ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগের পরও চাকরিতে বহাল বিমানের ফ্লাইট স্টুয়ার্ড


বাংলা ট্রিবিউন : ‘নারী সহকর্মীর সঙ্গে ছলচাতুরির মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন’, ‘গোপনে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিডিও ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি’, ‘চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে একাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক’, ‘অতিরিক্ত মদপান করে ফ্লাইটে মাতাল হয়ে যাত্রীর গায়ে খাবার ফেলে দেওয়া’—এমন একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট স্টুয়ার্ড জিসান আহমেদ ছাকিনের বিরুদ্ধে।একদিকে আদালতে মামলার কার্যক্রম, অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তা বিভাগের তদন্ত চলমান। এত সব অভিযোগ ও তদন্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনও চাকরিতে বহাল রয়েছেন, যা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফ্লাইট স্টুয়ার্ড ছাকিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগই মিথ্যা ও বানোয়াট।’ অবশ্য ছাকিনের বিরুদ্ধে মামলা, বিমানে কর্তব্য পালনের সময় মদ্যপ অবস্থায় অসদাচরণ, নারী সহকর্মীদের উদ্দেশে কুরুচিকর বার্তা ও ভিডিও পাঠানো সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আছে।
উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগে জানা যায়, ছাকিনের সঙ্গে তারই এক নারী সহকর্মীর পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের আড়ালে তিনি ছলচাতুরি করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন এবং গোপনে ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দীর্ঘদিন ব্ল্যাকমেইল করেন। ওই নারী কেবিন ক্রু চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ ছাকিনকে গ্রেফতার করে। পরে আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তার মোবাইল থেকে ভিডিও ও বিভিন্ন নারীর সঙ্গে চ্যাট ও ভিডিও শেয়ারিংয়ের আলামত পাওয়া যায়। বর্তমানে তিনি ওই মামলায় জামিনে আছেন।
ভুক্তভোগী ওই নারী কেবিন ক্রু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছাকিন যে একজন লম্পট প্রকৃতির মানুষ, তা আমি আগে জানতাম না। প্রেমের সম্পর্কের নামে প্রতারণা করে। সে আমার প্রতি একপর্যায়ে শারীরিকভাবে দুর্ব্যবহারও করেছে। মদ ও নারীই যেন তার জীবনের মূল বিষয়। আমি প্রতিকার চেয়ে মামলা করেছি এবং কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’তিনি আরও বলেন, ‘ছাকিন প্রতিনিয়ত আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।’
এটি ছাকিনের বিরুদ্ধে একমাত্র অভিযোগ নয়। আরও অনেক নারীর সঙ্গেও একই ধরনের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের ভাষ্য, বিমান বাংলাদেশে কেবিন ক্রুর চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাকিন বিভিন্ন নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরে চাকরি না দিলে, তারা অভিযোগ করতে চাইলেও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিতে চুপ থাকতে বাধ্য হন।
এছাড়া একটি আলোচিত ঘটনা ঘটে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ঢাকা-লন্ডন রুটে। ফ্লাইট চলাকালীন মদ্যপ অবস্থায় ছাকিন যাত্রীর গায়ে খাবার ফেলে দেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি বারবার হেলে পড়ছেন এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। ঘটনার পরও তাকে বিমান থেকে নামানো হয়নি, বরং ক্যাপ্টেন তাকে নন-অপারেটিভ ক্রু হিসেবে লন্ডনে নিয়ে যান এবং সেখান থেকে ফেরতও আনেন। এ ঘটনায় ক্যাপ্টেন ও এক যাত্রী লিখিত অভিযোগ দেন।জানা যায়, এতসব ঘটনার পরও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ছাকিনের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি, শুধু তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে।উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, ছাকিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং দ্রুতই চার্জশিট দাখিল করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মেজর মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ছাকিনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ করতে আমাদের কিছুটা সময় লাগবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।