ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

বোটানিক্যাল গার্ডেন: হাঁটাহাঁটিও চড়া ব্যবসার দখলে!

e96b7d424c6e35856045936ab1861d1f 668712be0c2f4
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্কপ্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাসের নগরী রাজধানী ঢাকায় সবুজ খোলা প্রান্তর, উদ্যান নিতান্তই অপ্রতুল। মানুষজন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেবে, এমন সবুজ উদ্যানের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। তারপরও এসব উদ্যানের কাছাকাছি এলাকায় বসবাসকারীরা তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকেও নগরবাসী একটু ফুরসত পেলে মুক্ত বায়ু সেবনে উদ্যানে ঘুরতে যান। নগরবাসীর এই হাঁটাহাঁটি ও বায়ু সেবনও চলে যাচ্ছে চড়া ব্যবসার দখলে। খোদ সরকারি সংস্থাগুলোর অধীনে থাকা উদ্যানগুলোর বেশিরভাগই ইজারার মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ইজারাদাররা সেখানে সেখানে বসিয়েছেন প্রবেশ ফি। এসব উদ্যানে এখন চাইলেও বিনা পয়সায় কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, (নগরবাসীর কাছে যা বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে বেশি পরিচিত) যেখানে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকার কথা বলে অভিমত দিয়েছেন নগরবিদগন, সেখানেই গতকাল ৪ জুলাই থেকে প্রবেশ ফি পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে। আগের ২০ টাকা প্রবেশমূল্যের স্থলে একজন নাগরিককে এখন ওই উদ্যানে ঢুকতে গুনতে হবে একশ’ টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই এই নগরীতে সাধারণ মানুষের মুক্ত বায়ু সেবন ও হাঁটাচলার জায়গা দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। শিশুরা গাছপালা তথা সবুজ দেখতে পায় না বললেই চলে, তার উপর এত অধিক হারে সব কিছু বাণিজ্যিকীকরণের আওতায় নিয়ে গেলে সেটা শিশুদের সুস্থ, স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করবে।

এ বিষয়ে নগর বিশেষজ্ঞ ও পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সবুজ উদ্যান বাণিজ্যিকীকরণ খুবই দুঃখজনক। বোটানিক্যাল গার্ডেনে যেখানে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকা উচিত সেখানে প্রবেশ ফি ৫ গুণ বাড়ানো হয়েছে। তার মতে, এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরাও এখন এই উদ্যানে সাবলীলভাবে যেতে পারবে না। অচিরেই এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানের একমাত্র স্বস্তির জায়গা শহীদ মতিউর পার্ক। এটি ইজারা দিয়ে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সংরক্ষিত করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পার্কটির চারদিকে দেয়াল দিয়ে ভিতরে বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি রাইড ও খাবারের দোকান। পার্কটিতে প্রবেশমূল্য নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। এর বাইরে ডিএসসিসি আরও ১০টি খেলার মাঠ ও পার্ক ইজারা দিয়েছে। এর মধ্যে রসুলবাগ শিশুপার্কে কফি হাউস, বাসাবো খেলার মাঠে কফি হাউস ও ফুডকোর্ট, মতিঝিল পার্ক, মালিটোলা পার্ক, সিক্কাটুলি পার্ক, সিরাজউদ্দৌলা পার্ক, বংশাল পার্ক, আজিমপুর নগর পাঠাগারে রেস্টুরেন্ট ও কফি শপ, আবদুল আলীম মাঠে কফি হাউস ও ব্যয়ামাগার, যাত্রাবাড়ী শেখ রাসেল পার্কে ক্যাফেটেরিয়া বসানো হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ১০০ টাকা প্রবেশ ফি গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এতে উদ্যানে দর্শনার্থীর সংখ্যা লক্ষ্যণীয় হারে কমেছে। হঠাত্ টিকিটের দাম পাঁচগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই উদ্যানে প্রবেশ করতে এসে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে প্রবেশ না করে ফিরে গেছে। ইজারাদারের লোকেরাই স্বীকার করেছেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় ২০ শতাংশ দর্শনার্থীও উদ্যানে গতকাল প্রবেশ করেননি।

কুয়াকাটা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, এখানে পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য আসা। টিকিটের দাম এভাবে বাড়ানো মানে দিনদুপুরে মানুষের পকেট কাটা। এখানে গাছ দেখার জন্য ১০০ টাকা দিতে হচ্ছে! এটা অত্যন্ত অবিবেচনাসুলভ সিদ্ধান্ত।

এ ব্যাপারে ইজারাদার মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হঠাৎ করে প্রবেশ ফি বেড়ে যাওয়ায় সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ নেই বললেই চলে। মানুষের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার কারণে দর্শনার্থীরা আসছেন না বলে তিনি মনে করেন।

বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ ফি পাঁচ গুণ বাড়ানোর প্রতিবাদে বাপা’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির যৌথভাবে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রবেশ ফি এক লাফে পাঁচ গুণ (২০ থেকে ১০০ টাকা) বাড়ানোয় বাপা উদ্বিগ্ন। এমনিতেই ঢাকায় সাধারণ মানুষের যাওয়ার জায়গা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তার উপর এত অধিক হারে ফি বাড়ানো শিশুদের বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করবে। আমরা এই ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক মনে করছি।’ ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দ্রুত পরিবর্তনসহ ঢাকাসহ সারাদেশের উদ্যান ও খেলার মাঠগুলোকে সাধারণের জন্য উম্মুক্ত রাখার দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘প্রবেশ ফি ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ১০০ টাকা করা ঠিক হয়নি। এটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এখানে রাজস্ব আদায়ের একটি বিষয় আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের টার্গেট দিয়ে থাকে। সেজন্য বাড়ানো হয়েছে। তবে আমরা এটা দেখবো।’

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *