প্রতিটি হত্যার বিচার হবে -সেনাপ্রধান


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই অন্তর্বতীকালীন সরকারের অধীন দেশের সব কার্যক্রম চলবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণভবন অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর বিকেল চারটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সেনাপ্রধান বলেন, আমরা মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে যাব। এই অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলব। তার সঙ্গে আলাপআলোচনা করে অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে।
সমস্ত হত্যা ও অন্যায়ের বিচার হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। আমরা সমস্ত দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আশাহত হবেন না। যত দাবি আছে, সেগুলো আমরা পূরণ করব। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আমাদের সহযোগিতা করেন। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।
ভাঙচুর, হত্যা, সংঘর্ষ ও মারামারি থেকে জনগণকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, আপনারা যদি কথামতো চলেন, একসঙ্গে কাজ করি। নিঃসন্দেহে সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব। মারামারি ও সংঘাত করে আর কিছু পাব না। তাই দয়া করে ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা ও সংঘর্ষ থেকে বিরত হন। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে জানিয়ে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, তাদের সঙ্গে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আমরা অন্তর্বরীকালীন সরকার গঠন করে কাজ পরিচালনা করব। ধৈর্য ধরেন, সময় দেন। আমরা সবাই মিলে সব সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হব। সংঘাতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, অর্থসম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তিশৃঙ্খলার পথে ফিরে আসেন।
অন্তর্বতীকালীন সরকারের কত সদস্য হবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, এখনো খুব আর্লি স্টেজ। আমরা মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে যাব। আলাপআলোচনা করে ঠিক করা হবে। আজকেই তার কাছে যাব। দু’এক দিন আমাদের সময় দেওয়া লাগতে পারে।
আলোচনায় কারা উপস্থিত ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াতের আমির, বিএনপির শীর্ষ নেতা, জাতীয় পার্টির নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। সময় কম ছিল। যাদের পেয়েছি, তাদের বলেছি। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক, জোনায়েদ সাকি ছিলেন। অধ্যাপক আসিফ নজরুল ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছেন। এখন ছাত্রদের কাজ শান্ত হওয়া ও আমাদের সাহায্য করা। সেনাবাহিনী শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ চালিয়ে যাবে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, সবার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। পরিস্থিতি শান্ত হলে কারফিউ বা জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। আমি আদেশ দিয়েছি, কোনো গোলাগুলি হবে না। সেনাবাহিনী, পুলিশ কোনো গুলি চালাবে না। আশা করছি, এই বক্তব্যের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সেনাপ্রধান আন্দোলনরত ছাত্রজনতা সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সেনাপ্রধানের সাথে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বৈঠক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস; জাতীয় পার্টির জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ; হেফাজতে ইসলামের মাওলানা মামুনুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, খেলাফত মজলিসের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, হামিদুর রহমান আজাদ এবং প্রমুখ নেতৃবৃন্দ দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাথে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাতপূর্বক ‹অন্তর্বতীকালীন সরকার› গঠনের প্রক্রিয়া ও রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী প্রধান দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, সকল হত্যাকাণ্ড ও অন্যায়ের বিচার করা হবে, আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন। সহিংসতার পথ ছেড়ে তিনি সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান এবং ঘরে ফিরে যাওয়ার আহবান জানান।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়