বাংলাদেশ বরিশাল

বরিশালে গাড়ি চালকের স্ত্রী অর্ধ কোটি টাকার ফ্লাটের মালিক!

m22
print news

*দুর্নীবাজরা স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের থেকে গরীব

মামুনুর রশীদ নোমানী, বরিশাল : বরিশালের সরকারি একটি অফিসের গাড়ি চালক।যে বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন। গাড়ি চালক হলেও খুবই বুদ্ধিমান। চাকুরীর তদবীর, ফাইলের জটিলতা নিরসনে সেবা প্রত্যাশীদের সাথে রফাদফা ও তেল চুরি করি হয়েছেন ধনকুব। স্ত্রীর নামে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার একটি ফ্লাট রয়েছে। এই গাড়ি চালকদের মতই দুর্নীতিবাজরা কৌশলের আশয় নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন।

দুর্নীতিবাজদের থেকে তাদের নাবালগ স্ত্রী ও স্বজনরা সম্পদে সাবালগ দেখা গেছে । সম্প্রতি বেনজির,মতিউর ও ফয়সালের ফাঁস হওয়া সহায় সম্পদের বিবরনী থেকে । দুর্নীতিবাজরা নিজেদের বাঁচাতে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে এসব করছেন।

সমাজে একশ্রেণির মানুষ অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। আরও ভয়াবহ ব্যাপার-তাদের অনেকেই আবার নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখতে অসাধু উপায়ে অর্জিত সম্পদ স্ত্রী-সন্তানের নামে রাখছে অথবা বিনিয়োগ করছে। ফলে স্ত্রী-সন্তানের আয়ের উৎস না থাকলেও তারা বনে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তবে অনেক ক্ষেত্রেই শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

স্বামীর অবৈধ আয়ে ফাঁসছে স্ত্রী-সন্তান, শতকরা ৮০ ভাগ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি স্ত্রী-সন্তানের নামে বেশি সম্পদ গড়েন এমন তথ্য বেড়িয়ে এসেছে টিআইবির জরিপে।

চাকরি বা ব্যবসা কিছু নেই, পেশায় গৃহিণী। সঙ্গত কারণেই নেই আয়ের উৎস। আয়-রোজগার না থাকলেও খোদ ঢাকায়ই তিনি ১০টি প্লটের মালিক। এছাড়া আছে ফ্ল্যাট, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ নগদ কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ভাগ্যবান এই নারী আলোচিত কারবারি মো. মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের স্ত্রী রওশন আক্তার। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ লুকাতে স্ত্রীকে মালিক বানিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। অসাধু উপায়ে অর্জিত ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রাখার অপরাধে রওশন আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সাবেক আইজিপি বেনজীরের চেয়ে তার স্ত্রী জিসান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিস্তা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসিনা রাইসা বিনতে বেনজীরের নামেই বেশি সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। তাদের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বেনজীর। এছাড়া তাদের নামে বাড়ি-জমি-ফ্ল্যাটও কিনেছেন তিনি। দুর্নীতিবাজের পাশাপাশি তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও আইনের আওতায় আসছেন।

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমান সরকারি চাকরি করে দুই স্ত্রী, পাঁচ সন্তানের সাংসারিক দায়িত্ব পালনের পরও তাদের ও আত্মীয়-স্বজনের নামে গড়েছেন বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। এ পর্যন্ত দেশেই তার প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের হদিস মিলেছে। আর ঢাকাতেই অন্তত দুই ডজন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের নামে।

রাজনীতিবীদ ও জনপ্রতিনিধি। তাদের অনেকেরই রয়েছে অঢেল সম্পদ। নামে-বেনামেও সম্পদের পাহাড়। অনেকেই নিজের নামের চেয়ে স্ত্রী-সন্তানের নামেই বেশি সম্পদ রয়েছে। অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামাই যার বড় প্রমান।

দুর্নীতিবাজরা অবৈধ আয় আড়াল করতে কিংবা কৌশলে বৈধতা দিতে নিজেদের চেয়ে স্ত্রী-সন্তান কিংবা স্বজনদের নামে সম্পদ কেনেন বেশি। অনেকেই আবার কূটকৌশল হিসাবে স্ত্রী-সন্তানের নামে কাগুজে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে সেখানে বিনিয়োগ করেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে পাওয়া গেছে ১৮টি ব্যাংক হিসাব। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, এসব ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৯ কোটি টাকা জমা এবং পরে তার বড় অংশ উত্তোলনের তথ্য রয়েছে। আদালতে জমা দেয়া দুদকের নথি থেকে জানা গেছে, এনবিআর কর্মকর্তা ফয়সালের শ্বশুর আহম্মেদ আলী একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। তার শাশুড়ি মমতাজ বেগম পেশায় গৃহিণী। দুদকের দাবি, ফয়সাল তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ শুধু নিজের ও স্ত্রীর নামেই রাখেননি; পাশাপাশি স্বজনদের নামেও রেখেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের দাবি, শ্বশুর ও শাশুড়ির নামের ব্যাংক হিসাবে যে অর্থ লেনদেন হয়েছে তা ফয়সালেরই অপরাধলব্ধ আয়।দুদকের নথি অনুযায়ী, ফয়সাল ও তার ১১ স্বজনের নামে ১৯টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে তার শ্বশুর-শাশুড়ির ব্যাংক হিসাবে।

বিভিন্ন শ্রেণির সরকারি চাকরিজীবী, পেশাজীবী ও রাজনীতিকের সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। ফলে অন্যের নামে সম্পদ করেও সেসব দুর্নীতিবাজ তো পার পাচ্ছেনই না, সঙ্গে ফাঁসছেন তাদের স্ত্রী-সন্তানও। এমনকি স্বামীর অপরাধলব্ধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করতে গিয়ে স্ত্রীর কারাবাসের নজিরও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি না হওয়ার কারণেই তারা বহুমাত্রিক অপরাধে জড়াচ্ছেন। এটাও সত্য, অনেক সময় স্ত্রী-সন্তানরা সচেতনতার অভাবে না জেনে এই দায় বহন করেন। আবার কেউ কেউ পরিবারের কর্তাকে দুর্নীতি করতে প্ররোচিতও করেন। সেক্ষেত্রে প্রথমেই দুর্নীতিবাজের শাস্তি হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তাই সমাজ থেকে দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলার বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, দুর্নীতি বন্ধে পরিবার থেকেই প্রতিবাদ শুরু হওয়া উচিত। পরিবারের যিনি উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তার বৈধ আয় অনুযায়ী অন্য সদস্যরা জীবনমান সাজালে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা না করে উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ওপর বাড়তি চাপ দেওয়ায় তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপার্জনের পথে পা বাড়ান।

দুর্নীতিবাজদের আয় ব্যাপক আকার ধারণ করলে দুর্নীতিলব্ধ আয় বৈধ করতে তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তানের নামে সম্পত্তি কেনেন। স্ত্রী-সন্তানরাও এর বিরোধিতা না করে ভোগ করেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের প্রবণতা হ্রাসে দুর্নীতিবাজদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *