এলইজিইডি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাবেদ করিম দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকা উপার্জন করেও থেকে গেছেন ধরা ছোয়ার বাইরে


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তে কর্মরত জাবেদ করিম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৗশলী সড়ক ও সেতু রক্ষনা-বেক্ষন ইউনিট সহ অতিরিক্ত দায়িত্ব পরিকল্পনা ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও এলজিইডির অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ-মোটা দাগের অর্থায়নের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারপার্শনও তিনি। বিগত পতিত আওয়ামী সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারি (এপিএস) জাহিদ হোসেন চৌধুরীর সাথে খুবই আত্মনিবীর আস্থাশীল অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এ সময়ে এলজিইডির সবোচ্চ অর্থায়নের বড় প্রকল্প গুলির প্রকল্প পরিচালক ছিলেন এই জাবেদ করিম। বিগত আওয়ামী সরকারের ১৭ বছরের এককচ্ছত্র আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ ছিল জাবেদ করিমের হাতে। আধিপত্যের ধারা-বাহিকতায় পিরোজপুর জেলার মহারাজ আওয়ামী সরকারের সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য ও তার ভাই মেরাজ মঠবাড়িয়া উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এর সাথেও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন জাবেদ করিম। জাবেদ করিমের প্রভাব প্রতিপত্তির কারনেই পিরোজপুর জেলার এলইজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই শত কোটি টাকা মেরাজ মহরাজ চুরান্ত (ফাইনাল) বিল পর্যন্ত উত্তোলন করে পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে দুদকে মামলাও হয়েছে। সারা বাংলাদেশের মিডিয়াতেও চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট হয়েছে। তবে মেরাজ মহারাজের পরোক্ষ এবং প্রত্যেক্ষ সহযোগিতায় ছিলেন জাবেদ করিম। জাবেদ করিমকে এলজিইডি ভবনে টাকার কুমির বা ডোনার জাবেদ করিম বলে জানেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে আওয়ামী সরকারের ১৭ বছরে জাবেদ করিম প্রায় ১০এর অধিক-সর্বোচ্চ মোটা অংকের অর্থায়নের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলি হচ্ছে RIVER CRIM বহুমুখি দূর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি সেক্টর প্রকল্প, MDSP তার হাতে বানানো প্রকল্পগুলির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (DPP) তে তিনি নিজের ইচ্ছে মতো মূল্য নির্ধারণ করতেন। আওয়ামী প্রভাবে তা খুব সহজেই পরিকল্পনা কমিশন হতে বিশ্বয়করভাবে অনুমোদন বা পাশ করিয়ে আনতেন। বাজার মূল্যের ৭ থেকে ৮ গুন বেশি মূল্যে নির্ধারণ থাকতো তার প্রকল্পের ক্রয় সামগ্রী গুলোতে। উদাহরণ স্বরুপ: সোলার লাইট যার মূল্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা অথচ তার প্রকল্পে ঈজওগ-উচচ তে মূল্য নির্ধারণ প্রায় ৭০ হাজার টাকা যা আওয়ামী সরকারের আমলে বালিশ কান্ডকেও হার মানায়।
আওয়ামী সরকারের আমলে মন্ত্রীর এপিএস, জাহিদ হোসেন চৌধুরীর সহযোগিতায় তার মনোনিত জনকে প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগের তদবির করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতেন। প্রকল্প ভেদে ৫০ লক্ষ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত নিতেন একেক জন প্রকল্প পরিচালক বা পিডি নিয়োগ দিতে। প্রকল্পের অর্থের পরিমাণ বুঝে রেট নির্ধারণ করতেন। জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী বদলী বাণিজ্যতেও একক আধিপাত্য ছিল জাবেদ করিমের।
সূত্রমতে ইতোপূর্বে মুন্সীগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় ঠিকাদারদের নিকট হতে- ২ শতাংশ করে প্রতিটি বিলের অনুকূলে উৎকোচ অবৈধভাবে আদায়। বিভিন্ন নির্মাণ কাজের Test রিপোর্ট করানোর কথা বলে বিভিন অযুহাতে ঘুষ দাবী সহ হেড অফিস হতে ফান্ড নেয়া বাবদ ১ শতাংশ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সে সময়েও ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৪৯ টাকার অডিট আপত্তিও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী আধিপত্যের প্রভাবে অবৈধ পথে দূর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার বাহিরে তার এবং স্ত্রীর নামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায় রাজধানীর আভিজাত্য এলাকা গুলশান-১ এর ১৩০ নম্বর সড়কের ১১/বি এর আশক্স আমারিওয়ে ডেভলপার্স এল.টি ডির পাশে ৩০ কাঠা জমির উপর বিশাল গ্যারেজ, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায়-২০০ কোটি টাকা। বনানীর ২৫/এ সড়কের ৫০ নম্বর বাড়ী- যার বাজার মূল্য ১৫০ কোটি টাকা। প্রগতি স্বরণির শহীদ আঃ আজিজ রোডের ৩০ কাঠার ৪৮ নং প্লট- যার বাজার মূল্য ১০০ কোটি টাকা। সেখানে পেইন টেকিং অটো মোবাইলস নামে গ্যারেজ হিসেবে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। পূর্বাচলের ৩ নং সড়কের ৬৫ নম্বর প্লটটি ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে তার চোট স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন। গাজীপুর চৌরাস্তা- সংলগ্ন ৮ নম্বর রোডের ৭৫ নম্বর বাড়িটিও ১৫ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৪ নং সড়কের ৩৬ নম্বর বাড়ীতে ৩২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন ৬ কোটি টাকা দিয়ে। আফতাব নগরে ২নং সড়কের ৯৮ নম্বর প্লট তার স্ত্রীর নামে কিনেছেন ১২ কোটি টাকা দিয়ে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ডি ব্লকের ৭ নং সড়কের ৬৯ নম্বর প্লটটি ৪০ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন। বর্তমানে ৮মতলা ভবন নির্মাণাধীন। নারায়ণ গঞ্জের ফতুল্লায় ৯নং রোডের ৩৬ নং বাড়ী যা ৭ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন। কেরানীগঞ্জের ৬ নং রোডের ১০ নম্বর বাড়ীতে ৩৫০০ বর্গফুটের প্লটটি কিনেছেন ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে। দক্ষিণ যাত্রাবড়ী ই-ব্লকের ৩নং সড়কের ৩৩ নং প্লট কিনেছেন ৫ কোটি টাকা দিয়ে। ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে ৪নং সড়কের ৮৫নং প্লট তার স্ত্রীর নামে কিনেছেন ২ কোটি টাকা দিয়ে।
তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দুদকসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় লিখিত অভিযোগ হলেও অদৃশ্য শক্তি বলে তিনি তা গায়েব করে ফেলেছেন। ফলে অন্তবর্তী সরকারের বর্ষপূর্তি হলেও স্বৈরাচারের দোসর জাবেদ করিম রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।