সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার


বাংলাদেশের সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বিভুরঞ্জন সরকার আর নেই। নিখোঁজ হওয়ার এক দিন পর তাঁর মরদেহ মুন্সিগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে মুন্সিগঞ্জের বলাকির চর এলাকায় নদীতে লাশটি ভাসতে দেখা যায়।
তাঁর মরদেহ শনাক্ত করেছেন তাঁর ছেলে ঋত সরকার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদী থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহটি বাবার। আমরা চাচ্ছি আজকেই মরদেহটি নিয়ে যেতে।বিভুরঞ্জন সরকার আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ বলছে, মেঘনা নদীতে মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সালেহ আহমেদ পাঠান জানান, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির লাশ নদী থেকে তোলা হয়। পরে রমনা থানার নিখোঁজ জিডির সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। সন্ধ্যার দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিজের মোবাইল ফোন ও ট্যাব বাসায় রেখে বের হয়েছিলেন বিভুরঞ্জন সরকার। পরিবারের সদস্যরা জানান, সকাল ১০টার দিকে অফিসে যাওয়ার কথা বলে তিনি সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বের হন। কিন্তু অফিসে যাননি। সেদিন রাতে তাঁর ছেলে ঋত সরকার রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েও তাঁর কোনো সন্ধান মেলেনি।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘মেঘনা নদীতে পাওয়া লাশ যে বিভুরঞ্জন সরকারের, তা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করার পর আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার পর কী ঘটেছিল, তা জানার জন্য আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা হচ্ছে।’
সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের শুরু ষাটের দশকে, তখন তিনি স্কুলের ছাত্র। দৈনিক আজাদ পত্রিকায় মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে তাঁর হাতেখড়ি। এরপর প্রায় পাঁচ দশক ধরে দেশের বিভিন্ন শীর্ষ পত্রিকা ও সাপ্তাহিকে কাজ করেছেন তিনি। সাপ্তাহিক যায়যায়দিন, সাপ্তাহিক একতা, দৈনিক রূপালী, দৈনিক সংবাদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্পাদনা করেছেন সাপ্তাহিক চলতিপত্র। নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন মৃদুভাষণে এবং সম্পাদনা করেছেন দৈনিক মাতৃভূমি। দেশের প্রায় সব বড় পত্রিকা ও অনলাইন মাধ্যমে তাঁর লেখা ছাপা হয়েছে নিয়মিত। একাধিক বইও লিখেছেন তিনি।সর্বশেষ ২০২১ সালের ১০ মার্চ তিনি আজকের পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। পরে ২০২২ সালের ১ জুলাই পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক হন।
১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া বিভুরঞ্জন সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন। তাঁর মেয়ে চিকিৎসক এবং ছেলে বুয়েট থেকে পাস করা একজন প্রকৌশলী।ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা বিভুরঞ্জন সরকার ছিলেন এক অনন্য কলমযোদ্ধা। সাংবাদিকতা জগতে তাঁর অবদান দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী
মেক্সিকোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, ‘হতাশা, দুঃখবোধ, অতৃপ্তি আর পরিবর্তিত বাস্তবতার ভার সইতে না পেরে সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার শেষবারের মতো একটি লেখা লিখে মেঘনা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিজের জীবন অবসান করেছেন। তার এই মৃত্যু যেমন বেদনাদায়ক, তেমনি আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।’
শুক্রবার (২২ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রাষ্ট্রদূত–সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী এসব কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত বিভুরঞ্জন সরকারের লেখা ‘খোলা চিঠি’ সংযুক্ত করেন।
মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও বলেন, ‘বিভুরঞ্জন সরকারের লেখালেখির সঙ্গে আমরা কমবেশি পরিচিত। তিনি সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে “স্বপ্ন পূরণের কারিগর” হিসেবেও উপস্থাপন করেছিলেন। তার সর্বশেষ লেখায় স্পষ্ট হয়েছে অপ্রাপ্তির বেদনা ও পারিবারিক অনটনের চিত্র, যার দায় তিনি হাসিনা সরকারের উপর ন্যস্ত করেছেন। অথচ হাসিনা তার স্তাবকশ্রেণির তথাকথিত সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের বিলাসিতা আর বৈভবে ভরিয়ে দিলেও বিভুরঞ্জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘বিভুরঞ্জন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মতভেদ থাকাই স্বাভাবিক, তবে এমন মৃত্যু কেবল অপ্রত্যাশিত নয, অত্যন্ত দুঃখজনকও। আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।