ভোলায় চিকিৎসকের ওপর বহিরাগত দালালদের হামলা


ইত্তেহাদ নিউজ,ভোলা : ভোলা সদরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের ওপর হামলা ও মারধরের নেপথ্যে হাসপাতালের দালালদের একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। হাসপাতালে বেশ কয়েকজন দালালের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
এদিকে চিকিৎসক নাইমুল হাসনাতের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনায় শনিবার দিনব্যাপী সমঝোতা বা আপস-মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে চলে এ সমঝোতা বৈঠক। বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক দলের নেতারা এ সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে হামলা ও মারধরের শিকার নাইমুল হাসনাত বলেন, শুক্রবার বিকেলে যে রোগী মারা গেছেন, তাঁর চিকিৎসায় কোনো অবহেলা ছিল না। তিনি বলেন, ‘সেই রোগী মুমূর্ষু অবস্থায় যে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসেছেন, সে খবর জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত কোনো স্টাফ আমাকে জানায়নি। জানালে সেই রোগী রেখে আমি নামাজে যেতাম না। নামাজ আদায় করে যখন হাসপাতালে এসেছি, তখন দেখি রোগী মারা গেছেন।’
চিকিৎসক নাইমুল হাসনাত আরও বলেন, ‘যারা আমার ওপর হামলা চালিয়েছে, তারা রোগীর স্বজন নয়। তারা বহিরাগত। পরে জানতে পেরেছি, হামলাকারীদের মধ্যে একজন শহরের পৌর কাঠালী এলাকার আবদুর রহমান। আরেকজন সোহাগ। তাদের কেউই রোগীর আত্মীয় নয়। তারা সবাই হাসপাতালের দালাল চক্রের সদস্য।’
নিহত মাকসুদুর রহমানের স্বজন শুভ বলেন, রোগীর কোনো আত্মীয়স্বজন চিকিৎসকের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি বলেন, রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকের ওপর হামলা ও তাঁকে মারধরের ঘটনা দুঃখজনক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে জনবল-সংকট রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সে সুযোগ নিচ্ছেন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের মালিকেরা। হাসপাতালের আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক।
হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করে জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল দালালদের মদদ দেওয়ার কারণে হাসপাতালকে দালালমুক্ত কর সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া ওই দালালদের সঙ্গে হাসপাতালের কিছু স্টাফের সখ্য রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভোলায় চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ: চিকিৎসককে মারধর জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শেখ সুফিয়ান রুস্তম জানান, শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনায় যদি চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমঝোতার বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জানাবেন। আর ডাক্তারের ওপর হামলা ও তাঁকে মারধরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। হাসপাতালে দালালদের বিষয়টি এড়িয়ে যান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শেখ সুফিয়ান রুস্তম।
ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাইন পারভেজ জানান, রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের সামনে ডাক্তারের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মাকসুদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে স্বজনেরা তাঁকে হাসাতালে নিয়ে এলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসা কর্মকর্তা নাইমুল হাসনাত রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।
রোগীর এই মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকের অবহেলাকে দায়ী করে বিকেলে নাইমুল হাসনাতের ওপর হামলা ও তাঁকে মারধর করে কিছু অতি উৎসাহী লোক।
খবর পেয়ে ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাইন পারভেজ তাৎক্ষণিক উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ওই চিকিৎসককে রক্ষা করে নিরাপদে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।