ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত ও দিশেহারা,হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান


অনলাইন ডেস্ক : টানা কয়েকদিন ধরে ইরান এবং ইসরায়েলের হামলা ও পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। গত শুক্রবার ভোরে তেহরানসহ ইরানের বেশ কিছু স্থানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়।
পরে তীব্র শক্তি নিয়ে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। এমন অবস্থায় ইরানের আক্রমণে কার্যত বিপর্যস্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে রোববার (১৫ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা দেখা গেছে। বিশেষ করে দেশটির সুপরিচিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ চাপে পড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন একজন বিশ্লেষক।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের গবেষক মুহাম্মদ সেলুম বলেন, “আয়রন ডোম মূলত স্বল্পপাল্লার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর জন্য তৈরি। কিন্তু এখন ইরান থেকে যেসব হামলা হচ্ছে, তা হচ্ছে ক্রুজ মিসাইল, ব্যালিস্টিক মিসাইল ও হাইপারসনিক মিসাইল—যেগুলো আটকানো আয়রন ডোমের সক্ষমতার বাইরে।”
তবে তিনি জানান, ইসরায়েলের কাছে আরও উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। যেমন, ‘অ্যারো ১’ এবং ‘অ্যারো ৩’ যেগুলো প্রায় ১০০ কিলোমিটার উঁচুতে গিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে। ‘ডেভিড স্লিং’ নামের আরেকটি ব্যবস্থা রয়েছে, যা মাঝারি দূরত্বে — ২০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত — আসা হামলাও প্রতিহত করতে সক্ষম।
মুহাম্মদ সেলুম বলেন, “ইসরায়েলের এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত এবং সমন্বিত হলেও তা চরম মাত্রার হামলায় ভেঙে পড়তে পারে। আর গত ৪৮ ঘণ্টায় আমরা তারই উদাহরণ দেখেছি।”
এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে কথা বলেছেন। ম্যাক্রোঁ তাকে “উত্তেজনা এড়াতে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের” আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইরানকে পারমাণবিক আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে ইরান আলোচনার টেবিলে বসবে না। রোববারের নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা বাতিলের ঘোষণা করার পরই ইরান এই কথা জানাল।
হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান
ইসরায়েল ইরানের তেল ও জ্বালানি স্থাপনায় হামলা আরও বাড়লে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে দেশটি।বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে রোববার (১৫ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক সিনা তুসি জানিয়েছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের তেল ও জ্বালানি অবকাঠামোতে আরও বড় ধরনের হামলা চালায়, তাহলে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে এবং এটাই হতে পারে তাদের (তেহরানের) চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া। আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটাই ইরানের সর্বোচ্চ মাত্রার জবাব হতে পারে।
অবশ্য হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরআইএনএন শনিবার জানিয়েছে, সরকার হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
প্রসঙ্গত, এই প্রণালী হলো পারস্য উপসাগরে প্রবেশের একমাত্র সমুদ্রপথ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা (ইআইএ)-এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের মোট তেল চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়।
সিনা তুসি আরও জানান, “আমরা এখনো সেখানে (হরমুজ বন্ধের মতো পদক্ষেপে) পৌঁছাইনি। তবে আজ ইসরায়েল ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে একটি গ্যাসক্ষেত্রে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, ইরানও হাইফায় হামলায় ইসরায়েলের কিছু জ্বালানি স্থাপনায় আঘাত করেছে বলে খবর রয়েছে।
তিনি বলেন, “আজ জ্বালানি স্থাপনাগুলো ঘিরে পাল্টা-পাল্টি হামলা হয়েছে। এই ধারা চলতে থাকলে পুরো পারস্য উপসাগর অঞ্চল থেকে জ্বালানি সরবরাহ হুমকির মুখে পড়তে পারে।”
প্রসঙ্গত, হরমুজ প্রণালী হচ্ছে ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ পানিপথ, যার মাধ্যমে উপসাগরীয় দেশগুলোর অধিকাংশ তেল রপ্তানি হয়। এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তেল রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ইরান এই প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।