নিজেকে বাঁচাতে মতিউর রহমানের নানামুখী তৎপরতা শুরু


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : ছাগলকাণ্ডে আলোচিত হওয়ার দীর্ঘ দুই সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এসেছেন সেই মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী। আড়ালে থেকে নিজেকে বাঁচাতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন মতিউর নিজেই। বরিশাল বিভাগীয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের কাছে ধরনা দিয়ে তাদের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। এছাড়া দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ছাগলকাণ্ড সামনে আসায় প্রথম স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করারও চাপ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মতিউর এবং তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শিগগির কমিশন তলব করবে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের। একই সঙ্গে তার সম্পদ জব্দেরও প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন। ইতোমধ্যে মতিউর ও তার পরিবারের ৮ সদস্যের সকল ব্যাংক হিসাব, বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদ্যবিদায়ি প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান। তিনি বরিশাল বিভাগীয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। মতিউর সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সহকর্মীরা যারা এলটিইউ (জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিট), ঢাকা পশ্চিম এবং ট্রাইব্যুনালে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, তারা আমার টিমওয়ার্ক সম্পর্কে জানেন। সহকর্মীদের প্রতি আমার ভালোবাসা সম্পর্কেও তারা অবগত। অভিভাবক হিসেবে আমি সবসময় সহকর্মীদের রক্ষা করি। তাই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমি আপনাদের সবার কাছ থেকে ভালোবাসা এবং নির্দেশনা আশা করছি।’ এ সময় তিনি বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি আশা করেন। একই সঙ্গে বরিশাল বিভাগীয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্টদের আনকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করেন।
সামাজিক মাধ্যমে মতিউর লিখেছেন, ‘গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে কোটি টাকার বাড়ি, রিসোর্ট এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সব ছবি কৃত্রিমভাবে বানিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)-ভিত্তিক ছবি তৈরি করে অনেক ট্রল চলছে, যা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এমন পরিস্থিতির জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।’
এদিকে ১৪ দিন পর জনসমক্ষে এসেছেন মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিনি রায়পুরা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে অবস্থান করেন। আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা এবং বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সম্পর্কিত দুটি প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন তিনি। তবে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। লাকী রায়পুরা উপজেলার আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তিনি প্রার্থী হিসেবে কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে স্বামী ও পরিবারের ভঙ্গুর ইমেজ ফেরানোর চেষ্টা করছেন।
দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছাড়ার চাপ
মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারকে ডিভোর্সের জন্য চাপ দিচ্ছেন প্রথম স্ত্রী ও তাদের পরিবারের লোকজন। এই অবস্থায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে পাড়ি জমানো দ্বিতীয় স্ত্রী দুশ্চিন্তা ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন মতিউর। যদিও আগেই খবর প্রকাশিত হয়েছে ছাগলকাণ্ডে নাম আসায় প্রথম স্ত্রীর চাপে দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানকে অস্বীকার করেছিলেন মতিউর। দ্বিতীয় স্ত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মতিউরের বোন ইতোমধ্যে শাম্মীকে ফোন করে ডিভোর্স লেটার পাঠাতে হুমকি দিয়েছেন। ইফাতের আরেক বোন মাধবী ঢাকার একটি এলাকায় এখন ঘরবন্দি। মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হয়েও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে তিনি ক্লাসে যাচ্ছেন না।
শাম্মীর চাচাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘মতিউর রহমান আমার চাচাতো বোনের স্বামী। ইফাত তার সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই আছে। ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মী আখতারের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান। এরপর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শ্যালিকা বুবলী ও শ্যালক মো. নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। বুবলী এখন চট্টগ্রামে থাকেন। তার স্বামী থাকেন আমেরিকা। শ্যালক নকিব সম্প্রতি চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেছেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন। খবর মিলেছে, মতিউরের চীনে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। সেগুলো সামলান নকিব।
শেয়ারবাজারের ‘ম্যারাডোনা’ মতিউর
সরকারি কর্মকর্তা হলেও দেশের শেয়ারবাজারে মতিউরের পরিচিতি একজন ‘ম্যারাডোনা’ হিসেবে। নানা গেম্বলিংয়ের (কারসাজি) মাধ্যমে বাজার থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন মতিউর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘প্লেসমেন্ট বাণিজ্য’ এবং ‘কারসাজির আগাম তথ্য জেনে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কিনে বেশি দামে বিক্রি’ এই দুই কৌশলে মতিউর কোটি টাকা কামিয়েছেন। মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের ১২টি বিও অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য মিলেছে। ২০০৮ সাল থেকেই মতিউর পুঁজিবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুসারে এ ধরনের কাজ বেআইনি ও অনৈতিক।
জানা গছে, ২০০৮ সাল থেকে শেয়ার ব্যবসা শুরু করে অল্প দিনেই পুঁজিবাজারে পরিচিতি পান ‘ম্যারাডোনা’ হিসেবে। দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কম দামে কিনে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে দেন। লুটে নেন বিপুল অর্থ। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নিজেও একটি ট্রেক হাউসের অনুমোদন নিয়েছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে মতিউরপুত্র ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর মতিউরের নানা অপকর্মের খবর বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়