অনুসন্ধানী সংবাদ

বাউফলের আনিস’র ঘরে আলাদীনের চেরাগে সম্পদের পাহাড়

anis
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর বাউফলের নওমালা ইউনিয়নের বটকাজল গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আঃ খালেক বিশ্বাসের ছেলে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান দুর্নীতির ‘বরপুত্র’ হিসেবে খ্যাত। অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জনে তার জুড়ি মেলা ভার। অভিযুক্ত স্ত্রী, পালক মেয়ে, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। ‘আনিসের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ বেরিয়ে আসছে ‘থলের বিড়াল’। তাঁর দুর্নীতি নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা ডালপালা মেলছে। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার মামলার আসামিদের কোটি টাকার বিনিময়ে জামিন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জজ থাকালীন সময়ে।

IMG 20240903 WA0205

দুদকে লিখিত আবেদন ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হওয়ায় বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ “বিসিএস” এর চাকুরী পেয়ে হাতে যেনো জাদুরকাঠি পেয়ে যায়। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
অনুসন্ধান বলছে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন আনিস।
আনিসুর রহমানের পুরানো ঠিকানা শেল্টার কাজীশাল ১/১, কল্যাণপুর প্রধান সড়ক, এখানে তার ভাই ও বোনের নামে রয়েছে ৫টি সু-সজ্জিত ফ্ল্যাট। তিনি বর্তমানে অর্থাৎ ৪ মাস পূর্বে মিরপুর ডিওএইচএস’র সেনা কল্যাণ মার্কেটের পিছনে রোড নং-৩২, বাসা নং-১১৩৪ এর আনুমানিক ২৪৫০ স্কয়ার ফিটের একটি আধুনিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয় করেন, যেখানে তিনি বর্তমানে বসবাস করছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এটা তারই মুখ থেকে শুনা ইসিবি চত্ত্বরে তার ছোট ভাই সাবেক উইং কমান্ডার খ.ম. মশিউর রহমান লাবলু এই নামে ১০ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। একই ব্যক্তির নামে মানিকদিতে আরো ৪ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। পূর্বাচলে তার আর এক ছোট ভাইর নামে ৫ কাঠার একটি প্লট রয়েছে।

IMG 20240903 WA0206

এছাড়াও পটুয়াখালীর বাউফলের নগরের হাটে তাদের মোট ১০টি বাড়ী রয়েছে। যাহার মধ্যে একটি টিনসেড বাকিগুলো ৩, ৪, ৫ তলা বিশিষ্ট বাড়ি। তার ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে নগর হাট এলাকায় সরকারী খাস জমি ও নওমালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে “রূপকথা” নামক বিলাস আলীশান বাড়ি তৈরি করেন। জে.এল নং-১১৬, দাগ নং-৫১৯৭, মৌজা বটকাজল নগরের হাট এলাকায় ২৫ শতাংশ জায়গা দখল করে বসতঘর ও ফার্মেসী তৈরি করে। যেটা বর্তমানে তার ছোট ভাই আতিকুর রহমান মামুন বিশ্বাস পরিচালনা করছেন। যেটা তাদের বাবার আদি ব্যবসা ছিল। ৫২১৩ নং দাগে ১০ শতাংশ জমি কিনে দুটি ৫ তলা ভবন নির্মাণ করে। ৫২৬৯ নং দাগে জমি ক্রয় করে ৩ তলা বিশিষ্ট দুইটি বাড়ি ও একটি টিনসেড ঘর নির্মাণ করেন। জেএল ১১৮ নং এর ৫ নম্বর দাগে ভাঙা ব্রিজ এলাকায় স্ব-মিলসহ ৭৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার আনুমানিক মূল্য কোটি টাকা। পটুয়াখালী টু কালাইয়া হাইওয়ে প্রধান সড়কের পাশে নগরের হাট এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংকের উভয় পাশে ২৫৮, ২৬৭, ২৭৯ নং দাগে দুটি মার্কেট তৈরি করেন এবং ৩০৩ নং দাগে একটি টিনসেড ঘর তৈরি করেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, নগরের হাট গ্রামীণ ব্যাংকের পিছনে রয়েছে ১৭৫ শতাংশ জমি যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা। পটুয়াখালীর সদর থানার কলাতলা নামক হাউজিংয়েন তার রয়েছে দুটি আধুনিক ৬ তলা বিশিষ্ট বাড়ি যাতে তার ভাই বোনেরা বসবাস করছেন ও নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছেন। এলাকাবাসীর দাবি তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তার ভাইয়েরা এলাকায় রাম রাজত্ব কায়েম করেছে এবং ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে সকল নিয়োগ বাণিজ্য পরিচালনা করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। এর সিংহ ভাগ টাকা সাবেক সাংসদ আসম ফিরোজকে প্রদান করেন। এলাকাবাসী ও নিকট আত্মীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় তার প্রকৃত সম্পদ কয়েকশত গুণ বেশী যা অনেকের জানা নাই। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার বাবা আঃ খালেক বিশ্বাসের মৃত্যুর ২০ বছর পরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহন করেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত ভাতা হিসাবে বিশ হাজার টাকা আনিছুর রহমানের ব্যাংক একাউন্টে জমা হচ্ছে। আনিছুর রহমান ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তার সকল ভাই ও বোনদের নামে কোটি কোটি টাকা, ফ্ল্যাট এবং গাড়ী আলাদা আলাদা ভাবে হস্তান্তর করে রাখেন। ভাতিজা, ভাতিজি, ভাগ্নে, ভাগ্নি প্রত্যেকের নামে আলাদা আলাদা একাউন্ট করে টাকা ও সম্পদ ভাগ করে দিয়েছেন। ভাগ্নি ও ভাতিজাদের বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তার ব্যক্তিগত খরচে পড়াচ্ছেন। এক ভাগ্নেকে টঝঅ-তে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে পাঠিয়েছেন। নিকট আত্মীয়দের নামে যারা বিশ্বস্ত তাদের নামে কোটি কোটি টাকা ও সম্পদ জমা করে রেখেছেন।

IMG 20240903 WA0207
তার ছোট ভাই সাবেক উইং কমান্ডার খ.ম. মশিউর রহমান লাভলু অত্যন্ত নারী লোভী লোক। কথিত আছে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একেএম নুরুল হুদার ছোট বোন আমেরিকান প্রবাসী বিধবা নাজমা বেগমের সাথে অনৈতিক প্রেমের সম্পর্কের জালে ফেলে তুরস্কে বসে বিবাহ করেন। পরবর্তীতে সে যখন স্ত্রীর মর্যাদা চায় এখন তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন ঐ নাজমা বেগম ন্যায় বিচার চেয়ে সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধানের নিকট দরখাস্ত করে। তখন সামরিক আইন অনুযায়ী নিরপেক্ষ তদন্ত হয় এবং মশিউর রহমানের প্রকৃত দোষ প্রকাশ পায় ও দোষী সাব্যস্ত হয়। তখন চাকুরি বাঁচাতে ও পেনশন ফিরে পেতে সাবেক চীপ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ তাদের অত্যন্ত আপনজন হিসাবে এয়ার চীফ এর সাথে কথা বলে ও অনুরোধ করে যাতে সে অন্তত বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে জেল জরিমানা মাফ করে পেনশনটুকু দিয়া দেয়। পরবর্তীতে সেই মশিউর রহমান আ.স.ম ফিরোজের সাথে থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতে থাকে। গত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলীয় প্রর্তীক নৌকা চেয়ে বসে। তখন তাকে নৌকা প্রতীক না দেওয়ায় সে বিদ্রোহ ঘোষনা করে আ.স.ম ফিরোজের বিপক্ষে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে একক ভাবে ইলেকশন করে, সেখানে আনিছুর রহমান সাহেব তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আনুমানিক ১০ কোটি টাকা খরচ করে ১৫,০০০ হাজার ভোট পেয়ে ততৃীয় অবস্থানে থাকে। বর্তমানে সাবেক সংসদ আ.স.ম ফিরোজের সাথে আনিছুর রহমানের পরিবারের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ চলছে।

আনিছুর রহমানের হঠাৎ করে জজ হবার জন্য খায়েস জাগে তখন আ.স.ম ফিরোজ সাহেব কে তদবির করার জন্য তাকে নগদ ২ কোটি টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে আ.স.ম ফিরোজ ঐ টাকা আত্মসাৎ করে এবং টাকা ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
পরবর্তীতে এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক কানা ঘুষা চলে। তার ভাইয়েরা বর্তমানে পিঠ বাচানোর জন্য দল পরিবর্তন করে বিএনপিতে যোগদানের চেষ্টা করছে। তার ছোট ভাইের নামে কথিত আছে আনিছ সাহেবের দুই নাম্বারী আয়ের যাবতীয় কালেকশন তার মাধ্যমেই হয়। গত ইউপি নির্বাচনে তার ছোট ভাই মোঃ কামাল হোসেন বিশ্বাসকে ইউপি চেয়ারম্যান পদে ইলেকশন করার জন্য আনুমানিক ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে ইউপি চেয়ারম্যান বানান বলে স্থানীয়রা জানা।

জানা গেছে, আনিছুর রহমান শত শত কোটি টাকা সিঙ্গাপুর ও অষ্ট্রেলিয়াতে পাচার করেছেন। সেখানে তার সম্পদের পাহাড় রয়েছে। প্রতি বছর তার বাবার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের নামে হাজার হাজার লোক দাওয়াত করে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে স্কুল বন্ধ রেখে অনুষ্ঠান করে নিজেদের জানান দেয়। বিগত এক বছর পূর্বে নওমালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ছাত্র/ছাত্রীদের সমন্বয়ে একটি ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল তাকে সবার মাঝে পরিচিত করা ও তার পরিবার কতটা পাওয়ারফুল তা জানান দেওয়া। সেখানে সে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে বিভিন্ন অফিসের সরকারী কর্মকর্তাদের উপস্থিত করেন। বর্তমানে তাদের প্রচারণা চলছে বিশ্বাস পরিবার বাউফল থানার ১ নম্বর পরিবার।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তার চাকুরী জীবনের শেষ কর্মস্থল ছিল বরগুনা জেলায়। সেখানে একটি নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে সে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বীরেন্দ্র নাথ সম্ভুর হস্তক্ষেপে নিয়োগটি সম্পন্ন করতে পারেনি। অথচ তার নিজ এলাকার লোক ওই নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ফেরত পায়নি। নারায়নগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ থাকাকালীন সেভেন মার্ডারের আসামিদেরকোটি টাকার বিনিময়ে জামিনসহ অনেক আসামিকে খালাস দিয়েছে অর্থের বিনিময়ে । যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল। এ ব্যাপারে আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি, ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *