জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া ১৩ হরিণ উদ্ধার,মারা গেছে শত শত বন্য প্রাণী


ইত্তেহাদ নিউজ,খুলনা : উপকূল অঞ্চলকে ঘূর্ণিঝড় থেকে ঢাল হয়ে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। কিন্তু গত রবিবার (২৬ মে) রাত থেকে সোমবার (২৭ মে) পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সুন্দরবনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে বন্য প্রাণীর, যা অপূরণীয়। জলোচ্ছ্বাসে পানিতে ডুবে হরিণসহ শত শত বন্য প্রাণী মারা গেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে আরও বহু বন্য প্রাণী। সেই সঙ্গে বন্য প্রাণীর জন্য বনের ভেতর খনন করা সব কটি মিষ্টি পানির পুকুর লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এরই মধ্যে বনে মিষ্টি পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের ভেতরে থাকা ২৫টি টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২০-৩০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনের এত বড় বিপর্যয় হয়নি।
জানা যায়, অতীতের অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে রিমাল বেশ দীর্ঘস্থায়ী ছিল। রিমালের প্রভাবে এবার সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ বনভূমি প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পানিতে নিমজ্জিত ছিল। বনের ভেতরে প্রায় সব স্থানই ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। জোয়ারের পানি নেমে গেলে মঙ্গলবার সকালে বনের বিভিন্ন অংশে বন্য প্রাণীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বিশেষ করে বনের অনেক হরিণ মারা গেছে। এ পর্যন্ত বনের শুধু কটকা এলাকা থেকে ৩০টি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। মৃত বন্য প্রাণীর সন্ধানে বনজুড়ে বনরক্ষীদের তল্লাশি চলছে। এ ছাড়া বনের গাছপালারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
মিহির কুমার জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি হয়েছে বন বিভাগের বিভিন্ন অফিসসহ টহল বোট, টিনের চালা, জানালা-দরজা, সোলার প্যানেল ও অবকাঠামোর। দুবলা, কটকা, কচিখালী, বগি ও বিভিন্ন অফিসসহ ২৫টি টহল ফাঁড়ির রান্নাঘরসহ অবকাঠামোর টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কটকা অভয়ারণ্যের অফিস ঘাটের জেটি ও পুকুর বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে গেছে। পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে এখানকার পর্যটক চলাচলের কাঠের পুলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে তছনছ হয়েছে অসংখ্য গাছপালা।
বন সংরক্ষণ দপ্তর জানায়, সুন্দরবনে অভ্যন্তরের মিঠাপানির পুকুরগুলোও জলোচ্ছ্বাসে লোনাপানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের ৮০টি মিঠাপানির উৎস পুকুরে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লোনাপানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বনকর্মীদের পাশাশাশি বাঘ, হরিণসহ বন্য প্রাণীরাও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে।
এদিকে বন গবেষকরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক বছর ধরে নিম্নচাপের কারণে লোনা পানিতে বন তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বন বিভাগ সেদিকে নজর দেয়নি। ফলে এবার ১০-১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসে বন ভূমিতে বিচরণ করা বাঘ, হরিণ ও শূকরসহ অন্যান্য প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সুন্দরবন একাডেমির বন গবেষক ও পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে বন্য প্রাণীর এত বিশাল ক্ষতি হয়েছে, যা পূরণ করা কখনোই সম্ভব হবে না। বন্য প্রাণীর সুরক্ষায় বনের মধ্যে উঁচু পানির ঢিবি তৈরি, সুপেয় পানির পুকুরগুলোর পাড় উঁচু করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এ বিষয়ে বন কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছর বনের মধ্যে মাটির ১২টি উঁচু ঢিবি করা হয়। তবে তা প্রায় ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার বনভূমির তুলনায় খুবই কম। এবারের জলোচ্ছ্বাসে বন পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে বনে উঁচু ঢিবি তৈরিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সুন্দরবন বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া ১৩টি হরিণ লোকালয় থেকে উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। আহত কিছু বন্য প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখনো বনজুড়ে তল্লাশি চলছে, তাতে মৃত হরিণসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর সংখ্যা আরও বাড়বে। এ ছাড়া আহত অবস্থাও উদ্ধার করা হচ্ছে হরিণসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়