অনলাইন ডেস্ক : ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে অবসান হয় অবৈধ আওয়ামী শাসনের অধ্যায়। রক্ত, ত্যাগ ও বিজয়ের মহাকাব্যে রচিত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। যা ইতিহাসে ‘৩৬ জুলাই’ নামে লেখা হয়ে গেছে। অনুপ্রেরণার স্রোত বয়ে আনা দিনটি স্মরণে আয়োজন রাজপথ পেরিয়ে প্রবেশ করেছে এক অভূতপূর্ব প্রযুক্তিনির্ভর স্মৃতিযাত্রায়। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েব আর্কাইভ আর ড্রোন শোর আলোছায়ায় সাজানো মাসব্যাপী কর্মসূচি নতুন প্রাণ দিচ্ছে ইতিহাসের প্রতিটি মুহূর্তকে। জুলাইয়ের প্রতিটি ছবি, ভিডিও ও কণ্ঠ মিলিয়ে গড়ে উঠছে এক অমলিন ডিজিটাল আর্কাইভ, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে, অনলাইনে বহন করবে মানুষের মুক্তির অমর পদচিহ্ন।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান বলেন, ‘এটি মূলত এক ধরনের জনগণ-চালিত ডিজিটাল আর্কাইভ। এভাবে সাধারণ মানুষ ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠছেন।’
আয়োজনের শুরু ১ জুলাই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে জুলাইস্মরণ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে কিউআর কোডের মাধ্যমে ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’। যেখানে রয়েছে প্রতিদিনের কর্মসূচি ও ভিডিও-লিঙ্ক। ৭ জুলাই চালু হয় জুলাই ফরেভার ডটগভ ডট বিডি (julyforever.gov.bd) ইন্টারেক্টিভ ওয়েবসাইট, যেখানে সারা দেশের মানুষ তাদের তোলা ছবি ও ভিডিও আপলোড করতে পারে। শর্ত একটাই-কনটেন্টগুলো জুলাই আন্দোলন ও স্মৃতিকে কেন্দ্র করে হতে হবে। ওয়েবসাইটে সেরা পাঁচটি এন্ট্রি বেছে নিয়ে দেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার।
১০ জুলাই শুরু হয় #OneYearOfJulyUprising ক্যাম্পেইন। একটি টিভিসি রিলিজের মাধ্যমে যারা ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন, তারা যেন সেই পোস্টগুলো পুনরায় শেয়ার করেন আহ্বান জানানো হয় । ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী পেজগুলোতে একযোগে প্রচার শুরু হয়। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে ভেসে ওঠে এই হ্যাশট্যাগ।
জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, ‘ফেসবুকে আমার পুরোনো পোস্টটা শেয়ার করার পর সারা দেশ থেকে বন্ধুরা ইনবক্সে সেই দিনের গল্প জানতে চায়। মনে হচ্ছে, আন্দোলনের দিনগুলো আবার ফিরে এসেছে।’
রিমেম্বারেন্স ভিডিও সিরিজ হলো জুলাইস্মরণ আয়োজনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ। ১ জুলাই থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন একটি করে মিউজিক্যাল ভিডিও রিলিজ হয়। প্রতিটি ভিডিওতে ওই দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি তুলে ধরা হয়, সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি প্রতীকী থিম সং যেমন ১৪ জুলাইয়ের ভিডিওতে ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’, ২০ জুলাইয়ে ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’, আর ৩৬ জুলাইয়ে ‘শোনো মহাজন’। ভিডিওগুলো ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হচ্ছে, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লাখো ভিউ পাচ্ছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় ড্রোন শো। ১৪ জুলাই রাজু চত্বরের আকাশে ড্রোনের মাধ্যমে দেখানো হয় নারীদের নেতৃত্বে আন্দোলনের ঢেউ। ১৮ জুলাই হাতিরঝিলে ড্রোন শোতে ফুটে উঠে ইন্টারনেট শাটডাউনের গল্প। ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) সংসদ ভবনের সামনে ড্রোনে প্রদর্শিত হবে হাজারো শহীদের রক্তে লেখা বিজয়ের মুহূর্ত।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলইডি ওয়াল ইনস্টলেশনে ১৫ জুলাইয়ের ছাত্রলীগের হামলার ভয়ংকর দৃশ্য তুলে ধরা হয়। শিশু একাডেমিতে স্থাপন করা হয় শিশু শহীদদের আইকনিক ভাস্কর্য।
জুলাইস্মরণ আয়োজনে চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারিও বড় ভূমিকা রাখছে। ‘আবরার ফাহাদ’, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট : স্টোরি অব মুশ্তাক আহমেদ’, ‘বিডিআর ম্যাসাকার’, ‘নো ট্রিটমেন্ট নো ডেড বডিজ’-এমন নানা চলচ্চিত্র ৬৪ জেলা ও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতেও সমান্তরাল প্রদর্শনী চলছে, যা লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে ওয়েবসাইটে।
‘নোটস অন জুলাই’ নির্বাচিত কিছু আন্দোলনের ছবি দিয়ে তৈরি পোস্টকার্ড ছাড়া হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে। যে কেউ চাইলে নিজের অভিজ্ঞতা লিখে সেটি রিপোস্টও করতে পারছেন। শহীদ পরিবার, আহত এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি হয় ভিডিও টেস্টিমনি, যা ওয়েবসাইটে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হবে বলেও জানা গেছে।
এই বিশাল ডিজিটাল স্মরণ কার্যক্রমের পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে একদল ডেভেলপার, ভিডিও এডিটর ও সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ। প্রতিদিনের কনটেন্ট আপলোড, ড্রোন শো সমন্বয়, সোশ্যাল মিডিয়া এনালিটিক্স সবই রিয়েল-টাইমে মনিটর হচ্ছে।
আজ ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপনের মাধ্যমে এই মাসব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি হবে। রাজধানীসহ সারা দেশে অনুষ্ঠিত হবে ‘Spotlight on July Heroes’, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বিজয়কে ডিজিটাল স্মারকে রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি। এদিন রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে বিকাল ৫টায় ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। সন্ধ্যায় বিভিন্ন ব্যান্ডের পারফরম্যান্সের পর অনুষ্ঠিত হবে স্পেশাল ড্রোন ড্রামা।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক ইমরান হোসেন বলেন, ৩৬ জুলাই শুধু একটি তারিখ নয় এটি এখন এক ডিজিটাল আন্দোলনের প্রতীক। যা প্রমাণ করেছে, স্মৃতি আর প্রযুক্তি একসাথে হলে ইতিহাস চিরকাল জীবন্ত হয়ে ওঠে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি ও প্রযুক্তিবিদ ফাহিম মাসরুর বলেন, জুলাইস্মরণ অনুষ্ঠানমালা দেখিয়ে দিচ্ছে ইতিহাস সংরক্ষণ এখন কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। প্রযুক্তি, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ার সমন্বয়ে গড়ে উঠতে পারে এমন এক ডিজিটাল আর্কাইভ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুক্তির সংগ্রামের পথ আরও উজ্জ্বল করবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত