খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক স্টোর কিপার কোটিপতি


ইত্তেহাদ নিউজ,খুলনা : খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক স্টোর কিপার নাসির উদ্দীন। বিগত আওয়ামী সরকারের সাবেক দুই এমপির এপিএসের সঙ্গে ছিল সখ্য। এ ছাড়া খুলনার শেখ পরিবারের নাম ভাঙিয়ে সব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেন তিনি। চাকরি-বদলিবাণিজ্য ও পদোন্নতির তদবির করে সামান্য একজন স্টোর কিপার বনে যান কোটিপতি। তিনি এখন একাধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক।
নাসিরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে গত ২৩ অক্টোবর এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির একমাত্র সদস্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী আঞ্চলিক পরিদর্শক তামিরুল হাসান ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানান খুলনা পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার চাচাত ভাই ও খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের এপিএস সাঈদ এবং খুলনা-৩ আসনের সাবেক এমপি এসএম কামাল হোসেনের এপিএস সোহেল বিশ্বাসের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন নাসির। তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো চলাফেরা করতেন তিনি। শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েলের ভাই শেখ সোহেলের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও তিনি প্রচার করে বেড়াতেন।
এভাবে ঝিনাইদহে বাড়ি হলেও সাধারণ একজন কর্মচারী হয়ে খুলনায় একাধিক গাড়ি-বাড়ির মালিক হন এ স্টোর কিপার। নানা অপকর্মের কারণে এক বছরে চার প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয় তাকে। সরকারি চাকুরি করেও অনুমতি ছাড়া নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে তারই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দেন নকল করে। যার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাকে গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সমপদে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই কর্মরত আছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাসির উদ্দিন চাকরিরত অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন সময়ে শেখ পরিবার, সাবেক এমপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তার সখ্য আছে বলে প্রভাব বিস্তার করতেন। তাদের সঙ্গে নিজের ছবি দেখিয়ে ভয় ভীতি দেখাতেন। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে তার পরিচিতি আছে দাবি করে অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বদলি ও পদোন্নতি সংক্রান্ত তদবির করতেন। এভাবে হাতিয়ে নেন অনেক টাকা। এ ছাড়া ইনস্টিটিউটের বর্জ্য নিলামকালে নাসির ওজন পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদনের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু প্রকৃত প্রতিবেদন দাখিল করতেন না। নিলাম ক্রয়কারী ঠিকাদারের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী অনিমেশ পাল বলেন, সাবেক স্টোর কিপার নাসির উদ্দীন প্রতিষ্ঠানে অনুমতি না নিয়ে অন্য পলিটেকনিকের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে তারই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দেন। একই সঙ্গে তিনি পরীক্ষায় নকল করেন। যার ভিডিও ভাইরাল হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালে নাসিরকে গোপালগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সমপদে বদলি করা হয়। এ ছাড়া তার পরীক্ষার প্রকাশিত ফল বাতিল করতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে গত ২৮ জুলাই চিঠি পাঠাই।
অভিযোগের বিষয়ে স্টোর কিপার নাসির উদ্দীন বলেন, আমি একজন সাধারণ কর্মচারী মাত্র। ব্যাংকের ঋণ আর শ্বশুরবাড়ির সহায়তায় খুলনা নগরীর আরামবাগে একটি বিল্ডিং করেছি। অফিসের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা চাইছেন তাই আমাকে এক বছরে চারবার বদলি করেছেন। আমি বেসরকারি কলেজ থেকে খুলনা পলিটেকনিক কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছি। নকল করার প্রশ্নই আসে না। সমাজপতিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে শেখ পরিবার বা এমপিদের নাম ভাঙিয়ে বদলি ও নিয়োগবাণিজের অভিযোগ ঠিক নয়। সাবেক দুই এমপি ও তাদের এপিএসরা আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।