ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

নজিরবিহীন তথ্য ফাঁসে জীবনের ঝুঁকিতে ৩৩ হাজার আফগান,ব্রিটিশ সরকারের দীর্ঘস্থায়ী সুপার ইনজাংশন

afgan
print news

অনলাইন ডেস্ক :এক নজিরবিহীন তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী হাজার হাজার আফগান নাগরিকের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছিল। এই তথ্য ফাঁসের পর বিষয়টি আড়াল করতে যুক্তরাজ্য সরকার একটি কঠোর ও দীর্ঘস্থায়ী সুপার ইনজাংশনও ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে আদালতের অনুমতি ছাড়া এমনকি এই আদেশের অস্তিত্ব নিয়েও কাউকে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

দ্য টাইমস জানায়, ঘটনাটির সূত্রপাত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সে সময় এক ব্রিটিশ সৈনিক ভুল করে ব্রিটেনে আশ্রয়ের আবেদনকারীদের যাচাই করতে গিয়ে প্রায় ৩৩ হাজার ব্যক্তিগত তথ্যসহ একটি ডেটাবেস আফগানদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর এই তথ্য তৃতীয় এক ব্যক্তির হাতে পৌঁছায়, যিনি তা ফেসবুকে প্রকাশের হুমকি দেন।

ধারণা করা হচ্ছিল, যদি এই তথ্য তালেবানের হাতে চলে যেত, তাহলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনত। তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের একে একে হত্যা করতে পারত তালেবান। পুরো তালিকাটি কার্যত এক ‘মৃত্যু তালিকায়’ পরিণত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।

এই অবস্থায় ওই তথ্য ফাঁস নিয়ন্ত্রণে আনতে ‘অপারেশন রুবিফিক’ নামে একটি গোপন অভিযান চালু করে ব্রিটিশ সরকার। এই বিপর্যয়ের পরিণতি মোকাবিলায় প্রায় ৭ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল আফগানিস্তান থেকে লোক সরিয়ে নেওয়ার (ইভাকুয়েশন) জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গোপন পরিকল্পনা।

এদিকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ সরকার এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে যে সুপার ইনজাংশন আরোপ করেছিল, তা ২০২৪ সালের মে মাসে তা তুলে নেন বিচারক চ্যাম্বারলেইন। কিন্তু সাধারণ নির্বাচনের আগে কনজারভেটিভ সরকার তা আবার কার্যকর করে এবং লেবার সরকার ক্ষমতায় এসেও তা বহাল রাখে।

স্বাধীন পর্যালোচনায় দেখা গেছে—তালেবান এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করবে—এমন শঙ্কা এখন অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তবে এই সুপার ইনজাংশনের কারণে প্রায় ৯০০ আফগান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, ব্রিটিশ সরকার তাঁদের জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি। এর বদলে সরকার বরং ঘটনাটি গোপন রাখতে সুপার ইনজাংশনের আশ্রয় নিয়েছে।

এই মামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে ব্রিটিশ সরকারের ব্যয় হতে পারে অন্তত ২৫০ মিলিয়ন পাউন্ড।

তালিকায় থাকা অনেকেই ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন বা ‘আফগান রিলোকেশন স্কিম’-এর আওতায় যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তথ্য ফাঁসের ফলে ব্রিটিশ সরকার তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন ছিল। বহু আফগান, যাঁদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছিল, তাঁরা আজও কোনো সতর্কবার্তা পাননি।

দ্য টাইমস জানিয়েছে, র‍্যাচেল রিভসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের অক্টোবরে একটি গোপন পরিকল্পনায় ২৫ হাজার ব্যক্তিকে যুক্তরাজ্যে আনার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পরে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৪২ হাজার ৫০০ করা হয়। ইতিমধ্যে ১৮ হাজার ৫০০ জন যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন এবং ভবিষ্যতে আরও ৫ হাজার ৪০০ জন পৌঁছাবেন। তবে অন্যদের কোনো পরিকল্পনায় রাখা হয়নি।

তথ্য ফাঁসের ঘটনাটি নিয়ে ব্রিটিশ বিচারপতি চ্যাম্বারলেইন মন্তব্য করেছেন, যে সিদ্ধান্তে হাজার হাজার মানুষের জীবন ও বিপুল অর্থ জড়িত, তা জনগণ ও সংসদের জানার বাইরে রাখা সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।

এখনও ধারণা করা হচ্ছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং যুক্তরাজ্যের কিছু ব্যক্তির কাছে ওই তালিকার কপি রয়েছে। অন্তত একটি ক্ষেত্রে সেটি বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিক্রিও হয়েছে।

এই তথ্য ফাঁস এবং পরবর্তী গোপন প্রচেষ্টা ব্রিটিশ সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বাসযোগ্যতা ও নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.