নির্বাচিত সংবাদ

পাথর লুটপাটে অস্তিত্ব সংকটে পড়া সাদাপাথর পর্যটন স্পট,দায় এড়াতে পারেন না প্রশাসন,একটি পর্যটন স্পটের অপমৃত্যু

sada
print news

অনলাইন ডেস্ক : পাথর লুটপাটে অস্তিত্ব সংকটে পড়া সাদাপাথর পর্যটন স্পট নিয়ে এখন প্রশ্নের শেষ নেই। কেন সাদাপাথর রক্ষা করা সম্ভব হলো না? এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদেরও। তাকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি নিজেও থমকে যান। পাল্টা প্রশ্ন করেন- ‘এখন কী করা উচিত?’ যেন তিনি জেনেও কিছুই জানেন না। তবে তার শেষ কথা হলো- ‘সাদাপাথর রক্ষায় সিলেটের প্রশাসনের পদক্ষেপ কাজে আসেনি। আমাদের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেগুলো ফ্রুটফুলি হয়নি।’ এখন কী করা উচিত- এ প্রশ্নের জবাব তিনি নিজেই দিয়ে বলেন- ‘আমি সভা ডেকেছি। দেখি কী করা যায়।’ জেলা প্রশাসকের কথায় বোঝা গেল- সাদাপাথর লুটপাট হওয়ার পর তিনি উদ্যোগ নিচ্ছেন। তবে প্রশ্ন হলো এখন আর সভা ডেকে কী লাভ, যা হওয়ার তো তা হয়েই গেছে। শেষ মুহূর্তে পাথরখেকোরা যে কাজটি করেছে সেটি হলো- তারা মাটি খুঁড়ে পাথর নিয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতি। সাদাপাথরের বালু খুঁড়ে ফেলায় নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটি একটি পর্যটন স্পট। বালু খুঁড়ে ফেলায় বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। পরবর্তীতে সেখানে চোরাবালি হতে পারে। আর চোরাবালিতে ডুবে প্রাণ যেতে পারে মানুষেরই।

তিনিও দায় এড়াতে পারেন না প্রশাসন

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপার সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম জানিয়েছেন- সাদাপাথর লুটের দায় ইউএনওসহ স্থানীয় প্রশাসন এড়াতে পারেন না। যেহেতু ইউএনও কার্যক্রম দেখেন জেলা প্রশাসক, সুতরাং তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। প্রশাসনের কর্মকর্তারা লুট বন্ধে শুধু গাফিলতিই করেননি, এই লুটে তাদের যোগসাজশ রয়েছে মনে করা হচ্ছে। আর এটি মনে করার বহু কারণও রয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটন স্পট সাদাপাথরের পাথর লুট করে তো হাওয়ায় উড়িয়ে নেয়া হয়নি। এ পাথর লুট করে হয় নদী পথে, নতুবা সড়ক পথে পাচার করা হয়েছে। অথবা খোলা জায়গায় নিয়ে পাথর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এই পাথরগুলো রক্ষায় প্রশাসন চাইলে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারতো। কিন্তু তারা সেটি করেননি। এদিকে, সিলেটের সাদাপাথর লুট এই মুহূর্তের বার্নিং ইস্যু। পাথর লুটের ফলে দেশের অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি পর্যটন স্পটের অপমৃত্যু হতে যাচ্ছে। আর এই লুটের দৃশ্য দেখে হাহাকার চলছে। পাথর লুটে কোম্পানীগঞ্জের মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি ও প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান পাথর লুটপাটে প্রশাসনের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘যখন পাথর লুটপাট হচ্ছিল তখন আমাদের তরফ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই তখন নানাভাবে আমাদের দিকে চোখ রাঙান। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘পাথর লুটের দায় যেমনি প্রশাসনের আছে তেমনি আছে রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও। লুটপাটের সময় প্রশাসন সম্পূর্ণ নীরব ছিল। কোনো কার্যক্রম চালায়নি। প্রশাসনের তরফ থেকে তখন জানানো হয়; হাজার হাজার মানুষ পাথর লুট করছে তাদের ঠেকানোর মতো পর্যাপ্ত লোকবল ছিল না। কিন্তু কোম্পানীগঞ্জের প্রশাসন সেক্ষেত্রে সিলেট বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতা নিতো পারতো। কিন্তু সেটি না করে তারা নীরবই থাকেন। আর রাজনীতিবিদরাও তখন এগিয়ে আসেননি। নিচ্ছে, নিয়ে যাক- এমন মনোভাব ছিল সবার।

কেন হলো এমন পরিস্থিতি: স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়; সাদাপাথরের দিকে দীর্ঘদিন ধরেই চোখ ছিল স্থানীয় পাথরখেকোদের। প্রশাসনের বিধিনিষেধ থাকায় এতদিন সাদাপাথর লুটে কেউ পদক্ষেপ নেয়নি। যেহেতু সেটি সীমান্ত এলাকা ওখানে বিজিবি’র পক্ষ থেকেও বাধা ছিল। কিন্তু পাথরখেকোরা কৌশলে ওই এলাকার বিজিবি সদস্যদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করে। এমনকি বিজিবি’র ওপর কয়েক বার হামলার ঘটনা ঘটে। বিজিবি সদস্যদের বিতর্কিত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার রটানো হয়। এতে করে ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা বিজিবি’র সদস্যরা নীরব হয়ে পড়েন। স্থানীয় গুচ্ছগ্রাম, ভোলাগঞ্জ এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, প্রথমে রাতের আঁধারে বালু ও পাথর লুট করা হয়। পরে দিনের বেলাও প্রকাশ্যে লুটপাট চালানো হয়। তখন বিজিবি সদস্যরা নীরব ছিলেন। লোকবল সংকটের অজুহাতে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ ওই এলাকায় যায়নি। লুটপাটের শেষ পর্যায়ে সিলেট ও কোম্পানীগঞ্জের প্রশাসনের কর্মকর্তারা যৌথ টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু প্রতি বারই অভিযানের পর পাথরখেকোরা পুনরায় লুটপাট শুরু করে। ফলে প্রশাসনের সাদাপাথর অভিযান ‘আইওয়াশের অভিযানে’ পরিণত হয়েছিল।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ: এদিকে সাদাপাথর এলাকা থেকে পাথর লুট বন্ধ ও উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহাবউদ্দিন আহমদের পদ স্থগিতের প্রতিবাদে বিকালে স্থানীয় ধলাই ব্রিজের উপরে বিকালে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ধলাই ব্রিজ রক্ষা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন আলমের সভাপতিত্বে ও কোম্পানীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার নিজাম উদ্দিনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা এডভোকেট কামাল আহমদ, উপজেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি হাজী আবুল বাশার ও নজির আহমদ, নজির আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আলী আহমদ, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এলাইছ আহমদ, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক উসমান খান, সদস্য জুয়েল আহমদ ও ব্যবসায়ী লিটন আহমদ প্রমুখ। সমাবেশে তারা বলেন, বালু পাথর লুটে সাদাপাথর পাথরশূন্য হওয়া ছাড়াও ধলাই ব্রিজ হুমকির মুখে পড়েছে। আর এর প্রতিবাদী হওয়ার কারণে পদচ্যুত করা হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি’র সভাপতিকে। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে এটি করা হয়েছে বলে জানান তারা।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.