বাশার আল-আসাদের পতন,সিরিয়ার রাজধানীতে কারফিউ ঘোষণা


ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : সিরিয়ার ‘স্বৈরশাসক’ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং সিরিয়া এখন মুক্ত বলে ঘোষণা করেছে দেশটির বিদ্রোহীরা। এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স সিরিয়ার দুইজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আসাদ অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে গেছেন। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামিক সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা এই অভিযানের নেতৃত্বে আছে তাদের টেলিগ্রাম হ্যান্ডেলে বলেছে, এর মাধ্যমে একটি অন্ধকার যুগের অবসান ঘটেছে, এবং এক নতুন যুগের সূচনা ঘটেছে। দামেস্কের পথে পথে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে উল্লাস করতে দেখা গেছে। বিদ্রোহীরা বলছে, আসাদ সরকারের নিপীড়নের শিকার শত শত মানুষ যারা কারাবন্দি ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন তারা এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারেন।
এদিকে, রাজধানীর সবচেয়ে বড় কারাগার সেদনায়া থেকে হাজার হাজার বন্দিকে মুক্ত করেছে বিদ্রোহীরা। সিরিয়া বিভিন্ন শহর থেকে হেজবুল্লাহ বাহিনী তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করেছে। এই পরিস্থিতিকে একজন বিশ্লেষক ‘৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের চূড়ান্ত মূহুর্ত’ হিসেবে বিবিসির কাছে বর্ণনা করেছেন।
বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করতে শুরু করেছে- এমন ঘোষণা দেয়ার পরপর প্রেসিডেন্টের দেশ ছাড়ার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু শুরুতে সে খবর অস্বীকার করা হয়েছিল।তিনি চলে যাওয়ার পর বিমানবন্দর থেকে সরকারি বাহিনী সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে একটি ব্যক্তিগত বিমান দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড়ে গেছে এবং ‘সম্ভবত এতেই প্রেসিডেন্ট আসাদ ছিলেন’। রাজধানীতে প্রবেশ শুরুর আগে বিদ্রোহীরা দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। দামেস্কে প্রবেশের ঘটনাকে বিদ্রোহী ইসলামপন্থী হায়াত তাহরির আল-শামস বা এইচটিএস এর প্রধান ‘ঐতিহাসিক মূহুর্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। “আমাদের বাহিনী রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করতে শুরু করেছে,” বিদ্রোহীরা তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বিবিসির পার্টনার সিবিএসকে বলেছেন বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্কে একটার পর একটা শহরতলীর পতন হচ্ছে। এদিকে, দামেস্কের প্রাণকেন্দ্র উমায়াদ স্কয়ারে লোকজন উৎসব শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই এলাকাতেই সেখানকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর দপ্তরসহ সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যালয়।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে কারফিউ জারি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম। স্থানীয় সময় বিকাল চারটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলবে কারফিউ। খবর আল-জাজিরার। দেশটির দুই যুগের স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলে নিয়েছে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এর মাধ্যমে দেশটিতে বাথ পার্টির পাঁচ দশকের শাসনকালের অবসান হলো।
আসাদের দেশত্যাগের খবর শুনে রাস্তায় নেমে এসেছেন সাধারণ জনতা। বিজয়োল্লাসে ফেলে পড়েছেন মানুষ। এ অবস্থায় চুরি ও রাহাজানির ঘটনা বৃদ্ধির শঙ্কায় এ কারফিউ জারি করল বিদ্রোহীরা।
এদিকে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলে খবর এসেছে। সিরিয়ার জ্যেষ্ঠ দুজন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, আসাদ একটি উড়োজাহাজে চড়ে গেছেন। তবে তার গন্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে লন্ডনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ছেড়ে গেছে। সেটায় বাশার আল-আসাদ থাকতে পারেন। ওই উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পর বিমানবন্দর থেকে সরকারি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
উদযাপনের ঢল ও উদ্বেগ
কামিশলিসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে জনগণ আসাদের ছবি ছিঁড়ে ফেলছেন এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে আনন্দমুখর মিছিল করছেন। একদিকে উদযাপন চললেও অন্যদিকে রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটের আশঙ্কাও বেড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্ব নেতারা-
জাতিসংঘ:
জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত গিয়ের পেডারসেন বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা। এই প্রক্রিয়াটি সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। এটি একটি নতুন যুগের সূচনা হওয়া উচিত।
চীন:
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বেইজিং সিরিয়ার পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দেশটিতে দ্রুত স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করছে। একই সঙ্গে দেশটি সিরিয়ায় চীনা নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
জার্মানি:
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, আসাদের পতন লক্ষ লক্ষ সিরিয়ানের জন্য একটি বড় স্বস্তি। তবে দেশটি যেন আর কোনো চরমপন্থিদের হাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ইসরাইল:
ইসরাইলের প্রবাসী বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি বলেছেন, সিরিয়ার অধিকাংশ অংশ এখন আল-কায়েদা এবং আইএসআইএস সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করছি এবং গোলান মালভূমিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করছি।
রাশিয়া:
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলোচনার পর বাশার আল-আসাদ প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এই ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় রাশিয়া অংশগ্রহণ করেনি।
তুরস্ক:
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, এই পরিবর্তন রাতারাতি হয়নি। গত ১৩ বছর ধরে সিরিয়া সংকটে ছিল। আমরা এই পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা আনার জন্য কাজ করব।
সংকট মোকাবিলার আহ্বান
যুক্তরাষ্ট্র: হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত: আমিরাতের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, অস্থিতিশীলতা যেন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য সুযোগ না হয়ে ওঠে।
ফিলিপাইন: ফিলিপাইন সরকার সিরিয়ায় থাকা তাদের নাগরিকদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
মূলত দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে চলা যুদ্ধের পর সিরিয়ায় এই পরিবর্তন এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। তবে দেশটির রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করা এবং সন্ত্রাসবাদের প্রভাব ঠেকানো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।