সাধারণ মানুষকে দমন, এবং অন্যান্য সময়ে এটা একক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে৷’’তবে তিনি গুরুত্ব দিয়ে জানান যে জাতিসংঘ এধরনের ঘটনা রুখতে বারংবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে৷

তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, যদি জাতিসংঘ দেশগুলোকে অনেক বেশি চাপ দিত তাহলে তারা তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার ঝুঁকি ছিল৷ ‘‘যদি সেই সদস্য দেশের সরকার একটি কন্টিনজেন্ট বা একজন একক ব্যক্তিকে সামনে ঠেলে দেয় তখন কিছু করা বেশ কঠিন ছিল,’’ যোগ করেন তিনি৷

একবার, তিনি বলেন, ‘‘একটি দেশ যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল আক্ষরিক অর্থেই বলেছে, ঠিক আছে, আমরা একসঙ্গে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেবো৷ এবং তখন সেই সময়কার জাতিসংঘের মহাসচিবকে সেই দেশে গিয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে মূলত ক্ষমা চাইতে হয়েছিল৷’’‘‘অন্যথায়, জাতিসংঘের চারটি শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ভেঙে পড়তো,’’ বলেন তিনি৷

জাতিসংঘের একটি সূত্র এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন: সামান্য সমালোচনাতেও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দেন৷ বাংলাদেশ জাতিসংঘে সেনা পাঠানো অন্যতম একটি রাষ্ট্র৷ চলতি বছরের মার্চ অবধি প্রায় ছয় হাজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মোতায়েন ছিলেন৷

তবে এটা নিশ্চিত নয় যে, বাংলাদেশ আসলেই জাতিসংঘের মিশন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবে কিনা৷ কারণ এসব মিশন একক সেনাদের এবং যেসব দেশ তাদের পাঠাচ্ছে সেসবের জন্য লোভনীয় ব্যাপার৷

সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ গত ২৩ বছরে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে৷ মিশনে একজন সেনা সদস্য নিজ দেশে থাকাকালীন সময়ের তুলনায় বেশি বেতন পান৷

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র অবশ্য আন্তর্জাতিক সংগঠনটি দৃশ্যত হুমকির কাছে অসহায় হয়ে পড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে মোতায়েনকৃত ৬৫ হাজার সেনার দশ শতাংশেরও কম সবচেয়ে বড় সেনা সরবরাহকারী দেশ থেকে এসেছেন৷ ফলে একক কোনো সেনা সহায়তা প্রদানকারী দেশ শান্তিরক্ষা কর্মকান্ডের কার্যকারিতা নষ্ট করার জন্য সব সেনা প্রত্যাহারের বিশ্বাসযোগ্য হুমকি দিতে পারে না৷’’

জাতিসংঘের হাত দৃশ্যত বাঁধা

গিলমোর জাতিসংঘের হাত বাঁধা মনে করার একটি কারণও ব্যাখ্যা করেছেন৷ তিনি যখন ‘‘অনেক, অনেক তরুণ’’ ছিলেন, তখন অধিকাংশ শান্তিরক্ষী সুইডেন এবং আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলো থেকে আসতো৷

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে গত শতকের শেষের দশকের শুরুর দিকে শীতল যুদ্ধের যখন ইতি ঘটেছে, তখন মিশনগুলোর ভয়াবহতা দেখে পশ্চিমা সরকারগুলো শান্তিরক্ষা কর্মকাণ্ড থেকে ক্রমশ সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করে৷ তার বদলে তারা অর্থ সহায়তা প্রদান করায় প্রাধান্য দেয়৷

জাতিসংঘে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশের এক রাজনৈতিক সূত্র জানান যে, গণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে সেনাদের রক্তক্ষয় কতটা সহ্য করা যাবে তা বিবেচনায় আনতে হয়৷ যদি জাতিসংঘের মিশনে পাঠানো সেনাদের মরদেহ ফিরতে শুরু করে, তিনি ব্যাখ্যা করেন, তখন সেই সরকারগুলোকে সংসদীয় তদন্তের মুখে পড়তে হয়৷

কিন্তু, তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটি কোনো সমস্যা নয়৷ একইসঙ্গে তিনি স্বীকার করেন যে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন একক সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারের জন্যও নিজেদের কোষাগার সমৃদ্ধ করার লোভনীয় সুযোগ৷

প্রায় ‘কখনোই পর্যাপ্ত’ শান্তিরক্ষী ছিল না

ফলাফল: ‘‘জাতিসংঘে খুব, খুব কম উচ্চপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, পশ্চিমা আদর্শের সেনা কাজ করছেন,” বলেন গিলমোর৷ জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানও তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে৷ বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সেনা সরবরাহকারী প্রথম পাঁচটি দেশ হচ্ছে: নেপাল, ভারত, রুয়ান্ডা, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান৷

‘‘প্রায় কখনোই পর্যাপ্ত সেনা ছিল না,’’ বলেন গিলমোর৷ ‘‘এটা এমন নয় যে জাতিসংঘ বলতে পারে, ঠিক আছে, আমরা এই দলটি নেবো কারণ এই দেশ মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে৷ এবং আমি দুঃখিত, আপনাদেরকে নিতে পারছি না৷’’

জাতিসংঘের ‘‘এমন বাছাইয়ের সুযোগ নেই৷’’

গিলমোর বলেন, ‘‘এমন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে আক্ষরিক অর্থেই শান্তিরক্ষীরা অনুপস্থিত থাকলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী হতে পারতো৷ আর তখন আপনাকে সমন্বয় সাধন করতে হয়, হাজার হাজার লোকের মৃত্যুর চেয়ে দুই তিনটি ‘পচা আপেল’ বা ‘মন্দ লোক’ পাঠানো অপেক্ষাকৃত কম খারাপ বিকল্প মনে হয়৷’’

শ্রীলঙ্কা: ‘ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি’

এই স্বীকারোক্তিকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ মনে করেন ফ্রান্সিস হ্যারিসন৷ তিনি একসময় সাংবাদিক ছিলেন, পরবর্তীতে অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা শুরু করেন৷

শ্রীলঙ্কায় সেনাবাহিনী এবং তামিল টাইগারদের মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার তথ্যপ্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন ছবি আর জবানবন্দি ল্যাপটপে বিভিন্ন রংয়ের ফোল্ডারে জমিয়ে রেখেছেন তিনি৷ এই সংঘাত ২০০৯ সালে এক বিশেষ পরিণতিতে পৌঁছায়৷ দুইপক্ষই ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল, যা জাতিসংঘ বলছে যুদ্ধাপরাধের সমতুল্য হতে পারে৷

হ্যারিসনের অনেক নথিপত্রের মধ্যে একটি কিছুটা অস্বচ্ছ ছবিতে শ্রীলঙ্কার একদল কর্মকর্তাকে দেখা যাচ্ছে যারা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে রঙিন ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে আছেন৷ তাদের সামনে তেরপলের উপরে রাখা আছে বেশ কয়েকটি মরদেহ৷ একজন কর্মকর্তা সেগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন৷৷

তিনি ৫৮ ডিভিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যেটি ‘‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিস্তৃত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে’’ জড়িত বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে৷ গৃহযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেভেন্দ্র সিলভার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷

তার আগে ২০১৯ সালে অবশ্য শ্রীলঙ্কা তাকে সেনাপ্রধান করে৷ এই নিয়ে জাতিসংঘের নিজস্ব মানবাধিকার গ্রুপসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে ভবিষ্যতে শান্তিরক্ষা মিশনে শ্রীলঙ্কার সেনা মোতায়েন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ৷ তবে ‘‘যেখানে এই স্থগিতাদেশের কারণে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ড পরিচালনা ঝুঁকির মুখে পড়বে’’ সেখানে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হবে না বলেও জানায় জাতিসংঘ৷

জাতিসংঘের নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৬৮৭ জন শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছিল শ্রীলঙ্কা৷ সিলভা সেনাপ্রধান হওয়ার এক বছর পরও তারা ৬৬৫ জন সেনা পাঠিয়েছে৷

এই স্থগিতাদেশ, জাতিংঘের শান্তিরক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র লিখেছেন, ‘‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারতো বলে এসব কন্টিনজেন্টের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা হয়, একইসঙ্গে বিদ্যমান মোতায়েনগুলো পর্যালোচনায় রাখা হয়েছিল৷’’

তার এই বক্তব্য অবশ্য আগের বক্তব্যের সঙ্গে মানানসই নয় যেখানে তিনি বলেছেন যে একক কোনো সেনা সহায়তা প্রদানকারী দেশ সেনা প্রত্যাহার করে নিয়ে শান্তিরক্ষা কর্মকান্ডের কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারবে না৷

বেশ কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে, শেভেন্দ্র সিলভার উর্দিতে অনেক মেডেল ঝুলছে, আর অনেকের মাঝে শুধু তার মাথায় জাতিসংঘের গোল টুপি৷

‘‘আপনি কি ধারনা করতে পারেন এটা দেখার পর গৃহযুদ্ধের ভুক্তভোগীদের, লঙ্ঘনের শিকারদের, প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?,” হ্যারিসনের কণ্ঠে স্পষ্টতই রাগ ফুটে উঠেছিল৷ ‘‘এটি ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি, যা বন্ধে কেউই কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷’’

হ্যারিসন শ্রীলঙ্কার একক শান্তিরক্ষীদের সম্পর্কে, যারা সম্ভবত যুদ্ধের সময় নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, জাতিসংঘ এবং অন্যদেরকে কয়েকবছর ধরে সতর্ক করেছিলেন৷ তারপরও তাদের শান্তিরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল৷

২০১৯ সালে তিনি এক সামরিক কর্মকর্তা সম্পর্কে জাতিসংঘকে সতর্ক করেছিলেন, যাকে তখন মালিতে কন্টিনজেন্ট কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে মোতায়েন করা হচ্ছিল৷

কিন্তু জাতিসংঘ মনে হচ্ছে তার সেই সতর্কতা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি৷ এটা আমাদের খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগেনি যে সেই ব্যক্তিকে ২০১৯ সালে আসলেই মালিতে কন্টিনজেন্ট কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল৷ এবং সেটা ঘটেছিল হ্যারিসন সতর্ক করার কিছুদিন পর৷ এক ছবিতে জাতিসংঘের গোল টুপি মাথায় তাকে এক বিমানবন্দরে দেখা যায় যেখানে তার সঙ্গে ছিলেন সেনাপ্রধান শেভেন্দ্র সিলভা৷এবং আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে ২০২১ সালেও তিনি মালিতে দায়িত্ব পালন করেছেন৷হ্যারিসন জানান যে, তার সতর্কবার্তা ‘‘গ্রাহ্য করা হয়নি৷’’

জাতিসংঘের মুখপাত্র ডিডাব্লিউ, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুংকে লিখেছেন যে, তারা এসব অভিযোগ ‘‘গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল৷ কিন্তু তারা সেসময় এমন কোনো তথ্য পাননি যা যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি দেয় যে, সেই ব্যক্তি সম্ভবত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী৷’’

‘বাংলাদেশ কাদের পাঠাচ্ছে তা কেউ পরোয়া করে না’

আমাদের অনুসন্ধান একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে: সেনা বাছাইয়ের বিষয়টি যখন সামনে আসে তখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগ এক কঠিন দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায়৷ এটির হয় এমন সেনাদের মেনে নিতে হয় যারা এটি জানে যে কিছুক্ষেত্রে হয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, অথবা সেনা প্রদানকারী দেশগুলোর সেনা প্রত্যাহারের হুমকির মুখে পড়তে হয়৷ ফলে জাতিসংঘের ভাষায় পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায়দের সুরক্ষা দেয়ার কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিতে এটির কিছু বিষয় থেকে নজর সরিয়ে নিতে হয়৷ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমাদের অনুসন্ধান জানাচ্ছে জাতিসংঘ সম্ভবত নজর সরিয়ে রাখার নীতি নিয়েছে৷

কেউই, পশ্চিম ইউরোপের এক রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছেন, আসলে পরোয়া করে না যে বাংলাদেশ কাদের পাঠাচ্ছে, কারণ জাতিসংঘ মিশনে সেনা ঘাটতি রয়েছে৷ এবং, তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের মতো সামরিকীকৃত দেশগুলোর সেনারা সাধারণত ভালোভাবে প্রশিক্ষিত হয়৷

এই বক্তব্য এটা ব্যাখ্যা করতে পারে যে কেন রাজধানী ঢাকার কাছে জাতিসংঘের প্রশিক্ষণক্ষেত্রে ডয়চে ভেলের সাম্প্রতিক সফরের সময়, যেটি সতর্কতার সঙ্গে সাজানো হয়েছিল, একজন জেনারেল আগে থেকে অনুমোদিত প্রশ্নের উত্তরে জানান যে বাংলাদেশ আসলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষায় অবদান বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে৷

এটা দেখাচ্ছে, তিনি বলেন, ‘‘তারা আমাদের কেমন গুরুত্ব দেয়৷’’ সেই সময় একজন প্রেস কর্মকর্তা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷তারা বলতে তিনি অবশ্যই জাতিসংঘকে বুঝিয়েছেন৷

আমরা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা কর্মকর্তারাসহ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে আমাদের অনুসন্ধান নিয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি৷ জাতিসংঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্স’ গুরুত্ব সহকারে জানিয়েছে যে ‘‘সেনাদের অধিকাংশই ভালো করেন, যদিও তাদের অনেককে প্রতিকূল পরিবেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়৷’

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *