বাংলাদেশ ঢাকা

মতিউর আমার বন্ধু নয়: ফরচুন সুজ চেয়ারম্যান মিজান

news 1719140883722
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে ভাইরাল ইফাতের বাবা ড. মতিউর রহমানের একের পর এক দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসছে। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা ২০ কোম্পানিতে তার প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের খবর জানা গেছে। এসব কোম্পানিতে প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় নিজের ও স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বোনসহ নিকটাত্মীয় এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানির নামে শেয়ার নেয়ার তথ্য মিলেছে। ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসব শেয়ার কেনেন তিনি।শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অনুমোদিত আইপিও প্রসপেক্টাস থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মতিউর রহমান নিজের ও স্বজনদের নামে যে পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন, অভিহিত বা প্রকৃত মূল্য হিসাবে এসব শেয়ারের দাম অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা। এর দু-একটি বাদে সব কোম্পানির শেয়ারই শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকাভুক্তির পর প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় নেয়া এসব শেয়ার উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে কয়েকশ কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন সূত্রে থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মতিউর রহমান প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়েছেন, সেগুলো হলো– এক্‌মি পেসটিসাইডস (৩৮ লাখ শেয়ার), অনিক ট্রিমস (৫৩.১৯ লাখ), অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন (১০ লাখ), বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার (৭৫ হাজার), সিএনএটেক্স (১০.৩০ লাখ), ডমিনেজ স্টিল (১৫.৮০ লাখ), ই-জেনারেশন (৫০ হাজার), ফরচুন সুজ (৪৩.১০ লাখ), কাট্টলী টেক্সটাইল (২১ লাখ), ল্যুবরেফ (৮ লাখ);

মামুন এগ্রো (৩৭.৮৭ লাখ), এমএল ডাইং (১৬ লাখ), রিং সাইন (১০ লাখ), এসকে ট্রিমস (৯০ লাখ), টেকনো ড্রাগস (১.৫০ লাখ), ওয়েব কোস্টস (১৩.৯৭ লাখ) শেয়ার। প্যাসিফিক ডেনিম ও সিলভা ফার্মারও কিছু শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে এসকে ট্রিমস কোম্পানি নিজেই গড়েছেন মতিউর। তবে এর বাইরেও তার নামে আরও শেয়ার থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত মতিউর নিজ নামে ১১ কোম্পানির শেয়ার নিয়েছেন। এসব শেয়ার নিতে আইল্যান্ড ও ইমতিয়াজ হোসাইন নামের দুইটি ব্রোকারেজ হাউস এবং শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট নামে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকে খোলা তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন তিনি।

এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের মালিক ও শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের মালিকদের একজনসহ চার-পাঁচজন নিয়ে মতিউর গড়ে তোলেন একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির মালিকপক্ষকে ব্ল্যাকমেইল করে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ফরচুন সুজের মালিক মিজানুর তার বন্ধু। তাকে ১০ টাকা দামের শেয়ার ৮ টাকা দরে দিয়েছেন। এ শেয়ার বিক্রি করেই ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছিলেন তিনি।

জানা গেছে, মতিউর রহমান শুধু তার নিজের নামে নেয়া শেয়ার বিক্রি করেই অন্তত ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন। প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় স্ত্রীর নামে নেয়া শেয়ারগুলো তিনি এরই মধ্যে বিক্রি করে থাকলে অন্তত ২৫ কোটি টাকা আয় করেছেন। মতিউর রহমান তার মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতার নামে তিন ব্রোকারেজ হাউসে তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন। প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় আট কোম্পানির ৬৪ লাখ শেয়ার নিয়েছেন তিনি। অভিহিত মূল্যে এসব শেয়ারের মোট মূল্য ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া তার বোন নূর বেগমের নামে দুটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন। যার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে মোট ৫ কোটি টাকা।

মতিউর রহমান ও তার কোম্পানির কাছে অন্তত ১০টি কোম্পানির তিন কোটির বেশি শেয়ার আছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।মতিউর, যিনি এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমস অ্যান্ড লার্জ ট্যাক্সপেয়ার ইউনিট (এলটিইউ), ভ্যাট-এও কাজ করেছেন, এনটিভিকে বলেন, তিনি ২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেন।ফরচুন সুজের শেয়ার থেকে ‘অস্বাভাবিক বেশি’ অর্থ উপার্জন করেছেন বলেও স্বীকার করেন তিনি। ১০ টাকা ফেসভ্যালুর শেয়ার ৮ টাকা দরে কিনে পরে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি।তিনি বলেন, ‘কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনতে পরামর্শ দেওয়ার জন্য জুতা তৈরির কোম্পানির সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছিল। বিনিময়ে মালিক আমাকে ৮ টাকায় শেয়ার দিয়েছিলেন। কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি ছাড়ের দামে শেয়ার বিক্রি করতে পারে তবে উচ্চ আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে, আর তা অবশ্যই কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখাতে হবে।তবে কোম্পানিটি এ বিষয়ে কোনো অনুমোদন নেয়নি এবং তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় ২০১৫-১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে তা দেখানোও হয়নি। আইপিও প্রসপেক্টাসে দেখা যায়, সব শেয়ারহোল্ডার ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে শেয়ার কিনেছেন।পুঁজিবাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত হওয়ার কাজে সরকারি কর্মচারিরা পরামর্শক হিসেবে কাজ করতে পারেন না, এমনকি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিরও এ কাজ করার সুযোগ নেই।এটি ‘ইস্যু ম্যানেজমেন্ট লাইসেন্সধারী’ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাজ, এজন্য ৬৬ টি ব্যাংকের লাইসেন্স আছে।ব্যাংকগুলো নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে এই কাজ করে থাকে। আইন অনুযায়ী তারা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এজন্য ফি হিসেবে কোনোভাবেই শেয়ার নিতে পারে না।বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার এ ধরনের পরামর্শ দিতে পারে না। পুঁজিবাজারের বিধানেও এর কোনো সুযোগ নেই।কোম্পানি কেন তাকে ৮ টাকায় শেয়ার দিল? এটি অনিয়মের একটি গুরুতর অভিযোগ যা কর্মকর্তা নিজেই স্বীকার করেছেন। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত, তিনি বলেন।একজন শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংকার যিনি সাধারণত আইপিও কনসালটেন্সি সেবা দিয়ে থাকেন তিনি বলেন, মতিউর রহমানের সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি তালিকাভুক্তির আগে শেয়ার পেয়েছেন এবং বাংলাদেশের কোনো কোম্পানিই এই সময়ে ডিসকাউন্টে শেয়ার বিক্রি করে না।’অধিকাংশ কোম্পানিকে কোনো টাকা না পেয়ে কিংবা কম দামে ঘুষ হিসেবে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে শেয়ার দিতে হয়। সাধারণত কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাদের প্লেসমেন্ট শেয়ার দিয়ে থাকে। ফরচুন সুজের আইপিও প্রসপেক্টাস অনুসারে মতিউর কোম্পানির ৫ লাখ শেয়ার পেয়েছেন, যা প্রাক-আইপিও সময়ে কোম্পানির মোট শেয়ারের ০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কোনো কোম্পানি ডিসকাউন্ট মূল্যে শেয়ার বিক্রি করলে হাইকোর্টের অনুমোদন নিতে হবে, কিন্তু ফরচুন সুজ তা করেনি। অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করার জন্য এটি শুধুমাত্র বিএসইসি থেকে অনুমোদন নিয়েছে।তিনি (মতিউর) কীভাবে ৮ টাকায় শেয়ার পেলেন সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। শুধু কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই এটি বলতে পারবেন।যেকোনো কোম্পানি যে কাউকে প্লেসমেন্ট শেয়ার অফার করতে পারে। তাই কোনো কোম্পানি অভিহিত মূল্যে শেয়ার বিক্রি করলে বিএসইসির কিছু বলার বা করার নেই, তিনি বলেন।

এ ব্যাপারে ফরচুন সুজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন,এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান আমার বন্ধু নয়।তিনি আমার সিনিয়র। ফরচুন সুজের প্রায় চার হাজার শেয়ার ক্রয়কারী রয়েছেন। সকলকে তো আর আমি চিনিনা।মতিউরের সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিলনা। তিনি একটি বেসরকারী টেলিভিশনে আমাকে জগিয়ে যে কথা বলেছেন তা অসত্য।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *