ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : শেরে বাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ঢাকার শ্যামলীস্থ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল ও ঢাকার মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার ও ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল (MFSTC) মেরামতের জন্য ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছে এই বরাদ্দের টাকা কাজ সম্পন্ন না করেই ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে সম্পূর্ন বিল পরিশোধ করেছেন জহুরুল ইসলাম। তিনি ঠিকাদারকে বিশেষ সুবিধা দিতেই এই কাজ করেছেন বলে জানা যায়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থ বছরের শেষ দিকে কোন প্রাক্কলন অনুমোদন হওয়ার পর দরপত্র আহবান করে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। তার পরও অর্থ বছর শেষ হওয়ায় কাজ শেষ দেখাতে হয়েছে জুনের মধ্যে। তা না করলে বরাদ্দ অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। এ কারণে বেশির ভাগ নির্বাহী প্রকৌশলীই গোঁজামিল দিয়ে বা কাজ না করেই কাগজে কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল দিয়ে দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মার্চ মাসে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে অর্থ ছাড়করণের জন্য প্রেরিত এক স্মারকে দেখা যায়, জহুরুল ইসলাম ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন ৭৮ লাখ টাকা। এই বরাদ্দে ঢাকার শ্যামলীস্থ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক মহোদয়ের রুমে টাইলস পরিবর্তন, রং করন, থাই এর কাজ, টয়লেট সংস্কার, স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তনসহ আনুষাঙ্গিক মেরামত কাজের জন্য ৬ লাখ টাকা, ঢাকার শ্যামলীস্থ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের ৪র্থ তলায় পশ্চিম দিকের কেবিন জোনের বিভিন্ন রুমের টয়লেটের টাইলস পরিবর্তন, রং করন, থাই জানালা মেরামত স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তনসহ আনুষাঙ্গিক মেরামত কাজের জন্য ১০ লাখ টাকা, ঢাকার শ্যামলীস্ত্র ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের ৪র্থ তলায় দক্ষিণ দিকের ওয়ার্ড জোনের বিভিন্ন রুমের টয়লেটের টাইলস পরিবর্তন, রং করন, থাই জনালা মেরামত স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তনসহ আনুষাঙ্গিক মেরামত কাজের জন্য ১০ লাখ টাকা, ঢাকার শ্যামলীস্থ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের পুরাতন ভবনে অবস্থিত সকল টয়লেটের টাইলস পরিবর্তন, রং করন, থাই এলুমিনিয়াম এর জানালা মেরামত, স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তনসহ আনুষাঙ্গিক মেরামত কাজের জন্য ৮ লাখ টাকা, ঢাকার শ্যামলীস্থ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের মূল ভবনের নিচতলায় কিচেন রুমের সকল জানালা পরিবর্তন, নেট স্থাপন, সিকিউরিটি গ্রীল স্থাপন করন কাজের জন্য ৬ লাখ টাকা, ঢাকার মোহাম্মদপুর ফাটিলিটি সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার ও ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল (MFSTC) এর প্রশাসনিক ভবনের ২য় তলার করিডোর এর আধুনিকায়ন করণ কাজের জন্য ১০ লাখ টাকা, ঢাকার মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার ও ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল (MFSTC) ভবনের চারদিকের আবর্জনা অপসারন ও বৃষ্টির পানি নির্গমনের জন্য নতুন ড্রেন নির্মাণ সহ সংস্কার কাজের জন্য ১০ লাখ টাকা, ঢাকার মোহাম্মদপুর ফাটিলিটি সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার ও ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল (MFSTC)) ভবনের ২য়, ৩য়, ৪র্থ তলার বিভিন্ন কক্ষের ফ্লোর টাইলস স্থাপন, রং করন, কক্ষের সাথে সংযুক্ত টয়লেটের দরজা, টাইলস, বেসিন, কমড প্রভৃতি ফিটিংস পরিবর্তনসহ জরুরী মেরামত কাজের জন্য ১০ লাখ টাকা, ঢাকার মোহাম্মদপুর ফাটিলিটি সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার ও ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল (MFSTC)} ভবনের দক্ষিন পার্শ্বে নীচতলা থেকে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত সিড়ির এবং ৫ম তলার স্টোর রুমের টাইলস পরিবর্তন, রং করন সহ প্রয়োজনীয় মেরামত কাজের জন্য ৮ লাখ টাকা-এর কাজ রয়েছে।
চিঠিতে দেখা যায়, এই বরাদ্দের কাজ শেষ করে বিল পরিশোধ করার জন্য গত ২৬ জুন পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া ছিল। এই সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদন করে বিল পরিশোধ না করলে বরাদ্দকৃত অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। এই বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে সরকারের কোষাগারে ফেরত না যায় সেইজন্যই কাজ সম্পাদন না করে ২৬ জুনের মধ্যে ঠিকাদারকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করে দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম। অসম্পন্ন কজের বিল পরিশোধ করে পরে সেই কাজ সম্পূর্ণ সম্পাদন করার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এতে তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) অনুযায়ী কাজ সম্পাদন না করে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করার ফলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদার উভয়ের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা সাময়িক বরখাস্ত, আর্থিক জরিমানা, এবং সরকারের রাজস্ব ক্ষতিপূরণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এছাড়াও জানা যায়, এই কাজের জন্য তিনি এলটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করেছিলেন। প্রতিটি দরপত্রে একজন অথবা দুইজন তার নিজস্ব পছন্দের ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেন। পিপিআর অনুযায়ী দরপত্র আহবানের পরে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক ঠিকাদারের অংশগ্রহণ না থাকে তাহলে সেই দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহবান করতে হবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ফয়সাল হালিম দরপত্র বাতিল না করে অংশগ্রহণকারী নিজস্ব ঠিকাদারকেই রেস্পন্সিভ করে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে যে ফয়সাল হালিম নিজস্ব একটি শক্তিশালী ঠিকাদারি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এই সিন্ডিকেটের জন্যই অন্য সাধারণ ঠিকাদাররা দরপত্রে অংশগ্রহণ করেনি।
এবিষয়ে শেরে বাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে বিল পরিশোধ বিধি মোতাবেক হয়েছে। কাজের প্রত্যয়নপত্র পাওয়ার পরে এবং মন্ত্রণালয় কাজ পরিদর্শন সন্তুষ্ট হওয়ার পরেই বিল দিয়েছি। জুন মাসের ২৬ তারিখের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আপনি যদি চান তাহলে আমাদের প্রত্যয়নকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে এই ব্যাপারে যোগাযোগ করতে পারেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত