অনলাইন ডেস্ক : গত বছর ১৮ জুলাই বেলা ১১টার দিকে যে মিছিলটিতে মবিন ছিল, সেটি উত্তরা থানার দিকে এগোলে হঠাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া ২০০টির অধিক ছোররা গুলি এসে বিদ্ধ হয় মবিনের মুখমণ্ডলে। এরপর চোখের সামনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কে লুটিয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। এরপর সহায় সম্বলহীন মবিনের পরিবার ঋণ করে তার চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেছে প্রায় ২ লাখ টাকা। পরে টাকার অভাবে তার চিকিৎসা কিছুদিন বন্ধ থাকার পর স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় সরকারিভাবে তার চিকিৎসা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত তার দুই চোখে ৬টি অপারেশন হলেও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি তিনি। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আরও দুইটি অপারেশনের পরে মবিনের দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসতে পারে। অভাব অনটনের পরিবারের সন্তান হয়েও মবিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। দুই চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে মবিনের স্বপ্ন এখন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ।....
মবিবেন বড় ভাই মো. পলাশ বলেন, আমার ছোট ভাই মবিন জুলাই আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়ে দুই চোখ হারিয়েছেন। আন্দোলনে অনেকেই গুম খুন হয়েছে। অনেকেই আবার তার পরিবার খুঁজেও পায়নি, আমাদের ভাগ্য ভালো আমরা ওকে পেয়েছি। এখন আমাদের চাওয়া জুলাই আন্দোলনে যারা আহত ও নিহত হয়েছে তাদের যেন সরকারিভাবে একটা মর্যাদা দেওয়া হয়। আন্দোলনের এক বছর হয়ে গেল কিন্তু আমরা এখনও দেখছি না ওদের জন্য সরকার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে। যারা আহত হয়েছেন তাদের জীবনটা তো আর আগের মতো চলবে না কিন্তু সরকার তাদের জন্য এমন কিছু করুক যাতে তারা একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারে।
মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার এই দুই ছেলে ছিল উপার্জন করার শেষ ভরসা। ছোট ছেলে জুলাই আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়ে দুই চোখ হারিয়েছে। মেঝো ছেলের সামান্য উপার্জনে কোনো রকম সংসার চলছে। বড় ছেলে বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। এখন সরকারিভাবে মবিনের সি এম এস হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু ঢাকা চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া আসার খরচ বহন করতে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। সরকারের কাছে আমার চাওয়া ঢাকায় যাওয়া আসার খরচ এবং আমাদের একটা ঘরের ব্যবস্থা যদি করে দেয় তাহলে আমরা ভালোভাবে থাকতে পারতাম।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারানো মবিন বলেন, ঢাকার উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকায় ১৮ জুলাই সকালে দোকান খোলার পরপরই শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে আমি দোকান বন্ধ করে দেই। দোকান বন্ধ করার উদ্দেশ্য ছিল মিছিলে যাওয়া, কারণ আমার মন মানছিল না। মিছিলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই গোলাগুলি শুরু হয়। গোলাগুলির মধ্যে ছাত্রলীগও হামলা করে। এসময় আমরা থানার কাছাকাছি চলে যাই, তখন হঠাৎ করেই ছররা গুলি এসে আমার মাথায় লাগে। এখনও আমার মাথায় দেড় শতাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে। গুলিতে আমার মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে ছাত্ররা আমাকে কয়েকটি মেডিকেলে ঘুরানোর পর ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। ১০ দিন ঢাকা মেডিকেলে থাকার পর বাড়িতে চলে যাই। আন্দোলনের মাঝামাঝি সময় হওয়ায় ও টাকার সংকটে বাড়িতে চলে গেছিলাম। এরপর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। পরবর্তীতে সরকার পতনের পর ছাত্ররা এসে আমাকে সিএমএইচে নিয়ে চিকিৎসা করায়। সিএমএইচে চিকিৎসার পর আমি বাম চোখে সাদা কালো আলো দেখতে পাই। এখনও চিকিৎসা চলছে, আমি চোখে দেখতে পাই না। তবে আমি চাই যারা চোখে দেখতে পায়, তারা যেন নতুন এক বাংলাদেশ দেখতে পায়। কোনো স্বৈরাচার ও খুনি যেন ক্ষমতায় থাকতে না পারে, এটাই আমি চাই।
মবিনকে সিএমএইচে চিকিৎসা প্রদানের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শরীয়তপুরের সংগঠক ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মাহবুব আলম জয়। তিনি বলেন, মবিনরা চোখ বিলিয়ে দিয়েছে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পদে পদে বাধা। এখনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারেনি সরকার। এখনও সরকারি, বেসরকারি অফিসে যারা ক্ষমতাবান, তারাই সুবিধাভোগী। এক্ষেত্রে আমরাও ব্যর্থ। হাসিনা সরকার পতনের পর মবিনরা চেয়েছিল সিস্টেম পরিবর্তন হবে। মবিন তো ছাত্র না যে সে চাকরির জন্য আন্দোলন করেছে, তার স্বপ্ন ছিল সুন্দর বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, এটাই চাই আমি।।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত