বিশেষ সংবাদ

ফরচুন শুজের শেয়ার কেনাবেচা করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন এনবিআরের মতিউর রহমান

matiur nbr 1
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানেরই ছেলে, যদিও গত বুধবার এই পরিচয় পুরোপুরি অস্বীকার করেন তিনি। আড়াল করেন ছেলের প্রকৃত পরিচয়। মতিউরের দাবি ছিল, ইফাত তাঁর ছেলে নন, এই নামে কাউকে চেনেনও না। তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, মতিউরের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর ছেলে ইফাত। বাবার অঢেল সম্পদে বিলাসী জীবনযাপন করেন এই তরুণ।

১৯ বছরের ইফাত মোবাইল ফোনে যে সিমকার্ড ব্যবহার করছেন, সেটি তাঁর বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তোলা। ইফাতের স্বজনও বলছেন, মতিউর রহমান তাঁর বাবা। মতিউর রহমান সম্পর্কে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো বোন জামাই। নিজাম হাজারী  বৃহস্পতিবার বলেন, ‘ইফাত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে, এটাই সত্য। কেন নিজের সন্তানকে অস্বীকার করছেন, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমার মামাতো বোন শাম্মী আখতার শিবলীর সঙ্গে মতিউরের বৈবাহিক বিচ্ছেদও হয়নি।

আরও পড়ুন:

৫২ লাখ টাকার কোরবানি দিয়ে ভাইরাল এনবিআর কর্মকর্তার ছেলে

মতিউর রহমানের শত কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ!

এনবিআর কর্মকর্তা ড.মতিউর কীভাবে এত সম্পদের মালিক!

এনবিআরের মতিউরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ

এদিকে ১২ লাখ টাকায় বিটল প্রজাতির ‘উচ্চ বংশীয়’ ছাগল কেনার ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই তৈরির পর অনেকে ইফাতের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমন পরিস্থিতিতে ইফাতের বাবা মতিউর রহমানের নাম সামনে আসে। অনেকে তাঁর অঢেল সম্পদের তথ্য দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের ১২ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য হলো কী করে, সেই প্রশ্নও ওঠে।

অনুসন্ধান বলছে, ইফাত ঈদের আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদেক এগ্রো থেকে একটি ছাগল কেনা ছাড়াও ঢাকার সাতটি খামার ও একটি হাট থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কেনেন। গত বছর কিনেছিলেন ৬০ লাখ টাকার পশু। আড়াই লাখ টাকার পাখি রয়েছে তাঁর ঘরে। এক ভিডিওতে ইফাত নিজেই সে কথা শোনান। এ ছাড়া তাঁর বাড়িতে রয়েছে মিসরের বাজরিগার পাখি, অস্ট্রেলিয়ার গালা কাকাতুয়া ও নানা প্রজাতির বিড়ালও। কিছুদিন পরপর দামি গাড়ি কেনাও তাঁর নেশা বলে আলোচনা আছে।
মো. মতিউর রহমান এখন এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সভাপতি। এর আগে তিনি ব্রাসেলসে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার, ভ্যাট কমিশনারসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন।

ইফাত থাকেন রাজধানী ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের ইম্পেরিয়াল সুলতানা ভবনের পঞ্চম তলায়।  তাঁর বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, ইফাত গত মঙ্গলবার বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। তবে ভবনের একাধিক বাসিন্দা জানান, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মতিউর রহমান থাকেন রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। আর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাত। থাকেন ধানমন্ডির বাসায়। তবে শাম্মী আখতার থাকেন কাকরাইলের একটি ফ্ল্যাটে। ইফাতের বোন ফারজানা রহমান ইস্পিতা থাকেন কানাডায়। সেখানে তাঁর বিলাসী জীবনযাপন সম্পর্কে অনেকে ফেসবুকে তথ্য দিচ্ছেন। ইফাত বিবাহিত।

 কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, কোরবানি উপলক্ষে ইফাতের বাসার নিচতলা দামি ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো। পশু বাঁধার জন্য সারি সারি বাঁশ বাঁধা হয়েছে। ইফাত বড় গরু নিয়ে বাসায় প্রবেশ করছেন। এ ছাড়া ফেসবুকে মতিউর রহমানের সঙ্গে ইফাতের বেশ কয়েকটি ছবি দেখা গেছে।
ইফাতের পশু কেনার কিছু ভিডিও এবং ছবি। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে ঢাকার আশপাশের খামারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইফাত এ বছর সাতটি খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। তবে ফেসবুকে বিতর্কের মুখে সাদেক এগ্রো থেকে কেনা ছাগল তিনি বাসায় নেননি। তবে খামার ও হাট থেকে কেনা পশুগুলো বাসায় নিয়েছেন। সামারাই এগ্রো, রাহমাহ ক্যাটেল ফার্ম, ব্রাউনিজ, হাম্বা পাগলা এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম, সারা এগ্রো, বুদ্দু ক্যাটেল ফার্ম এবং গাবতলী হাট থেকে এবার গরু কিনেছেন ইফাত। এক খামার থেকে ১৭ লাখ টাকায় কিনেছেন একটি গরু। গাবতলী হাট থেকে কিনেছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকায় আরেকটি গরু। গাবতলী হাটে গরু কেনার সেই ভিডিও একটি ইউটিউব চ্যানেল প্রকাশ করেছে। সেখানে ইফাত বলেন, ‘সুন্দর-আকর্ষণীয় গরু কেনা আমার শখ।

দামি গাড়ি ও দামি ঘড়ি কিনতেও পছন্দ করেন ইফাত। ফেসবুকে লাখ টাকার ঘড়ি আর দামি গাড়ির অনেক ভিডিও প্রকাশ করেছেন তিনি। এ বছরই ধানমন্ডিতে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন ইফাত। তখন সাধারণ মানুষ পিটুনি দিয়ে তাঁকে পুলিশে দেওয়ার একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। রাতভর ধানমন্ডি থানায় আটক থাকার পর সকালে ছাড়া পান তিনি। মাস দুয়েক আগে গুলশানে পুলিশের সঙ্গেও মারামারিতে জড়ান এই তরুণ।

দেশত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন
গত মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে লাপাত্তা ইফাত। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ। এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন তিনি– এমন গুঞ্জনও উঠেছে। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইলে মায়ের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ছবি রয়েছে। ইফাতের ওই ফোন নম্বর বাবা মতিউর রহমানের জাতীয় পরিচয়পত্রে তোলা। সেখানে মতিউর রহমানের স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া বরিশালের মুলাদীর চরবাহাদুরপুরে। আর বর্তমান ঠিকানায় লেখা নরসিংদীর রায়পুরার মরজাল।

যা বললেন ইফাতের মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মামা
ইফাতের ছাগল কেনা নিয়ে নতুন তথ্য জানালেন ইফাতের মায়ের চাচাতো ভাই আবিদ। বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে ইফাতকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন তিনি। তাঁর ভাষ্য– যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিল্পপতি মামার জন্য ইফাত ছাগলটি কেনেন। আবিদ ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি।
হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান তিনি। আবিদ ফেসবুকে আরও লেখেন– ইফাতের আপন দুই মামা আছে, যাদের একজন আমিরাতে। তিনি শতকোটি টাকার মালিক। ইফাতের আরেক মামা আছেন আমেরিকায়। তিনিও শিল্পপতি। সোনাগাজী উপজেলার আমিরবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের দুলা মিয়া কাজী বাড়ি ইফাতের নানাবাড়ি। কয়েক বছর আগে ইফাত তাঁর মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে যান।

শেয়ারবাজারে বিপুল বিনিয়োগ
এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের শেয়ারবাজারে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারের পাশাপাশি প্রাইভেট প্লেসমেন্টেও বিপুল টাকার বিনিয়োগ আছে তাঁর। ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবধি শুধু প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় ১৫ কোম্পানিতে ৩৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বিনিয়োগের তথ্য মিলেছে।  বাজারমূল্য অনুযায়ী এসব শেয়ারের দাম ছিল ৮৪ কোটি টাকা। মতিউর রহমানের স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে ৫ কোম্পানির অভিহিত মূল্যে ১০ টাকা দরে ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার শেয়ার আছে। এর মূল্য ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।  এসব শেয়ারের বাজারদর ছিল প্রায় ১৭ কোটি টাকা। আলোচনা আছে– কারসাজির সঙ্গে জড়িত ফরচুন শুজের শেয়ার কেনাবেচা করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন মতিউর রহমান। ফরচুনের কর্ণধার হলেন– মিজানুর রহমান। তাঁর সঙ্গে জুতার কারখানা খুলেছিলেন মতিউর। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে মতিউর নিজে স্বীকার করেন– ‘ফরচুন শুজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। এক ছোট ভাইকে বললাম তাদের নিয়ে এসো। এরপর তাদের সঙ্গে বসলাম। এই একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অবিশ্বাস্য রকম ভালো মুনাফা পেয়েছিলাম। ৮ টাকার শেয়ার ৫৪ টাকায় বিক্রি করেছি। তাদের সঙ্গে আমার কনট্রাক্ট হয়েছিল ৮ টাকায় শেয়ার দেবে। যেটা ফুল কনসালট্যান্সিতে করেছি। এনবিআরের কর্মকর্তা হয়ে তিনি কীভাবে পরামর্শকের কাজ জড়ান– এমন প্রশ্ন উঠেছে। মতিউরের সঙ্গে সখ্যের ব্যাপারে জানতে একাধিক দফায় ফরচুনের কর্ণধার মিজানুর রহমানকে কল করলে তিনি ফোন ধরেননি। এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে একাধিকবার কল করে ও খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *