এশিয়া সংবাদ

চির নিদ্রায় শায়িত ইব্রাহিম রাইসি

b2 2405231730
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ককপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসিসহ অন্যান্য নেতা ও কর্মকর্তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা নাগাদ রাইসির লাশ তার জন্মশহর মাশাদে প্রখ্যাত শিয়া নেতা ইমাম রেজার মাজার প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়। এছাড়া নিহত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ অন্যদের লাশ তাদের নিজ নিজ শহরে দাফন করা হয়।

দাফনের আগে তাদের শেষ জানাজায় মানুষের ঢল নামে। অন্তত পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে মানুষের লাইন হয়। এদিন সবাই এসেছিলেন কালো পোশাক পরে। কারও হাতে ফুল। কেউ প্রিয় নেতা রাইসির ছবি নিয়ে রাস্তায় নামেন।
বৃহস্পতিবার সকালে তেহরান থেকে রাইসির লাশ মাশাদে আনা হয়। এ সময় প্রিয় প্রেসিডেন্টের কফিন ছুঁয়ে অনেকে বিলাপ করেন। কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। একজন বলেন, আজ আমরা সবাই রাইসি। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাশাদে রাইসির সর্বশেষ জানাজা হয়। এর আগে প্রয়াত প্রেসিডেন্টের পরিবারের সদস্যরা শহরটিতে আসেন।

রাইসির শেষ জানাজায় বিশ্বের অন্তত ৫০ দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান ও নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কাতারের আমির ও প্রধানমন্ত্রী, তুর্কমেনিস্তানের নেতা, তিউনিসিয়া ও তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, ভারতের উপরাষ্ট্রপতি, ইরাক, পাকিস্তান, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ইরাক, রাশিয়া, আলজিরিয়া, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান ও লেবাননের পার্লামেন্ট প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হামাস, হিজবুল্লাহ ও তালেবানের প্রতিনিধিরাও রাইসির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও এএফপির।
রাইসির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া খামেনির সঙ্গে দেখা করেন। তার সঙ্গে হামাসের অন্যান্য নেতাও ছিলেন। বৈঠকে খামেনি হামাস প্রধানকে বলেন, ইহুদিবাদীদের ধ্বংস করার বেহেশতি অঙ্গীকার একদিন পূরণ হবে। আমরা সেই দিনটি দেখব, যেদিন নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত জেগে উঠবে ফিলিস্তিন।
জবাবে হামাস প্রধান বলেন, ইনশাআল্লাহ! আমরা একসঙ্গেই সেই দিনটি দেখব। হামাস প্রধান ইরানের সদ্যপ্রয়াত প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন এবং ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে সান্ত¡না জানান। তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও গাজায় ইসরাইলের চলমান হামলা নিয়ে কথা বলেন।

খামেনি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ইসরাইল বিরোধী আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করেন। খামেনি বলেন, কে জানত যে একদিন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হবে এবং সেখানে ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানো হবে?। তিনি আরও বলেন, কে জানত একদিন জাপানের রাস্তায় ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হবে! স্লোগান উঠবে ‘ইসরাইলকে ধ্বংস কর’।
এদিকে রাইসির মৃত্যুর পেছনে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ছেলের হাত রয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। বুধবার লন্ডনভিত্তিক একটি গণমাধ্যমে এমন খবর চাউর হয়। খামেনির পর ভবিষ্যতে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে ছিলেন রাইসি। কিন্তু তাকে সরিয়ে সেই পদে বসার নীলনকশা করেন খামেনির ছেলে মুজতবা খামেনি।

লন্ডনভিত্তিক গণমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের খবরে বলা হয়েছে, খামেনির পর ভবিষ্যতে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে ছিলেন রাইসি। কিন্তু নিজে সেই পদে বসতে ‘রাইসিকে সরিয়ে দিয়েছেন’ খামেনির ছেলে মুজতবা খামেনি। তবে রবিবারের কপ্টার বিধ্বস্তের পেছনে মুজতবা খামেনির হাত আছে এমন কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

৫৪ বছর বয়সি মুজতবাকে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যায় না। তবে পর্দার আড়ালে তিনি খুব প্রভাবশালী বলে ধারণা করা হয়। এর আগে বুধবার তেহরানের আজাদি চত্বরে রাইসিসহ অন্যদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেন। জানাজার কারণে বুধবার দেশটিতে সরকারি ছুটি ছিল। এদিন সকাল থেকেই কালো পোশাক পরিহিত ইরানীরা রাইসির ছবি নিয়ে রাস্তায় নামেন।

সবার গন্তব্য ছিল আজাদি চত্বর। তেহরান ভার্সিটি প্রাঙ্গণে রাইসির জানাজায় ইমামতি করেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। জানাজায় দোয়া করার সময় ইব্রাহিম রাইসি প্রসঙ্গে খামেনি বলেন, মহান রাব্বুল আলামিন! আমরা তার মধ্যে সব ভাল গুণ দেখেছি। খারাপ কিছু দেখিনি। এর আগে রাইসিসহ অন্যদের কফিনবাহী গাড়ি আজাদি চত্বরে প্রবেশ করামাত্র সবাই একযোগে উচ্চারণ করে, যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক। তেহরান থেকে মরদেহগুলো বুধবারই বিরজান্দ শহরে নেওয়া হয়।
গত রবিবার কপ্টার দুর্ঘটনায় ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ দেশটির আরও ছয় সিনিয়র নেতা নিহত হন। এদিন ইরান-আজারবাইজান সীমান্তের আরাস নদীর ওপর নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান রাইসি। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে বাঁধ উদ্বোধনের পর হেলিকপ্টারযোগে তাবরিজ শহরে ফিরছিলেন তিনি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই জোলাফা এলাকায় কপ্টারটি দুর্ঘটনায় পড়ে।
ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত খুব কমই জানা গেছে। এবার এ ঘটনার খুঁটিনাটি নিয়ে মুখ খোলেন ইরানী প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি। এক সাক্ষাতকারে তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

গোলাম হোসেইন ইসমাইলি বলেন, ঘটনার দিন রাইসি ও আব্দুল্লাহিয়ানকে বহনকারী কপ্টারটির পাশেই আরেকটি হেলিকপ্টারে ছিলেন তিনি। ইসমাইলি বলেন, আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় বাঁধ উদ্বোধনের পর ১৯ মে স্থানীয় সময় বেলা একটা নাগাদ হেলিকপ্টার তিনটি যাত্রা শুরু করে। ওই সময় আবহাওয়া চমৎকার ও স্বাভাবিক ছিল।

প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি মাঝখানে ছিল। সামনে একটি ও পেছনে আরেকটি হেলিকপ্টার ছিল। পুরো বহরের দায়িত্বভার ছিল প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাইলটের ওপর।
তিনি বলেন, যাত্রা শুরুর ৪৫ মিনিট পর রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটকে আরও উঁচুতে উঠে ভ্রমণ করার নির্দেশ দেন। মূলত তিনি কাছাকাছি থাকা ঘন মেঘ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ইসমাইল বলেন, ওই সময় হঠাৎ রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উধাও হয়ে যায়।

ঘন মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার ৩০ সেকেন্ড পর আমাদের পাইলট প্রথম খেয়াল করেন, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি আর দেখা যাচ্ছে না। এর পর আমাদের পাইলট বৃত্তাকারে ঘুরে কপ্টারটি খুঁজতে থাকেন। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার রেডিও ডিভাইসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা সফল হয়নি। এর পর তাদের হেলিকপ্টারটি উচ্চতা কমিয়ে আনে এবং পাশের একটি তামার খনিতে অবতরণ করে।
ইসমাইলি আরও বলেন, ওই সময় ‘অদৃশ্য হয়ে যাওয়া’ হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা ইউনিট প্রধানকে বারবার কল করা হয়। কিন্তু তাদের কারোরই সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটরা প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তাফাভিকে কল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।

জটিল ওই পরিস্থিতিতে শুধু রাইসির হেলিকপ্টারে থাকা মোহাম্মদ আলী আল-হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তার অবস্থা ভালো ছিল না। কিন্তু শুধু জানান, একটি উপত্যকায় তাদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। এর পর আরেকবার আল-হাশেমকে কল করতে সক্ষম হন ইসমাইলি। তখনো একই কথা জানান। মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির মুখপাত্র।
ইসমাইলি বলেন, আমরা যখন বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাই, সেখানে সবার মরদেহ দেখি।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *