রাজনীতি

গোলাম মাওলা রনির মুখোশ খুললেন দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা

Untitled 1 68a755070a442
print news

অনলাইন ডেস্ক : বেশ কয়েক দিন ধরেই পটুয়াখালী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনির দ্বিতীয় বিয়ে আলোচনা চলছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কবে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করলেন, পাত্রী কে, কেনই বা তিনি ফের বিয়ে করলেন-এসব নিয়ে কানাঘুষা চলছিল নানা মহলে। তবে সবকিছু স্পষ্ট হয়  বুধবার।

এদিন রাতে ‘সম্পত্তির লোভে দুই সন্তানের মাকে ভাগিয়ে বিয়ে করে রনি’ শিরোনামে নিজের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। সেখানে দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা আফরোজের সঙ্গে রনির কথপোকথনের একটি অডিও রেকর্ডও ফাঁস করেন তিনি।

এছাড়া ফারজানাকে কিভাবে রনি বিয়ে করেছিল, কেন বিয়ে করেছিল, কেন তাকে ডিভোর্স দিয়েছে-এসব বিষয় তুলে ধরেছেন ইলিয়াস।আবার রনির প্রতারণা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ভিকটিম নিজেও।

স্বামী থাকার পরও রনি কেন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল- ইলিয়াসের এমন প্রশ্নের জবাবে ফারজানা বলেন, রনি আমাকে কখনো প্রেম করার জন্য অফার করে নাই। সে জানতো আমার স্বামী আছে। তবে সে আমাকে বিয়ের কথা বলত। আমি বললতাম- আমার তো স্বামী আছে, আমি তো ভালো আছি, আমি তো আপনাকে বড় ভাই হিসেবে জানি। আপনি যদি বিয়ে করতে চান, অন্য কাউকে করেন।এ কথা শুনে তখন সে কোনো কথা বলত না। অনেক দিন পর আবার সে বলত- ‘আমি ফ্যামিলিতে অনেক অশান্তিতে আছি। আমি আসলে ইসলামের বাইরে যেতে চাই না, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই’।

‘এরপর হোটেল রেডিসনে আমরা বিয়ে করি।এর মধ্যে রনির বড় ছেলের বিয়ে হয়।বিয়ের পর আমি বললাম- আমি কি আসব? সে বলল- ঠিক আছে আসো। আমি বললাম- আমি আসলে সবার সঙ্গে কী বলে পরিচয় করিয়ে দিবা? সে বলে- এই মুহূর্তে এটা সম্ভব না। তখন আমি বললাম- ঠিক আছে আমি তা হলে না আসি। কারণ আমি ওখানে যাব, সবার সঙ্গে দেখা হবে। ওখানে গিয়ে তো আর অভিনয় করা সম্ভব না। এরপর সে বলল- ঠিক আছে তুমি যেটা বেটার মনে করো সেটা করো’।

গোলাম মাওলা রনির ‘অরুণাপল্লী’ নামে একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সে বিষয়ে ফারজানা বলেন, রনি বলেছে- ওই বাড়িটি তার (ফারজানা) জন্য বানিয়েছেন। বাড়িটি বানানোর পর প্রথমবার তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সেখানে গিয়েছিল সে। যাওয়ার পর রাগারাগি করে তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা রনিকে একা রেখে চলে আসে।

দেড় মাস আগে রনির সঙ্গে দেখা করতে তার অফিসে গিয়েছিলেন ফারজানা আফরোজ।তার মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল, সে বিষয়েই রনির সঙ্গে কথা বলতে সেখানে গিয়েছিলেন। সেই দিন কী ঘটেছিল তার বর্ণনায় ফারজানা বলেন, ওই দিন আমাকে রনি তার অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলে, না হলে পুলিশ ডাকবে বলে জানায়। আমি বলি- তুমি পুলিশকে কল দাও, আমিও মিডিয়াকে ডাকব।আমি তোমার ওয়াইফ, আমি তোমার অফিসে আসতে পারব না, তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারব না- এটা কোন ধরনের নিয়ম। এরপর সে সত্যি সত্যি পুলিশকে কল দিল।

তিনি বলেন, শাহবাগ থানা থেকে পুলিশ আসার পর রনি তাদের বলল- ‘এই মহিলা (ফারজানা আফরোজ) আমার কাছে টাকা চাইতে এসেছে’। তখন পুলিশ আমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি নিজেকে রনির ওয়াইফ বলি। আমার কাছে কাবিন আছে কিনা-জানতে চায় পুলিশ। আমি বলি-কাবিননামা আছে।এরপর রনি পুলিশকে বলে- ‘এই মহিলা আমাকে হিপনোটাইজ করে চিটাগং নিয়ে একটা কাগজে টোকা দিলে আমি বেহুঁশ হয়ে যাই।হুঁশ ফিরলে দেখি অসংলগ্ন অবস্থায় হাসপাতালের বেডে পড়ে আছি।আর এই মহিলা বলছে- তার সঙ্গে নাকি আমার বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ে হওয়ার পর দেখি কাবিনে আমার স্বাক্ষর’। তখন আমি বললাম- গোলাম মাওলা রনি তুমি সাত বছরের বাচ্চা। আমি তোমাকে হিপনোটাইজ করে চিটাগং নিয়ে গেছি। তুমি এভাবে মিথ্যা বলতেছো, তোমার আল্লাহর গজব পড়বে না? তখন সে বলে- আমি যদি মিথ্যা বলি- তাহলে আমার ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। আর তুমি যদি মিথ্যা বলো তোমার ওপর আল্লাহর গজব পড়বে।

‘এরপর আমি পুলিশকে সব ঘটনা খুলে বলি। তাদের বলি- আমি জীবনে অনেক ভালো ছিলাম। সে বারবার আমাকে বুঝিয়ে তার কাছে নিয়ে আসছে। এখন যদি সে আমার সঙ্গে এরকম করে তাহলে আমার মেয়েটাকে কিভাবে বিয়ে দেব। তখন পুলিশ রনিকে খুব করে বোঝালো’।

এ ঘটনায় শাহবাগ থানার ওসিকে ফোন দিয়েছিলেন জানিয়ে ফারজানা বলেন, তখন ওসি বলেছিলেন- ‘এমনিতে ঝামেলায় বাঁচি না, আপনাদেরটা আপনারা সামলান তো। কোনো মিটিং করতে পারব না’।

এরপর ফারজানা রনির ধানমন্ডির বাসায় যান। সেখানে তার শাশুড়ি (রনির মা) তাকে দেখে ভয় পায় বলে জানান ফারজানা। তিনি বলেন, আমার শাশুড়ি রনিকে ফোন করে জানান আমি এখানে এসেছি।এরপর রনি আমাকে ফোন করে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে। আমি যাব না জানালে সে নিউমার্কেট থানা থেকে পুলিশ পাঠায়। পুলিশ এসে আমার শাশুড়িকে জিজ্ঞাসা করে আমি তার ছেলের বউ কিনা। শাশুড়ি বলে আমি তার ছেলের বউ। এরপর থানায় গিয়ে দেখি রনি। পুলিশ জানতে চায়- রনি আমার কী হয়। আমি বলি সে আমার স্বামী হয়। পুলিশ বলে কাবিন আছে। আমি বললাম আছে। পুলিশকে কাবিন দেখানোর পরও আমাকে অনেক জেরা করে। আমি এত অপমানিত বোধ করলাম যে, আমার কান্না চলে এলো।

‘আমি পুলিশকে বললাম- সত্যি বলতে রনি আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। কিন্তু আজ কেন সে উলটে যাচ্ছে আমি বলতে পারি না। তবে আমার শাশুড়ি বলেছেন- রনি কালো জাদুর শিকার। তা না হলে সে টানা দেড় বছর ধরে অসুস্থ থাকে কী করে। এরপর পুলিশ আমার মোবাইল থেকে কাবিনটা নিয়ে বলে আগামীকাল সকালে থানায় মিটিং হবে।রাত ১২টার দিকে পুলিশ গাড়ি দিয়ে আমাকে আমার মামা শ্বশুরের বাসায় দিয়ে আসে।পরদিন মিটিং হওয়ার কথা; কিন্তু রনিকে ফোন দিলে রিসিভ করে না। এরপর রনি সেই কাবিনটা নিয়ে ডিভোর্স লেটার লিখে চিটাগং পাঠিয়ে দিয়েছে’।

ফারজানা আরও বলেন, যেদিন মিটিং হওয়ার কথা ছিল তার দুদিন পর আবার মিটিং ডাকা হয়। আমি থানায় গেলে ওসির সামনে রনি জানায় সে আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে। তার আর কিছু করার নাই।

এদিকে ফারজানার বরাতে ইলিয়াস বলেন, গোলাম মাওলা রনি ২০০৯ সাল থেকে ভিকটিমের পেছনে লাগে। ২০১৮ সালে ফারজানাকে দিয়ে তার স্বামীকে তালাক দেওয়ায়। এরপর ২০২২ সালে ফারজানাকে বিয়ে করে রনি। এরপর ওই নারীর কাছে সম্পত্তি চেয়েছে রনি। কিন্তু সম্পত্তি না দেওয়ায় কিছুদিন আগে তাকে তালাক দিয়েছে রনি।

প্রবাসী এই সাংবাদিক আরও বলেন, ফারজানার কোনো ভাই নাই, মা-বাবা নাই। বাবার সম্পত্তি বোনদের মধ্যে বণ্টন হয়েছে। বোনেরা থাকে আমেরিকায়। ফারজানা দেশে থাকেন এবং বোনদের সম্পত্তি দেখাশোনা করেন। আর এই সম্পত্তি বাগিয়ে নেওয়ার জন্য ফারজানার পেছনে লাগে রনি। বিয়ে করার পর টাকাপয়সা সম্পত্তি না দেওয়ায় এখন তাকে ছেড়ে দিয়েছে।

তবে ফারজানা ও ইলিয়াসের অভিযোগের বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব গোলাম মাওলা রনি।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.