ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

প্রভাবশালী ৬০ জন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করছে দুদক

f2 2408181646
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা :আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আগস্টের মাঝামাঝিতে ওই সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত তিন সপ্তাহে প্রভাবশালী ৬০ জন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।

এ তালিকায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাবেক সেনাপ্রধানও রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, ব্যাংকঋণ ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, অর্থপাচার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, কমিশন বাণিজ্য, সরকারি ও বেসরকারি জমি-সম্পত্তি দখল, লুটপাটসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানের বিষয়ে সম্প্রতি দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্যে প্রাথমিক সত্যতা থাকায় কমিশন তাদের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে বিশেষ হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। এর মাধ্যমে টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।

এরপর থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জুলাই-আগস্টে নিহতের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতা, ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা গ্রেপ্তার হতে থাকেন। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনও বিগত সরকারের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে গণহারে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে।

গত ১৫ আগস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগ প্রথম অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এরপর এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন একে একে ৬০ জন। দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ এখন বিগত সরকারের ব্যক্তিদের দুর্নীতি ও অনিয়মসংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

দুর্নীতি-অনিয়মসংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, দেশবাসীর কাছ থেকে আসা অভিযোগ এবং দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এসব অনুসন্ধান। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, এখন যেসব অনুসন্ধান শুরু হচ্ছে তার অধিকাংশই গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে নেওয়া। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ^াসযোগ্য অভিযোগ হিসেবে আমলে নিয়ে এসব অনুসন্ধান শুরু হচ্ছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ৩০০ ব্যক্তির তালিকা ধরে অনুসন্ধানে যাচ্ছে দুদক। কমিশনের শতাধিক কর্মকর্তাকে এতে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই ডজন কর্মকর্তাকে এসব অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য গত এক সপ্তাহে ২০ জনকে তলব করলেও তারা দুদকে হাজির হননি। এমনকি সময় চেয়েও আবেদন জানাননি।

অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট দুদকের আরেক কর্মকর্তা জানান, যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তাদের অনেকের সম্পদের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), নিবন্ধন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসব তথ্য পাওয়া গেলে তা যাচাই-বাছাই শেষে সম্পদ জব্দের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। অনুসন্ধান কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া অনুসন্ধানের আওতায় থাকা প্রত্যেককে তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ পাঠানো হবে।

৬০ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু : সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে প্রথম অনুসন্ধান শুরুর তথ্য জানায় দুদক। এরপর এ তালিকায় যুক্ত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাভেদ), সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান, সাবেক রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

তালিকায় রয়েছেন সাবেক বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

তালিকায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু, নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বেনজীর আহমেদ, ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী, অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল, শাহে আলম তালুকদার, ডা. মনসুর আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ, সোলায়মান হক জোয়াদ্দার (ছেলুন), ইকবালুর রহিম, মো. সাইফুজ্জামান শেখর, তানভীর ইমাম, এনামুল হক, মো. আখতারুজ্জামান বাবু, শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তমাল মুনসুর।

অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) টিএম জোবায়ের, বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুনের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক শিল্পমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক।

এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম, মামুনুর রশিদ কিরণ, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, কাজিম উদ্দিন, নুর-ই-আলম চৌধুরী ও জিয়াউর রহমানকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ও পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের বিদেশযাত্রাতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তলবে যারা সাড়া দেননি : এদিকে, গত এক সপ্তাহে ২০ জনকে তলব করলেও তারা দুদকে উপস্থিত হননি। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্?মুদ চৌধুরী, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রাথমিক ও মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।

এ ছাড়া সাবেক এমপিদের মধ্যে দুদকে হাজির হননি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শেখ হেলাল, সরওয়ার জাহান, শেখ আফিল উদ্দীন, এনামুল হক। তাদের মধ্যে কেবল সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এ ছাড়া এনামুল হকের পক্ষে একজন সময়ের আবেদন করলেও তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাখিল না করায় গ্রহণ করেননি দুদকের অনুসন্ধান টিম।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *