সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ,হাতিয়ে নিয়েছেন খাসজমি


কালবেলা : বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ সম্প্রতি দুই উপজেলার খাসজমি সম্পদশালীদের নামে বন্দোবস্ত ঠেকাতে আদালতে মামলা করে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই নামে-বেনামে ভূমিহীনদের খাসজমি হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, শুধু ভূমিহীনরাই খাসজমি বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্য। অথচ কোটি কোটি টাকার সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ফরহাদ নিজেকে ভূমিহীন দাবি করে বিপুল পরিমাণ খাসজমি বরাদ্দ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি ফরহাদের নামে বরিশাল নগরীতে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার বাড়ি, ঢাকায় ফ্ল্যাট, পেট্রোল পাম্প এবং বিভিন্ন উপজেলায় কৃষিজমি। এত সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজেকে ভূমিহীন ঘোষণা করে তিন একরের বেশি খাসজমি নিজের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। এক ব্যক্তির নামে এক একরের বেশি জমি বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম না থাকায় তিনি নিজের নাম তিনভাবে ব্যবহার করেছেন। এ তিনটি নাম হলো কাজী মেজবাহ উদ্দিন, কাজী ফরহাদ উদ্দিন ও কাজী ফরহাদ হোসেন। তবে তাদের সবার বাবার নাম একই—কাজী আকতারুজ্জামান।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালে পদাধিকার বলে উপজেলা খাসজমি বন্দোবস্ত কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন ফরহাদ। সেই সুযোগে তিনি নিজের এবং আত্মীয়স্বজনের নামে একরে একরে চরের খাসজমি বন্দোবস্ত নেন।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের খাস খতিয়ান বইয়ের তথ্যানুযায়ী, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের লড়াইপুর মৌজার ৫২ নম্বর খতিয়ানে ১০৬৪ নম্বর দাগে কাজী মেজবাহ উদ্দিন নামে এক একর ২২ শতাংশ, একই মৌজায় ৪৮ নম্বর খতিয়ানের ১৬০৯ নম্বর দাগে কাজী ফরাদ উদ্দিনের নামে ১ একর ২৫ শতাংশ এবং কাজী ফরহাদ হোসেনের নামে ৩২ নম্বর খতিয়ানের ১৫৬০ নম্বর দাগে ১ একর ২৪ শতাংশ খাসজমি রয়েছে। তিনটি দাগের জমি বন্দোবস্ত নিতে এক নাম তিনভাবে ব্যবহার করা হলেও তাদের বাবার নাম হিসেবে কাজী আকতারুজ্জামান নামটি ব্যবহার করা হয়েছে।
ভূমি অফিসের খতিয়ান বইয়ে দেখা যায়, শুধু ফরহাদের নামেই নয়, তার প্রয়াত বাবা আকতারুজ্জামানের নামেও রয়েছে এক একরের বেশি খাসজমি। এ ছাড়া শ্রীপুর ইউনিয়নের কাজী পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নামেও একরে একরে খাসজমি বন্দোবস্ত নেওয়া রয়েছে। এরা সবাই মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের পরিবার হিসেবে এবং ভুয়া নাম ব্যবহার করে জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিজের নামে খাসজমি বন্দোবস্ত থাকার বিষয়টি সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ স্বীকার করেছেন। তবে ওই জমি তার বাবা তার নামে বরাদ্দ নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি। ফরহাদ বলেন, ‘ওই জমি আমার বাবা আমার নামে বন্দোবস্ত নিয়েছে। তা-ও আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন নেওয়া হয়েছে।’ সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সম্পদশালী হয়েও তিনি কেন এ বন্দোবস্ত বাতিল করেননি জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম মশিউর রহমান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী শুধু ভূমিহীনরাই খাসজমি বন্দোবস্ত পাবে। যারা সম্পদশালী, ট্যাক্স দেন, তাদের নামে খাস মি বন্দোবস্ত দেওয়ার সুযোগ নেই। সাবেক বা বর্তমান সংসদ সদস্যদের খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ কীভাবে খাসজমি বন্দোবস্ত পেয়েছেন, তা আমাদের জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি হিজলা এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার খাসজমি প্রকৃত ভূমিহীনদের দেওয়া হয়নি বলে আদালতে মামলা করেন মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণসহ আদালতে হাজির হাওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে। আমরা মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের নামে খাসজমি থাকার বিষয়টিও আদালতকে জানাব।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।