ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

ট্রাম্পের তোপে বিপর্যস্ত ভারত, বন্ধুত্বে ফাটল:রপ্তানি খাতে ধসের শঙ্কা

image 209995 1754139791
print news

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ বা তার বেশি হারে শুল্ক আরোপ এবং অপমানজনক মন্তব্যে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে নয়াদিল্লি। ট্রাম্পের ঘোষণায় অর্ধেক বিশ্বের ওপর শুল্ক বসানো হলেও, আগেভাগেই ভারত পেয়েছিল এই দুঃসংবাদ। কিন্তু প্রস্তুতির জন্য পাওয়া অতিরিক্ত সময় খুব একটা কাজে আসেনি। ভারতের অনেকেই এ সিদ্ধান্তকে কূটনৈতিক ‘আঘাত’ হিসেবে দেখছেন।

অপমান ও কঠোর বার্তা

শুধু শুল্ক আরোপেই থেমে থাকেননি ট্রাম্প। ভারতকে বলেছেন ‘একটি মৃত অর্থনীতি’ এবং দেশটির বিদ্যমান বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘কঠিন ও বিরক্তিকর’। একই সঙ্গে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনায় ‘অতিরিক্ত জরিমানার’ হুমকি দিয়েছেন তিনি।আর ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে দিয়েছেন প্রশংসা ও তেল অনুসন্ধানের প্রতিশ্রুতি।

রপ্তানি খাতে ধসের শঙ্কা

ভারতের সবচেয়ে বড় দুটি রপ্তানি খাত- ইলেকট্রনিক্স (প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার) এবং ওষুধ (১০ বিলিয়ন ডলার) — এই নতুন শুল্কের ফলে বড় ধাক্কার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রথমদিকে ভারতীয় কিছু কোম্পানি দাবি করেছিল, স্মার্টফোন ও ওষুধ এই শুল্কের বাইরে থাকবে। কিন্তু শুক্রবার (১ আগস্ট) গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ জানায়, এসব পণ্যও শুল্কের আওতায় পড়ছে। ফলে টানা দু’দিন ধরে ভারতীয় শেয়ারবাজারে দরপতন চলছে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি হঠাৎ স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে।

‘দ্বিতীয় শুল্ক’ আতঙ্ক

ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ব্রিকস জোটের দেশগুলোর ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসবে। এরপরে জানান, রাশিয়া ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ না করলে রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর ১০০ শতাংশ হারে ‘দ্বিতীয় শুল্ক’ আরোপ করা হবে।

এই ঘোষণায় ভারতের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এমনকি ১০০ শতাংশ জরিমানার কথাও উঠছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ধ্বংস করে দেবে।’

রুশ তেল কেনা কমিয়ে দিচ্ছে ভারত

পণ্য পরিবহন ও বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান কেপলারের বিশ্লেষক সুমিত রিতোলিয়া জানান, ভারতের রিফাইনারিগুলো ইতোমধ্যেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তারা এখন আমদানি উৎসে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা বাড়ছে।

বৈষম্যমূলক মনোভাবের অভিযোগ

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের তুলনায় পাকিস্তানকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া এবং একতরফাভাবে শুল্ক বসানো ‘প্রকৃত মিত্রতার’ আদর্শ লঙ্ঘন করছে। চার দফা আলোচনা শেষেও ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শেষ মুহূর্তের এমন সিদ্ধান্ত এড়াতে চেয়েছিল।

কূটনৈতিক স্তরে প্রতিক্রিয়া

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০১৩ সালে বারাক ওবামা ও মনমোহন সিংয়ের সময় ‘বিস্তৃত বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারত্ব’ গড়ে উঠেছিল। এই অংশীদারত্ব বহু রূপান্তর ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে।’

তারা আরও বলেছে, ‘আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগী এবং বিশ্বাস করি এই সম্পর্ক ভবিষ্যতেও এগিয়ে যাবে।’

সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের আচরণে মোদি-ট্রাম্প সম্পর্কের মধ্যে যে ‘সত্যিকারের বন্ধুত্বের’ কথা বলা হয়েছিল, তাতে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ভারতের আমলাতান্ত্রিক ও ধীরগতি কৌশল আর ট্রাম্পের দ্রুত সমঝোতার পছন্দ — এই দুই মেরুর সংঘাতই মূলত বর্তমান সংকটের উৎস।

ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নেই যেমন তিন বছর সময় লেগেছিল, ঠিক তেমনভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে সময় লাগতে পারে, বিশেষ করে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে।

সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.