বরিশাল শিল্পকলা একাডেমী :দুর্নীতির মাস্টার কালচারাল অফিসার অসিত বরন দাস


মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল:
বিতর্ক আর দুর্নীতি ও অনিয়ম পিছু ছাড়ছেনা শিল্পকলা একাডেমীর বরিশাল জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরন দাস গুপ্তের।যোগদানের পর থেকেই বিতর্ক পিছু লেগে আছে তার।অসিত বরন দাসের দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করছে বরিশালের জেলা প্রশাসন।দুদকেও রয়েছে অভিযোগ। সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক প্রবাহ তৈরী না করে সরকারি অর্থ আত্মসাত করে সহায় সম্পদ বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়েছেন অসিত বরন দাস গুপ্ত।
আরও পড়ুন:
বরিশাল শিল্পকলায় সিলেটের সেই ফ্যাসিবাদের দোসর অসিত বরন দাস
দুর্নীতিতে থেমে নেই বরিশাল কালচারাল অফিসার অসিত বরণ
বরিশাল কালচারাল অফিসার অসিতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগপত্র দাখিল
রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন,নজরুল জন্মবার্ষিকী উদযাপন,মাসিক স্রোতার আসর ও অভিভাক সমাবেশের নামে ভুয়া বিল ভাউচার ও শিল্পীদের সই-স্বাক্ষর জালিয়াতি করার প্রমানাদী ইত্তেহাদ নিজের হাতে চলে এসেছে। ভুয়া বিল ভাউচার নিয়ে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে এক ভয়ংকর দুর্নীতির চিত্র।কম্পিউটারে বানানো বিল ভাউচার দিয়ে, শিল্পীদের স্বাক্ষর জাল করে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাত করেছেন বরিশাল জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরন দাস গুপ্ত।
বরিশাল জেলা শিল্পকলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশগুপ্তের অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি ।তদন্ত চললেও দুর্নীতিতে বেপরোয়া তিনি।চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী যোগদানের পর থেকে একের পর এক অনুষ্ঠান করে শিল্পকলা ফান্ডের জমাকৃত টাকা লুটে ব্যস্ত রয়েছেন। চলতি বছরের ১৫ই মে জেলা শিল্পকলার মিলনায়তনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ” আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – ২০২৫” এর আয়োজন করে অসিত করন দাস৷ যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লুসি কান্ত হাজং।
এই অনুষ্ঠান আয়োজন বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে দেড়লক্ষ টাকা যা বরিশাল শিল্পকলার দুটি ফান্ড থেকে তোলা হয়েছে। জেলা শিল্পকলার ব্যয় বিবরণী, অংশগ্রহণকারী শিল্পী ও পরিচালকদের বক্তব্য গোপন সূত্র ও অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় অনুষ্ঠানের জন্য উত্তোলিত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার সিংহভাগ কাগজে-কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে ব্যয় হয়নি। ব্যয় হিসাব অনুযায়ী ভ্যাট, আয়কর ও উৎস কর বাবদ দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার ২৩৯ টাকা। ফলে প্রকৃত ব্যয় দাঁড়ায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৫ টাকা। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই টাকার বড় অংশ কাগজে অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে। একক শিল্পীদের দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার টাকা, কিন্তু বিল দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। দলীয় সঙ্গীত পরিচালকদের দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা, বিল দেখানো হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। নৃত্য পরিচালককে দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার টাকা, বিল দেখানো হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। আবৃত্তি পরিচালককে দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার টাকা কিন্তু বিল দেখানো হয়েছে ৯ হাজার টাকা। যন্ত্রশিল্পীকে দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার টাকা কিন্তু বিলে দেখানো হয়েছে ১২ হাজার টাকা। উপস্থাপককে দেওয়া হয়েছে ২ হাজার টাকা কিন্তু বিল দেখানো হয়েছে ৩ হাজার টাকা। ফ্যান ভাড়া প্রকৃত ১০০ টাকা হলেও বিল দেখানো হয়েছে ৩৫০ টাকা হারে। জেনারেটরের তেল ব্যবহার না হলেও দেখানো হয়েছে ২ হাজার টাকা। ব্যানারের প্রকৃত খরচ ২,৫০০ টাকা হলেও বিল দেখানো হয়েছে ১২,৬০০ টাকা । ভিডিও ফটোগ্রাফি ২,৫০০ টাকায় সম্পন্ন হলেও বিল দেখানো হয়েছে ৮,০০০ টাকা । সবচেয়ে বড় অঙ্কের অসঙ্গতি দেখা গেছে খাবারের ক্ষেত্রে—শিল্পীদের দেওয়া হয়েছে ১৫ টাকার জেলি-বান অথচ বিল করা হয়েছে ৫০০ জনের জন্য প্রতিটি ৬০ টাকা হারে ৩০ হাজার টাকা। এ সকল ব্যয় দেখিয়ে অসিত বরন দাস প্রায় ৮০ হাজার টাকা রাতারাতি হাতিয়ে নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে বড় একটি অংশের টাকা লুট করা হয়েছে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, যন্ত্র শিল্পী ও পরিচালকদের নামে। এসকল শিল্পীদের নামে ভাউচার বাবদ কর্তন করা হয়েছে তিন হাজার টাকা কিন্তু তারা পেয়েছেন মাত্র আঠারশো টাকা।
কেউ এক হাজার চারশত টাকা। তাদের নামে এমন চুরি হয়েছে এসব জানতে পেরে দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন একাধিক শিল্পীরা। তারা জানান,” বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম যিনি আমৃত্যু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন অথচ তার নাম বিক্রি করে এরকম চুরি করা হয়েছে। যা একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হয়ে শুনতেও লজ্জা লাগছে।
এদিকে চলতি বছরের ৯ মে বরিশাল জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরন দাশ গুপ্তের স্বাক্ষরিত বিলে দেখা গেছে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী শিল্পীদের নামের বিপরীতে ২০ হাজার টাকা সম্মানীর পরিমান দেখানো হয়েছে।উৎসে কর ২ হাজার টাকা কর্তন করে ১৮ হাজার টাকা প্রদান করা হয় মর্মে বিল কাগজে উল্লেখ থাকলে অংশগ্রহনকারী একাধিক শিল্পীরা জানিয়েছেন আমরা ১৮০০ টাকা পেয়েছি।
এ ব্যাপারে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী সুরের ছোঁয়া সংগীত বিদ্যালয়ের সজিব আহমেদ ইত্তেহাদ নিউজকে বলেন, দীর্ঘ বছর পর বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সুরের ছোঁয়া সংগীত একাডেমীর ব্যানারে আমার পরিচালনায় প্রথম অনুষ্ঠান রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে সংগীত পরিবেশন করে ১৮০০ টাকা সম্মানি পাই । রাজস্ব টিকেটের উপর সিগনেচার করে ১৮০০ টাকা করে সব সংগঠন পায়। রেভিনিউ স্ট্যাম্পের সজীব লেখাটা নকল। আহমেদ লেখাটা আমার। অর্থাৎ রেভিনিউ স্ট্যাম্পটি উঠিয়ে অন্য ভাউচারে লাগানো হয়েছে।যে ভাউচারে আমাদের সবার নামে ১৮০০০ টাকার বিল।এই জালিয়াতির সঠিক তদন্ত পূর্বক বিচার চাই।
এ ব্যাপারে শফিক ব্যালে ট্রুপের এস আই শফিক ইত্তেহাদ নিউজকে বলেন,রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে আমি ১৮০০ টাকা পেয়েছি।আমিসহ সবাই ১৮০০ টাকারই বিলে সই স্বাক্ষর করে ১৮০০ টাকা নিয়েছি।শফিক জানান, ১৮ হাজারের বিল ভাউচারে আমিসহ কেউ স্বাক্ষর করেনি।তিনি বিল ভাউচার দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ইহা কি দেখালেন, আসলেই এই ঘটনা এতদিন ঘটেছে তাইলে, সত্যতা যাছাই বাছাই করা হোক।এর সঠিক তদন্ত করা হোক। শিল্পীদের এমনিতেই মূল্যায়ন কম তারমধ্যে এমন ন্যাক্কারজনক কাজ মেনে নেয়া অসম্ভব বলে শফিক মন্তব্য করেন।
২০২৫ সালের ৯ মে কালচারাল অফিসার অসিত বরন দাস গুপ্তের স্বাক্ষরিত একটি বিল নিয়ে অনুসন্ধান করে ইত্তেহাদ নিউজ।নাসির ডিজিটাল স্টুডিও নামে একটি বিল ভাউচার করা হয়।ভাউচারটিতে ভিডিওগ্রাফি বাবদ ৫ হাজার টাকা,ফটোগ্রাফি বাবদ ৫ হাজার টাকা ও ফেকবুক লাইভ বাবদ ৫ হাজার টাকা। মোট ১৫ হাজার টাকা রয়েছে দশ নম্বর ভাউচারে।অথচ বরিশাল নগরীর চৌমাথায় নাসির ডিজিটাল স্টুডিও নামে কোন প্রতিষ্ঠানই নাই। বিল ভাউচারে দেয়া মোবাইল নম্বরে কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। একই ভাবে অন্যান্য বিল ভাউচারের অনুসন্ধানে জানা গেছে ভাউচারগুলো তাদের পুরনকৃত নয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ওয়ারেছ হোসেন বলেন , ইতোমধ্যে একাধিক বিষয়ে তাকে শোকজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন,অসিত বরন দাস গুপ্তের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।এ বিষয়ে কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশগুপ্তের মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেন নি।ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।