ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

বাংলাদেশেই আত্মগোপনে আছেন মতিউর

98d56c536f46033091311da0f1c00c71 6675d464a2af3
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্যবিদায়ী সদস্য ড. মতিউর রহমান দেশেই আছেন বলে ধারণা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশন বলছে, এ ধারণা থেকেই তার বিদেশযাত্রা ঠেকানো হয়েছে। আদালত ইতোমধ্যেই তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

প্রসঙ্গত, মতিউরের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠার পর সারাদেশে শুরু হয় তোলপাড়। এর মধ্যেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন! আবার অনেকে বলছেন, তিনি দেশেই আত্মগোপন করে আছেন।

এদিকে মতিউর এবং তার দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের নামে থাকা সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তালিকা প্রস্তুত করছে দুদক। ইতোমধ্যে মতিউর পরিবারের বেশকিছু সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান কমিটি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা তাদের অন্যান্য সম্পদের তথ্য-উপাত্ত হাতে চলে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন কর্মকর্তারা।

মতিউরসহ পরিবারের আট সদস্যের নামে থাকা ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, গাড়ি, বাড়ি, জমি, বিনিয়োগ করা কোম্পানিসহ সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে ইতোমধ্যে সরকারের সাত দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কয়েকটি দপ্তর থেকে মতিউরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান সংক্রান্ত কমিটির কাছে এরই মধ্যে অস্থাবর সম্পদ সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত এসেছে। স্থাবর সম্পত্তির তথ্য-উপাত্ত আগামী সপ্তাহের মধ্যে এসে পৌঁছবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এরপর সেগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে জব্দের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে।

ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আদালতে দুদকের দায়িত্বরত পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, সম্পদের তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তি একটু সময়সাপেক্ষ বিষয়। আমরা আশা করছি, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তার সম্পদের তালিকা আদালতে দাখিল করতে পারব। তালিকা পেলে সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুবক মুশফিকুর রহমান ইফাত ভাইরাল হওয়ার পর পরিচয় খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে তার বাবা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর। এরপর গত ২৩ জুন মতিউরকে ট্রাইব্যুনাল থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি করে দুদক।

দুদকের অনুসন্ধান শুরুর দুই দিনের মাথায় গত ২৫ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) হিসাব ও শেয়ারবাজারের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ নির্দেশনার কারণে মতিউর, তার দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের ব্যাংক হিসাব, এমএফএস হিসাব ও বিও হিসাবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আর কোনো লেনদেন করা যাবে না। এসব হিসাব থেকে কেউ অর্থ তুলতে পারবেন না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার খবরের মধ্যে মতিউর রহমান দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়। এর মধ্যে কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মতিউর আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। তবে এ খবরের পর তার দেশত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত না বলে ওই স্থলবন্দরের কর্মকর্তারা জানান। এর মধ্যে গত ২৪ জুন মতিউর, তার এক স্ত্রী ও এক ছেলের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদক থেকে আদালতে আবেদন জানালে শুনানি শেষে মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।

মতিউর দেশে নাকি-বিদেশে, আদালত জানতে চেয়েছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নে দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, আদালত আমাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, মতিউরের বিদেশ গমনে কেন নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চাইছেন? আমরা বলেছি, আমাদের কাছে তথ্য আছে, উনি পালিয়ে যাবেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, আমরা যখন আদালতে এ আবেদনটি দিই, তখন তিনি দেশেই ছিলেন। মতিউর দেশে আছেন, এমন ধারণা থেকেই আমরা আবেদন করেছি।

এর আগে গত ২৩ জুন মতিউর যাতে বিদেশ যেতে না পারেন, সেই অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইমিগ্রেশন শাখায় চিঠি দিয়েছে দুদক। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়। এর মধ্যে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পত্তির তথ্য-উপাত্ত চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সাত দপ্তরে চিঠি দেয় দুদকের অনুসন্ধান টিম।

এ ছাড়া মতিউরের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে এনবিআর, বিএফআইইউ, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরির্শক কার্যালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের প্রধানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।

এদিকে যে ছেলের ছাগল কেনার প্রেক্ষাপটে মতিউর সব হারাতে বসেছেন, সেই ইফাত তার মা শাম্মি আক্তার ও ভাই ইরফানকে নিয়ে গত ২২ জুন মালয়েশিয়ায় পালিয়ে গেছেন বলে গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেলে ইফাতের পোস্ট করা ভিডিওতে কোরবানির জন্য ৩৭ লাখ টাকায় একটি গরু এবং ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার প্রেক্ষাপটের মধ্যে আলোচনা উঠে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সম্পদের উৎস নিয়ে। এরপর সামাজিক মাধ্যমসহ নানা মহলে তার পরিবারের অবৈধ সম্পদের তদন্তের দাবি ওঠে।

এর মধ্যেই জানা যায়, গত দুই যুগে মতিউরের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির চারবার অভিযোগ ওঠে। ওইসব অভিযোগের পৃথক অনুসন্ধানের পর চারবারই প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণের অভাবে অব্যাহতি পান মতিউর। এবার তার বিরুদ্ধে পঞ্চমবারের মতো অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদকের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম।

মতিউর রহমান দুই বিয়ে করেছেন। রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকি তার প্রথম স্ত্রী। এই সংসারে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপসিতা নামে দুই সন্তান রয়েছে। লাকি সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। কথিত আছে, তিনি স্বামীর পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। লাকির নামে নরসিংদীর রায়পুরার মরজালে বিশাল এলাকাজুড়ে ‘ওয়ান্ডার পার্ক’ নামে একটি রিসোর্ট রয়েছে। এ ছাড়া নরসিংদীর নাগরিয়াকান্দির গোল্ডেন স্টার পার্কে রয়েছে অংশীদারত্ব। তার নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বহুতল ভবনও রয়েছে।

এই পরিবারের সদস্যদের নামে টঙ্গীতে এসকে ড্রিম ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডসহ অন্তত এক ডজন কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা যায়। পুঁজিবাজারের ব্রোকারেজ হাউসের অংশীদারত্ব রয়েছে এই পরিবারের। রয়েছে রিসোর্ট, আলিশান বাড়ি, বহুমূল্য গাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ। এ ছাড়া গাজীপুরের পূবাইলে রিসোর্ট, শুটিংস্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও গ্রামের বাড়ি বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন মতিউর। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বাড়ি রয়েছে তার। তার ছেলের রয়েছে বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ির কালেকশন। মেয়ে ইপসিতার কানাডায় ল্যাম্বারগিনি নামে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যার দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি টাকা।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *