ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

ড. ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফর, সুফল পাবে বাংলাদেশ

856ef6f8801ca96745c8cbe6a3917f70
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্কছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাসের মাথায় সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১৫ বছরে দেশ শাসনকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অভূতপূর্ব সমর্থন পেয়েছেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

সরকারের জন্য সফরটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবর্তনের হাওয়ায় ক্ষমতার পালাবদলের সুফল পাবে বাংলাদেশ। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আগের টানাপড়েন অনেকটা কেটেছে। উল্টো ড. ইউনূসকে কেন্দ্র করে এসব শক্তির বাংলাদেশের পাশে থাকার ও সমর্থনের আশ্বাসের জোয়ার দেখা গেছে। ঢাকার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্কার ও অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। তবে সেই সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের দুর্নীতি ও মূল্যস্ফীতিসহ যেসব সমস্যা সামনে আসছে সেগুলোর সমাধানে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত সংস্কারে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র যান গত ২৩ সেপ্টেম্বর। সফর শেষ করে গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের পথে রওনা হন তিনি। সরকারপ্রধান হিসেবে এ সফরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি অধিবেশনের ফাঁকে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে প্রথম বারের মতো বৈঠক করেন ড. ইউনূস। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈঠক ছিল প্রথম কোনও বাংলাদেশি সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বৈঠক। এছাড়া আরও ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ড. ইউনূস। সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন তিনি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান মনে করেন, এই সফরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা, পেয়েছেন আস্থা। তারাও গণতান্ত্রিকভাবে ও টেকসই সংস্কারের জন্য সব ধরনের সাপোর্ট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলছেন, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ড. ইউনূসের এই সফরে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ এবং চলমান সংকটগুলো উত্তরণে তিন শূন্য (দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নেট কার্বন নিঃসরণ) ধারণাসহ নানা ধরনের পরিকল্পনা বিশ্বনেতাদের কাছে উপস্থাপিত হয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সহযোগিতা করার খুবই ইতিবাচক আশ্বাসও দিয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি এবং নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ড. ইউনূস। তার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক, জাতিসংঘের হাইকমিশনারের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ ও ইউএসএইডের প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবিরের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলো এখনকার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ও প্রয়োজনের আলোকে হয়েছে। এর মাধ্যমে অনেক সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, ড. ইউনূসের এই সফর খুবই ইতিবাচক। গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির সঙ্গে তিনি দেখা করতে পেরেছেন। এখন এটার আউটকামের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমেরিকাসহ কারা কী সহযোগিতা দিতে চাচ্ছে সেটা দেখা দরকার। দেশের অর্থনীতি চাপে থাকায় সেটা যত তাড়াতাড়ি নির্ধারিত হবে ততই ভালো।

ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তার সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক কাজের জন্য ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, অর্থনীতির বাইরেও সংস্কারে প্রয়োজন থাকা খাতেও সহযোগিতা পাবে বাংলাদেশ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে ঢাকাকে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটন। বিশ্লেষকদের মতে, প্রক্রিয়াটা জটিল হলেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার চেষ্টা শুরু করেছে সরকার। যেসব দেশে বাংলাদেশের টাকা-পয়সা পাচার হয়েছে, সেই দেশগুলোকে চাপ দিতে হবে, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ ক্ষমতাধর দেশগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।

ড. ইউনূসের বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার ঘোষণা দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তবে তার সঙ্গে ভারতের শীর্ষস্থানীয় কারও বৈঠক হয়নি এই সফরে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এস জয়শঙ্করের একটি বৈঠক হয়। সেখানে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *