বরিশাল অঞ্চলের সোনালী ব্যাংকে আওয়ামী সমর্থকদের দাপটে ‘কোণঠাসা’ বৈষম্যবিরোধীরা


মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরির্বতন হলেও বহাল তবিয়তে আছেন সোনালী ব্যাংক বরিশালের জিএমসহ আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তারা। শুধু বহালই নয়, তাদের কারো কারো দাপটে অসহায় গত ১৬ বছরের পদ বঞ্চিতরা। বরিশাল অঞ্চলে সোনালী ব্যাংকে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থনকারী হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা। এ নিয়ে বরিশাল বিভাগের আওতাধীন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান,সোনালী ব্যাংকের জিএম গোপাল চন্দ্র গোলদারের বিশেষ সহযোগিতায় জিএম অফিস বরিশাল, প্রিন্সিপাল অফিস ইস্ট ও ওয়েস্ট এ পদায়ন করেছেন। গোপাল চন্দ্রের বিশেষ ঘনিষ্ঠ ডিজিএম বিভাষ চন্দ্র, পঙ্কজ গুহ’র পরামর্শে বরিশাল সিটির সকল শাখায় আওয়ামীলীগের সমর্থন পুষ্ট ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দকে রাখা হয়েছে।এদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং গ্রাহকদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
ইস্ট ও ওয়েস্টের ডিজিএম বিভাষ চন্দ্র, পঙ্কজ গুহ, পরিমল বারই, তিমির রঞ্জন, শুভ সাহা, অসীম, দিপু রানী, শ্রাবণী, সুব্রত, বিজন দাস, অভিজিৎ,উজ্জ্বল, সুমন দাস,সুসমা সহ আরও অনেকে গোপাল চন্দ্র গোলদারের বিশেষ পছন্দের এবং তাদের পদায়নও করেছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা গোপাল চন্দ্র গোলদার।
অভিযোগ রয়েছে আওয়ামীপন্থি এবং শেখ হাসিনায় আস্থাভাজন জিএম অফিসের ডিজিএম শাহ আলম যে কিনা কোনো ক্যাম্পিং এ প্রকাশ্যে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” বলে তার মতো লোক এখনো কর্মকর্তাদেরকে হুমকি দেয়। বঙ্গবন্ধু পরিষদ আর নৌকার এক জয় জয়কার এখন সোনালী ব্যাংকে।
জিয়া পরিষদের এক নেতা বলেন, তাদের কার্যকলাপ দেখলে মনে হয় এখনো আওয়ামী ক্ষমতায় আছে। বিগত দিনে ক্ষমতার দাপট যেভাবে দেখিয়েছে ঠিক এখনো তাই ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশে আরো এক কর্মকর্তা জানান,যারা এতদিন বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপর ভর করে বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে ভালো ভালো শাখায় আর পছন্দের জায়গায় চাকরি করে আসছে, তারাই এখন জার্সি পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ রেখে জিয়া পরিষদে ঠাঁই নিচ্ছে।এদের মধ্যে অন্যতম যারা তারা হলেন, মুন মামুন, আবদুল্লাহ আল মামুন মুরাদ, বর্তমান পিএস আবু তায়েবসহ একাধিক কর্মকর্তা।
এদিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বহিষ্কার হওয়া সাবেক বরিশাল চক বাজার শাখার সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার প্রিন্স পারভেজকে নগরীর সাগরদী ব্রাঞ্চের দ্বায়িত্ব প্রদান করেন জিএম গোপাল চন্দ্র গোলদার। জানা যায়, ২০২০ সালে বরিশাল চক বাজার শাখায় ম্যানেজার থাকাকালীন নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় প্রিন্স পারভেজকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এরপর বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পরপরই জিএম গোপাল চন্দ্র গোলদারকে ম্যানেজ করে প্রথমে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া শাখায় ছয় মাস ম্যানেজার হিসেবে থাকার পর বরিশাল নগরীর সাগরদী ব্রাঞ্চে ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন তিনি।২০২০ সালে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা আবু হানিফের পরামর্শে তৎকালীন ডিজিএম গোলাম সিদ্দিক গন বদলির আদেশ দিয়েছিলেন। কারন হিসেবে জানা গেছে বিপুল পরিমান আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে বদলীর আদেশ স্থগিত হয়। আস্থাভাজনদের সুবিধাজনক স্থানে পদায়ন করতে বরিশাল জোনে গণবদলি করা হয় তখন। প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাদের বদলি করে ওই পদে বরিশাল নগরীর বাইরের বিভিন্ন শাখা কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয় । তখন থেকেই সোনালী ব্যাংকে একটি সিন্ডিকেট বদলির মাধ্যমে তাদের অনুসারী কর্মকর্তাদের নগরীতে পদায়নের ব্যবস্থা করেছেন।
বরিশাল অঞ্চলে সোনালী ব্যাংক পিএলসি বিশ্বস্ততায় সেরা-সেবায় স্মার্ট শ্লোগানের ধারে কাছেও নেই। দলাদলী আর সিন্ডিকেটের কারনে।মুখ থুবড়ে পড়েছে গ্রাহক সেবা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও তার দোসররা এখনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। শত শত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ম্লান করতে এ কর্মকর্তারা উঠে পড়ে লেগেছেন। তেমনই একজন সোনালী ব্যাংকের জিএম গোপাল চন্দ্র গোলদার। বৈষম্যবিরোধী সমর্থক কাউকেই সহ্য হয় না তার। এ ব্যাপারে জিএম গোপাল চন্দ্র গোলদারের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
সংস্কারের ছোয়া লাগেনি বরিশাল অঞ্চলের সোনালী ব্যাংকে:
সোনালী ব্যাংকে ফ্যাসিষ্টদের দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছে সৎ নিরীহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।অভিযোগ রয়েছে তারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে চলছে। বরিশাল সোনালী ব্যাংকের সেই সব আওয়ামী দাপুটে কর্মকর্তারা হলেন, জিএম গোপাল চন্দ্র গোলদার( বরিশাল),ডিজিএম-শাহ আলম,জিএম পিএস-আবু তায়েব, সাজ্জাদ হোসেন (কামারখালি শাখা বরিশাল),পারভেজ হোসেন(সাহেবের হাট শাখা),নজরুল ইসলাম (জয়েন্ট কাষ্টডিয়ান),পঙ্কজ গুহ(পিডি)কপোরেট শাখা। অবিলম্বে আওয়ামী এসব দোসরদের অপসারণ করে সোনালী ব্যাংককে আওয়ামী পন্থীদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেছেন সোনালী ব্যাংকের সাধারন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা । শেখ হাসিনাতেই তাদের আস্থা।অবিলম্বে সোনালী ব্যাংক বরিশাল, জিএ ও প্রিন্সিপাল অফিস থেকে তাদের অপসারণ করার দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বঙ্গবন্ধু পরিষদ থেকে যারা জিয়া পরিষদে এসেছেন তাদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হবে আগামী পর্বে।চোখ রাখুন ইত্তেহাদ নিউজে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।