নির্বাচন হতে পারে সাজানো ফাঁদ


আলম রায়হান: বিবিসি বাংলায় ৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত‘সমালোচনা আর চাপের মুখে সরকারের সামনে যে ছয়টি বড় চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে সরকারের সামনে যে ছয়টি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে এক নম্বর নির্বাচনের সঙ্গে ছয় নম্বর, মানে আইনশৃঙ্খলা ইউর সঙ্গে কিউর মতো সম্পৃক্ত। কিন্তু এই আইনশৃঙ্খলা কোন দশায় আছে? একবাক্যে বলা চলে, অনেকটাই তলানিতে!
এ ধারা চলমান রেখে আর যাই হোক, নির্বাচন অনুষ্ঠান অকল্পনীয় বিষয়। যে পরিস্থিতি বিরাজমান তাতে সুন্নতে খাতনা অনুষ্ঠান আয়োজন করতেও সাধারণ মানুষ দশবার ভাবে। ফলে সরলভাবে বলা চলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। এ চেষ্টা করলে তা হতে পারে সাজানো বিপদের ফাঁদে পা দেয়া। পরিস্থিতির উন্নতি না করে নির্বাচনের নামে সাজানো ফাঁদে সরকার পা দেবে?
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরণের কোনো আলামত দৃশ্যমান নয়। এমনকি বিশাল আওয়াজ দিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু করা ডেভিল হান্ট থেকেও খুব একটা ফজিলত পাওয়ার লক্ষণ জাহেরে স্পষ্ট নয়। বাতেনে কী আছে তা বোঝাযাচ্ছে না। তবে এটা বোধাযাচ্ছে, এতে জনপ্রত্যাশা পুরণ করা যাবে না। এদিকে নানান ধরনের কথা এরই মধ্যে চাউর হয়ে গেছে। আর এ অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গ নিয়ে তো খোদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাই প্রকারান্তরে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, বিএনপি আমলে ২০০২ সালে ১৬ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিচালিত ক্লিন হার্ট অপারেশনের নানান সমালোচনা সত্ত্বেও বেশ সাফল্য এসেছিল। কিন্তু এবার ডেভিল হান্টে সাফল্যের আশা ক্ষীণ। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়ে পর্যবেক্ষকরা খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না। আর বাস্তবতাও তাই। এ ছাড়া ইতিহাস বলে, এ ধরনের অপারেশনে সাবোসিটারের মতো সাময়িক প্রশমন দিলেও তা স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়।
স্মরণ করা যেতে পারে, বিএনপির শাসনামলে ক্লিন হার্ট অপারেশন চলেছিল প্রায় তিন মাস। এরপর পরিস্থিতি সামলানোর জন্য পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে র্যাবের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই র্যাবও যে আইনশৃঙ্খলা খুব একটা কাজে এসেছে, তা কিন্তু নয়। আর এ বাহিনী গঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে এ কথা বলাও ছিলো। এরপরও এই এলিট বাহিনীর বেশ অবদান আছে। কিন্তু হাসিনা সরকারের অনৈতিক অতি অপব্যবহার এবং নানান অপকর্মের গ্লানিতে নিমজ্জিত র্যাব যে কোনো সময় প্রাণহীন হওয়ার আশঙ্কায় ছিলো বেশ কয়েক বছর ধরে। আর বিগত ছয় মাস ঝিম মেরে ছিলো অনেকটা কার্তিক মাসের ডাহুকের মতো । কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, র্যাব কোন গ্রীণ সিগনাল পেয়েছে। হয়তো এ কারণেই এলিট এই বাহিনী দৃশ্যত মাঠে মহরা দেয়েছে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে। অইরাতে রাজধানীতে অভিযানে জোরালোভাবে উপস্থিত ছিলেন র্যাবের খোদ ডিজি এ কে এম শহীদুর রহমান। তিনি তাঁর বাহিনীর লক্ষ্য নিয়ে প্রত্যয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। যা অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে। এদিকে রোববার বিদবাগত রাত তিনটার মানে ২৩ ফেব্রুয়ারি সংসবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মনে করা হচ্ছে, উপদেষ্টা আসলে সরকারের হার্ড লাইনের জানান দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী দেয়া আল্টিমেটাম দিয়েছে। যার মেয়াদ শেষ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে। পদত্যাগ প্রসঙ্গে সহনশীল ব্যক্তিত্ব জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পদত্যাগ তো পদত্যাগ, অনেকে আমার জানাজাও পড়ে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো, ৫৩ বছরে কোনো মিডিয়া কখনো তা বলেনি। পরিস্থিতি আগের মতোই রয়েছে, তবে সন্তোষজনক। ছোটখাটো ঘটনা ঘটছে।
মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার, আসলেই কী পরিস্থিতি সন্তোষজনক? এ প্রশ্ন জনতার!
আলম রায়হান,প্রধান সম্পাদক দখিনের সময়
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।