ফিচার

একচোখ হারিয়ে ও শরীরের অসংখ্য ক্ষত নিয়ে জীবন সংকটে আব্দুল্লাহ আল ফারুক

image 187492 1742965935
print news

আসাদুজ্জামান : স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর আনন্দ মিছিল থেকে ফেরার পথে পতিত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্মম নির্যাতনে ডান চোখ হারিয়ে এবং মাথাও কপালসহ শরীরের অসংখ্য জখমের ক্ষত নিয়ে অসহ্য ব্যথা আর যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর গ্রামের আব্দুল্লাহ আল ফারুক।

নিভে গেছে তার ডান চোখের আলো। এক চোখ হারিয়েও শরীরের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য সেলাই নিয়ে বর্তমানে তিনি জীবন সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

আহত ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৪৮) এর স্ত্রীর নাম মাহমুদা আক্তার লিপি (৪২)। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি কন্যা সন্তানের জনক-জননী। তাদের বড় কন্যা ফারিয়া আক্তার (২৩) জার্মানির হামবুর্গ ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ২য় বর্ষে এবং ছোট কন্যা ফাহমিদা আক্তার (২১) খুলনা ম্যানগ্রোভ পলিটেকনিক কলেজের শেষবর্ষে লেখাপড়া করছেন।

আব্দুল্লাহ আল ফারুক সদর উপজেলার আলীপুর সরদার পাড়া গ্রামের ক্যান্সার আক্রান্ত মো. গোলাম সরোয়ার (৮০) এর ছেলে। তার মায়ের নাম সালিমা খাতুন (৬৫)। ছয় ভাইবোনের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল ফারুক সেজো। তার বড় ভাই (১নং) মকফুর রহমান (৫২), মেঝ ভাই (২নং) ফিরোজ হোসেন (৫০) ও সবার ছোট ভাই (৬নং) হেলাল হোসেন (৩৫) তারা সবাই পেশায় মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী। এছাড়া ৪র্থ নাম্বারের রয়েছেন তার বোন খাদিজা সুলতানা (৪২)। তিনি বিবাহিত এবং শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করেন। এবং ৫ম নাম্বারের রয়েছেন তার আরো এক বোন। তার নাম রুবাইয়া সুলতানা (৩৯)। তিনিও বিবাহিত এবং শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।

আব্দুল্লাহ আল ফারুক গত ৫ আগস্ট দুপুরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বিকালে সাতক্ষীরা শহরের আনন্দ মিছিলে যোগ দেন। আনন্দ মিছিল শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে বাঁকাল চেক পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার পথ অবরুদ্ধ করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে ডান চোখ তুলে নিয়ে ফেলে দেয়।

আহত আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দুপুরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বিকালে আমি সাতক্ষীরা শহরের আনন্দ মিছিলে যোগ দিয়েই। আনন্দ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে বাঁকাল চেক পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় আলীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জিয়ার নেতৃত্বে ১১ জন আওয়ামী সন্ত্রাসী আমার গতিরোধ করে আমার মাথা, কপাল, ঘাড়, পিঠ ও ডান চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। কুপিয়ে আমার ডান চোখ তুলে ফেলে। আমি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ি।

তিনি বলেন, পথচারীরা আমার পরিবারের লোকজনের খবর দিলে তারা আমাকে উদ্ধার করে সেই রাতে প্রথমে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ৬ আগস্ট সেখানে থেকে আমাকে ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে টানা এক সপ্তাহ আমি অজ্ঞান অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি ছিলাম। ৮দিন পর আমার জ্ঞান ফিরে। সেখানে আমাকে প্রায় এক মাস চিকিৎসা নিতে হয়।

তিনি আবেগজড়ানো কণ্ঠে বলেন, মহান আল্লাহ পাক আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমার তো বাঁচার কথা না, যেভাবে তারা আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে।

তবে, শরীরে এখনও আমার ব্যথা ও যন্ত্রণা রয়ে গেছে। ঠিকমত চলাচল করতে পারি না। একটি চোখই। খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছি।

তিনি বলেন, আমার শহরের সুলতানপুর বড় বাজারে কাঁচামালের আড়ত ও বাড়িতে একটি দোকান ছিল। কিন্তু আমার চিকিৎসার পেছনে সবই শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। টাকা-পয়সা এখন আর আমার কিছুই নেই। তার ওপর আমার বাবা ফুসফুসে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে পড়ে রয়েছেন। বর্তমানে আমার বাবা ও আমি আমার পরিবারের লোকজন খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

আহত আব্দুল্লাহ আল ফারুকের মা সালিমা খাতুন ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলের অবস্থা এতই খারাপ ছিলো যে আমি আমার ছেলের যন্ত্রণা ও জখমের ক্ষত দেখে সহ্য করতে পারবোনা বলে কেউ আমার ছেলেকে একটুও দেখতেও দেয়নি। সবাই আমাকে শুধু বলেছে, আমার ছেলে ভালো রয়েছে। তবুও আমি মা বলে কথা। আমার মন বলছে, আমার ছেলে ভালো নেই। তাই আমি সারাক্ষণ আমার আল্লাহকে ডেকেছি। তার কাছে ফরিয়া দিয়েছি। আল্লাহ তুমি আমার ছেলেকে ভালো করে দাও। মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত যে, তিনি আমার ছেলেকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

আব্দুল্লাহ আল ফারুকের বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত গোলাম সরোয়ার এ সময় নিজের শরীরের অবস্থার খুবই খারাপ পরও ছেলের জন্য তিনি এক পা দুই পা করে খুবই কষ্ট করে এই প্রতিবেদকের সামনে এসেছেন, ছেলের দিকে তাকিয়ে শুধু চোখের পানি ফেলেছেন, কিন্তু কিছু বলতে পারছিলেন না।

আব্দুল্লাহ আল ফারুকের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার লিপি জানান, আমার স্বামীকে নিয়ে বর্তমানে আমি খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

তাদের লেখাপড়া খরচও এখন ঠিকমত চালাতে পারছি না। টাকা-পয়সা যাকিছু ছিল সবই আমার স্বামীর চিকিৎসার পেছনে খরচ করে এখন আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।

তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর জন্য আজ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ভাবে কোনো সহায়তা বা অনুদান পাইনি। তিনি এ সময় তার স্বামীর পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টার ঘটনায় যারা যারা জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.